রোববারই সিদ্ধান্ত পাকিস্তান কোন দিকে যাবে
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০১ এপ্রিল ২০২২, ০১:০১
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ষড়যন্ত্রকারীদের জাতি ক্ষমা করবে না। আগামী রোববারই সিদ্ধান্ত হবে দেশ কোন দিকে যাবে। নিজের ব্যাপারে তিনি বলেন, যে পরিস্থিতিরই সৃষ্টি হোক না কেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। আগামী ৩ এপ্রিল জাতীয় পরিষদে তার বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হবেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী অনাস্থা পদক্ষেপকে তার সরকার পতনের জন্য ‘বিদেশী-সমর্থিত ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এ ষড়যন্ত্রের সাথে হাতমিলিয়ে যারা তার বিরুদ্ধে ভোট দেবেন এমন আইন প্রণেতাদের জাতি ক্ষমা করবে না। আগামী রোববার যারা ‘নিজেদের বিবেক বিক্রি’ করবে আগামী প্রজন্ম তাদের কখনোই ভুলবে না। সে দিনই সিদ্ধান্ত হবে পাকিস্তান কোন দিকে যাবে।
ভাষণে ‘হুমকির চিঠি’ নিয়ে আলোচনা করার সময় ইমরান খান জানান, তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে একটি বিদেশী রাষ্ট্র থেকে যে বার্তা পেয়েছেন তা কেবল তার বিরুদ্ধে নয়, পুরো জাতির বিরুদ্ধে। এ সময় তিনি হঠাৎ বলে ফেলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই চিঠি পাঠিয়েছে, কিন্তু পরক্ষণেই তিনি বলেন, না যুক্তরাষ্ট্র নয়, একটি দেশ পাঠিয়েছে। ওই রাষ্ট্র যারা ‘হুমকি’ পাঠিয়েছিল, তারা জানত যে বিরোধী দল আমার বিরুদ্ধে জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করতে চলেছে।
ইমরান খানের রেকর্ড করা ভাষণ স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় সম্প্রচারের কথা ছিল। পরে সিদ্ধান্ত হয় যে, তিনি সরাসরি ভাষণ দেবেন।
এই ভাষণ দেয়ার কথা ছিল বুধবার। কিন্তু দেশটির সেনাপ্রধান ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই প্রধান প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পর কোনো কারণ উল্লেখ ছাড়াই ভাষণ বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয়।
মঙ্গলবার দু’বার প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ও আইএসআই প্রধান। এরপর ক্ষমতাসীন দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সিনেটর ফয়সাল জাভেদ এক টুইট বার্তায় নিশ্চিত করেন, বুধবারের ভাষণ বাতিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাথে গতকাল বিকেলে বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন ইমরান খান। পাকিস্তানের নিরাপত্তা ইস্যুতে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করে। এতে ইমরান খানের সভাপতিত্বে আরও বেশ কিছু মন্ত্রী অংশ নেন। তা ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে বিদেশী ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়ে একটি চিঠি প্রকাশ করেন। বৈঠকে হুমকিমূলক চিঠির সমালোচনা করা হয় এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে এটির জবাব দেয়া হবে বলে বৈঠকের পর জানানো হয়।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে যে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে জাতীয় পরিষদে কয়েক দিন অধিবেশন মুলতবি রাখার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে আবার শুরু হয়। এ সময় বিরোধী দলগুলো তীব্র হট্টগোল শুরু করে। শুরু হতে না হতেই জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আবার আগামী রোববার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। ডেপুটি স্পিকারের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার অধিবেশন শুরু হয়। ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরিফ ২৮ মার্চ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সে দিনই স্বল্প সময়ের অধিবেশনে প্রস্তাবটি বিতর্কে দেয়ার জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। অধিবেশন ৩১ মার্চ, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার অধিবেশন শুরু হয় ২৪ দফা এজেন্ডা নিয়ে। এর মধ্যে অনাস্থা প্রস্তাব ছিল চার নম্বর এজেন্ডা।
অনাস্থা ভোটের আগে অন্যতম জোটসঙ্গী মোত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) আনুষ্ঠানিকভাবে বিরোধী শিবিরে যোগ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিপদ আরো বেড়েছে। পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনো নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী পূর্ণ মেয়াদ দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। ক্রিকেট থেকে রাজনীতিতে আসা ইমরান খানের ভবিষ্যতও রয়েছে ঝুঁকিতে। ২০১৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর এবারই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তিনি। ইমরানের বিরুদ্ধে আর্থিক অব্যবস্থাপনা ও পররাষ্ট্রনীতির ভুলের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা।
কাগজে কলমে পাকিস্তানের ৩৪২ আসনের পার্লামেন্টে পিটিআই এবং জোটসঙ্গীদের আসন রয়েছে ১৭৬টি। আর বিরোধীদের আসন রয়েছে ১৬৩টি। তবে মঙ্গলবার এমকিউএম জানায়, তাদের সাত আইনপ্রণেতা বিরোধীদের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবেন। পিটিআইর বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতাও জানিয়েছেন তারাও বিরোধীদের পক্ষে ভোট দেবেন। তবে দলীয় নেতারা তাদের ভোট দেয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা