কণ্ঠ শুনেই মেশিন বলে দেবে হৃদরোগ আছে কি না
- হামিম উল কবির
- ২৬ মার্চ ২০২২, ০০:০০
কণ্ঠ শুনেই এবার মেশিন বলে দেবে যে, কারো মধ্যে কোনো ধরনের কার্ডিওভাস্কোলার (হৃৎপিণ্ড, ভেইন, আর্টারি ও ক্যাপিলারির সমন্বয়) রোগ রয়েছে কি না। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা কম্পিউটারে ৮০ ধরনের গলার স্বর (ভয়েস) চিহ্নিত করার জন্য একটি অ্যালগরিদম আবিষ্কার করেছেন। তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তায় মানুষের বলা কথায় হৃদরোগের সম্ভাব্য লক্ষণ শনাক্ত করেছেন যেসব কথা মানুষের কান শনাক্ত করতে পারে না। এআই কম্পিউটারের অ্যালগরিদম মানুষের কথা থেকেই হৃদরোগের ঝুঁকি ধরে ফেলতে পারে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় এমনটিই বলা হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, মানুষ কথা বললে তার গলার স্বরের সামান্য পরিবর্তন হলেই মেশিন তা ধরে ফেরতে পারবে কিন্তু সেসব শব্দ কান শনাক্ত করতে পারে না। ভয়েস শুনে কিভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি সম্বন্ধে বলা সম্ভব এটা অস্পষ্ট থাকলেও গবেষকরা বলছেন, শরীরের স্নায়ুবিক পদ্ধতির সাথে দেহের অবচেতন কার্যক্রম যেমন কণ্ঠ, রক্তচাপ, হার্ট রেটকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে তার সাথে সম্পর্কযুক্ত। গবেষকরা বলছেন, কণ্ঠ শনাক্ত স্কোর যার সবচেয়ে বেশি সে দুই বা আড়াই গুণ বেশি কার্ডিওভাস্কোলার জটিলতায় ভুগছে।
গবেষকরা আশা করছেন, এক দিন এই কৌশলটা অন্যভাবেও ব্যবহৃত হতে পারে হৃদরোগের ঝুঁকি নির্ণয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিকের গবেষকরা মানুষের কণ্ঠস্বরের ৮০টিরও বেশি দিক বিশ্লেষণ করার জন্য একটি অ্যালগরিদম পরীক্ষা করেছেন। করোনারি ধমনী রোগের জন্য এক্সরে করতে আসা তারা ৬০ বছর বয়সী ১০৮ জন রোগীকে স্মার্টফোনে তাদের ৩০ সেকেন্ডের তিনটি কণ্ঠস্বরের নমুনা রেকর্ড করতে বলা হয়েছিল। প্রথম নমুনাটি একটি কম্পোজ করা একটি কাগজ থেকে পড়তে বলা হয়েছিল। অন্য দুটো নমুনার জন্য, একটি ইতিবাচক এবং একটি নেতিবাচক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে স্বাধীনভাবে বলতে বলা হয়েছিল। পরে কম্পিউটার অ্যালগরিদম প্রত্যেককে হুদরোগের উচ্চ ঝুঁকি ও নিম্ন ঝুঁকি যুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে। এই গবেষণাটি সামনের মাসে ওয়াশিংটন ডিসিতে অ্যামেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির ৭১তম বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে। ওই সময়ের মধ্যে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের দুই বছর হয়ে যাবে। গত বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের ডেইলি মেইল গবেষণার সার সংক্ষেপ প্রকাশ করে।
গবেষকরা দেখেছেন যে, উচ্চ স্কোরকারীদের মধ্যে ৫৮.৩ শতাংশ সেই সময়ের মধ্যে বুকে ব্যথা বা হার্টঅ্যাটাকের কারণে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। অপর দিকে কম স্কোরকারীদের মধ্যে হাসপাতালে গিয়েছিলেন মাত্র ৩০.৬ শতাংশ। এর মানে হল যে, উচ্চ স্কোরধারীরা কম স্কোরধারীদের তুলনায় ২.৬ গুণ বেশি হৃদরোগে ভুগছেন। চিকিৎসকরা হার্টঅ্যাটাককে করোনারি ধমনী রোগের প্রধান সমস্যা বলে মনে করেন। উচ্চ স্কোরধারীরা স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তাদের ধমনীতে তিন গুণ বেশি চর্বি জমেছে বলে দেখতে পেয়েছেন। প্রধান প্রধান রক্তনালীতে চর্বি জমে গেলে তখন এটাকে কার্ডিওভাস্কোলার রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রধান প্রধান রক্তনালী থেকে তখন হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। রক্তনালীতে জমে থাকা চর্বিগুলো যখন হঠাৎ করে হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচলে বাধা প্রদান করে তখনই হার্টঅ্যাটাক হয়ে থাকে। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস করোনারি আর্টারির রোগ বা হৃদরোগ বাড়িয়ে দিতে পারে। প্রধান গবেষক মায়ো ক্লিনিকের কার্ডিওলজিস্ট ড. জাসকানওয়াল সারা বলেন, ভয়েসের মাধ্যমে হৃদরোগ শনাক্তের এ কৌশলটির উন্নয়ন হলে রোগীদের ননইনভেসিভ এবং স্বল্পমূল্যে করোনারির রোগগুলো শনাক্ত করে দেয়া যাবে। উল্লেখ্য, হৃদরোগ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক নম্বর কিলার রোগ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা