০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১,
`
সানেমের জরিপ

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে দুর্নীতি উদ্বেগজনক ইস্যু

মাত্র ৯% ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা পেয়েছে
-

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি একটি উদ্বেগজনক ইস্যু বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন্ ইকোনমিক মডেলিং’ (সানেম)। প্রতিষ্ঠানটি নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান গতকাল দেশের ব্যবসাসংক্রান্ত এক জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এ কথা উল্লেখ করেছেন। জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, ৯ শতাংশের মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা ঋণ পেয়েছে। আর প্রণোদনা যারা পেয়েছে, তাদের ব্যবসায়িক পুনরুদ্ধারের হার প্রণোদনা যারা পায়নি, তাদের চেয়ে বেশি। সানেমের জরিপ অনুসারে, প্রণোদনা পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক পুনরুদ্ধারের হার ৭১ শতাংশ, আর প্রণোদনা না পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনরুদ্ধারের হার ৫৮ শতাংশ।
৮৯ প্রতিষ্ঠান মনে করে ওমিক্রমের কারণে তাদের রফতানি কমে যাবার ঝুঁকিতে রয়েছে। চলতি বছরের তিন মাস (জানুয়ারি-মার্চ) তাদের ব্যবসা কমে যাবে।
গতকাল সোমবার সানেমের পক্ষ থেকে ‘করোনার নতুন ধাক্কা : ব্যবসায় আস্থা কোন পথে’ শীর্ষক সপ্তম পর্যায়ের এক জরিপের ফলাফলে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। ওয়েবিনারে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।
জরিপে বলা হয়েছে, চলমান কোভিড পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সার্বিকভাবে দেশের ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ওমিক্রন সংক্রমণের ফলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ডে নানা নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও সার্বিকভাবে গত বছরের তুলনায় এবং গত তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ব্যবসারও উন্নতি হয়েছে। গড়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার পুনরুদ্ধারের হার ৬০ দশমিক ৬ শতাংশ। গত বছর মার্চে এ হার ছিল ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে কোভিডের নতুন ধাক্কার কারণে সামনের তিন মাসে ব্যবসা তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
সানেম জানায়, করোনা মহামারীর সময়ে বাংলাদেশের শিল্প ও সেবা খাতের পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে ২০২০ সালের জুলাই থেকে সানেম তিন মাস পরপর এ জরিপ পরিচালনা করছে। এ পর্যায়ের জরিপে, বাংলাদেশের সার্বিক ব্যবসা পরিস্থিতির ওপর জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ও ওমিক্রন ঢেউয়ের প্রভাব নিয়েও আলোকপাত করা হয়েছে। বাংলাদেশের আটটি বিভাগের ৩৮টি জেলার মোট ৫০২টি ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপর এই জরিপ করা হয়েছে। উৎপাদন খাতের তৈরী পোশাক, টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ প্রস্তুতকারক, হালকা প্রকৌশল ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলো জরিপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেবা খাতের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, আইসিটি ও টেলিকমিউনিকেশন, আর্থিক খাত ও রিয়েল এস্টেট খাত জরিপের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
জরিপ ফলাফল উপস্থাপনকালে ড. সেলিম রায়হান বলেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি একটি উদ্বেগজনক ইস্যু। জ্বালানির মূল্য কমাতে জ্বালানি তেল আমদানির ওপর কর কমানো এবং জ্বালানির মূল্যের জন্য নীতিনির্ধারকদের একটি কৌশলগত, গতিশীল এবং ভবিষ্যৎমুখী নীতি গ্রহণ করা দরকার।
জরিপে দেখা যায়, আগের বছরের তুলনায়, অন্যান্য খাতের চেয়ে তৈরী পোশাক খাত, টেক্সটাইল, রেস্টুরেন্ট, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ওষুধশিল্পের ব্যবসায় পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। সপ্তম পর্যায়ের জরিপে ১৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে, তাদের মতে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার জোরদার হয়েছে। যদিও ষষ্ঠ পর্যায়ে এমন প্রতিষ্ঠান ছিল ২১ শতাংশ।
জরিপকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৭৪ শতাংশ কোনো প্রণোদনা প্যাকেজ পায়নি এবং মাত্র ২৩ শতাংশ প্রণোদনা প্যাকেজ পেয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রণোদনা পেয়েছে, তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ জানিয়েছে যে, তাদের জন্য ওই প্যাকেজ যথেষ্ট নয়। ৬৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে, সরকারের পক্ষ থেকে আরো সাহায্য দরকার। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ দরকার এমন সাহায্যের মধ্যে আছে : স্বল্প সুদে কার্যকর পুঁজির ঋণ, রফতানিকারকদের জন্য শিপমেন্ট-পূর্ববর্তী পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা এবং অসহায় শ্রমিকদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি।
ওমিক্রণের কারণে রফতানি কমার ঝুঁকি বেড়েছে বলে জানিয়েছে ৮৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে, ওমিক্রনের জন্য অতিরিক্ত স্বাস্থ্য-সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং সে সংক্রান্ত খরচ বাড়ার ঝুঁকি বেড়েছে। ৯১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে পুঁজি ও শ্রমের খরচ বাড়ার ঝুঁকি বেড়েছে।
জরিপে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবটিও উঠে এসেছে। ৯৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে যানবাহনের খরচ বেড়েছে এবং ৭৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তাদের উৎপাদন শক্তির খরচ বেড়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement