১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ফড়িয়ারা হাওরের কৃষকদের ধান কিনে নিচ্ছে পানির দরে

নেত্রকোনায় ফড়িয়াদের কাছে ধান বিক্রি চলছে : নয়া দিগন্ত -

চলতি বোরো মৌসুমে আগাম পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফসল তলিয়ে বিপর্যস্ত কৃষকেরা তাদের ঘাম ঝরানো সোনালি ফসল এখন পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। অনেক আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে কৃষকদের ঘরে ঘরে আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা ধানের গোলা এখন খাঁ খাঁ করছে। নিজ হাতে ফলানো সোনালি ফসল এক শ্রেণীর সুযোগসন্ধানী ফড়িয়াদের হাত হয়ে চলে যাচ্ছে সুদখোর মহাজন ও মিলারদের কাছে। বিরূপ পরিবেশ, পরিস্থিতির কারণে কষ্টের সেই কাক্সিক্ষত ফসল থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ছেন অগণিত কৃষক-কিষাণী। বোরো মৌসুমের অন্যান্য বছরের এই সময়ে হাওর এলাকায় যে আনন্দ-উৎসব দেখা যেত এখন সেখানে বিরাজ করছে বিষাদের কালোছায়া।

চলতি মাসের শুরুতে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে একাধিক ফসল রক্ষাবাঁধ ধসে ও ভেঙে পড়ায় হাওরের নি¤œাঞ্চলের বিস্তীর্ণ বোরো ফসল তলিয়ে যায়। ফসল রক্ষার্থে যখন শত শত কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে নেমে আসেন তখন ঘুম ভাঙে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। সেই সাথে তৎপর হয়ে ওঠেন প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নির্মিত ভেঙে পড়া ফসল রক্ষাবাঁধের একদিকে রক্ষার চেষ্টা করা হয়তো আরেক দিকে ধসে পড়ার অবস্থা। শুরু হয় কৃষকদের মাঝে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। এমনি অবস্থায় একদিকে বাঁধরক্ষা এবং অপর দিকে তলিয়ে যাওয়া আধাপাকা ধান কাটতে শুরু করেন কৃষকরা।

এক ফসলের ওপর নির্ভরশীল হাওরের কৃষকরা বোরো মৌসুমের শুরুতে সুদের মাধ্যমে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কাক্সিক্ষত ফসল উৎপাদনের পর খোরাকি রেখে অবশিষ্ট ধান বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ ও বিয়ে-শাদিসহ নানাবিদ খরচাদি করে থাকেন। কিন্তু সেই স্বপ্নসাধ এবার ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধান কেটে বিরূপ পরিস্থিতির কারণে নিজ গোলায় তোলার পরিবর্তে সুযোগের অপেক্ষায় হাওরপাড়ে অপেক্ষমাণ ফড়িয়াদের কাছে কষ্টার্জিত ধান পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ইতঃপূর্বে সরকার কর্তৃক ২৭ টাকা প্রতি কেজি হিসেবে প্রতি মণ ধানের মূল্য হয় এক হাজার ৮০ টাকা। আর যেখানে কৃষকরা বিক্রি করছেন মাত্র ছয় শ’ থেকে সাড়ে ছয় শ’ টাকায়। ফড়িয়ারা সস্তায় ধান ক্রয় করে অধিক মুনাফায় সাথে সাথে মহাজন ও মিলারদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। যে কারণে কৃষকদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফসল উৎপাদনের খরচও উঠছে না। লোকসানে ফসল বিক্রি করে অনেকে ঋণ পরিশোধে বাধ্য হবেন স্বর্ণালঙ্কার ও ভিটেমাটি বিক্রি করতে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক নিয়ামত আলী, জব্বার মিয়া, তোরাব আলী বলেন, ‘ঢলের পানির সাথে আমরার স্বপ্ন ভাইসা গেছে। পানিতে ডুবাইয়া যে পরিমাণ ধান আনতে পারছি তাও পানির দামে বেইচ্চা দিতাছি। বউ পোলাপান লইয়া এহন ক্যামনে চলবাম এক আল্লাহ ছাড়া কইতে পারতাম না।’ মেছুয়া বাজারের চাল বিক্রেতা মো: মুসলেম উদ্দিন জানান, বাজারে নতুন চাল ্আসতে শুরু করলেও এখনো কোনো প্রভাব পড়েনি।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোবারক আলী নয়া দিগন্তকে বলেন, নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের বিশেষ করে খালিয়াজুরি ও মদন উপজেলায় যে পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে সে তুলনায় মোহনগঞ্জ হাইজদা বাঁধের কারণে সেখানে ক্ষতির পরিমাণ কম। হাওরের অন্যান্য স্থানে হাইজদা বাঁধের মতো বাঁধ নির্মাণ করা হলে অল্পতেই এভাবে সহজেই ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। তিনি দাবি করেন বাঁধের বাইরে এখন পর্যন্ত ১৩৩ হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কৃষক ও অন্যরা মনে করছেন প্রায় সাত শ’ হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়ে গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement