২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

মাঘের শীতে দেশব্যাপী সারা দিনই বৃষ্টি

সর্বোচ্চ খুলনায় ৪৫ মিলিমিটার
গতকাল দুপুরে শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ছুটির দিনেও পথচারীদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ। ছবিটি রাজধানীর নয়াবাজার থেকে তুলেছেন আমাদের আলোকচিত্রী আবদুল্লাহ আল বাপ্পী -

মাঘের শীতে দেশব্যাপী গতকাল থেমে থেমে সারা দিনই বৃষ্টিপাত হয়ে গেল। কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণও হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তা। বৃষ্টি, ঝড়ো ও বজ্রপাতের মধ্যে দিয়ে কেটে গেল সারাটি দিন। সারা দিনই ছিল মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। গতকাল দেশের খুব কম স্থানেই সূর্যে দেখা মিলেছে। তা সত্ত্বেও গতকাল তেমন শীত ছিল না। দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ ছিল না। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তেঁতুলিয়ায়। বজ্রপাতে মানুষের মধ্যে ছিল আতঙ্ক। বাধ্য না হলে অনেকেই ঘরেই অবস্থান করেছেন। তবে বৃষ্টিজনিত কারণে খোলা আকাশে বৃষ্টিতে যারা ভিজেছেন তাদের মধ্যে শীতের অনুভূতি একটু বেশি ছিল। যদিও সর্বত্রই গতকাল সহনীয় মাত্রায় ছিল শীত।
সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে খুলনায় ৪৫ মিলিমিটার। মাঘের এই শীতে খুলনা শহরে মাত্র দুই ঘণ্টায় এত বেশি বৃষ্টি হওয়ায় স্থানীয় মানুষ খুবই আশ্চর্য হয়েছে। কারণ অতীতে খুলনায় মাঘ মাসে কখনো এত বেশি বৃষ্টি হয়নি। রাজধানী ঢাকাতেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে গেল।
মূলত একটি স্থল লঘুচাপের কারণে বাংলাদেশে এই বৃষ্টিপাত হয়ে গেল। এই স্থল লঘুচাপ থাকতে পারে আগামী সোমবার পর্যন্ত। ফলে এই দিন পর্যন্ত থাকবে বৃষ্টিপাত। তবে শুক্রবারের মতো হয়তো নাও হতে পারে। বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে খুলনা, রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগে। সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে। খুলনা ছাড়াও রংপুর বিভাগের দিনাজপুর শহরে গতকাল সারা দিনে ৪১ মিলিমিটারের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। রংপুর শহরে ৩৪ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়ে গেল। রাজশাহী বিভাগের ঈশ্বরদীতে ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে টাঙ্গাইলে ২৩ মিলিমিটার।
পশ্চিমা স্থল লঘুচাপের প্রভাবে দেশব্যাপী শৈত্যপ্রবাহ কেটে গেছে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয় নামক যে ঠাণ্ডা প্রক্রিয়াটি এত দিন ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তা এখন আর কোথাও নেই। এর প্রভাবেই বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশ প্রায় এক সপ্তাহ শৈত্যপ্রবাহের কবলে ছিল।
খুলনায় বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায় নগরীর অধিকাংশ সড়ক। দুই ঘণ্টায় ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি স্মরণকালে শীতে ছিল সবচেয়ে বেশি। শীতকালে খুলনায় এ ধরনের ভারী বৃষ্টির নজির নেই। এমনকি আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তাও বিস্মিত হয়েছেন। শুক্রবার সকাল থেকেই মেঘাচ্ছন্ন ছিল খুলনার আকাশ। খুলনা অফিস জানিয়েছে, বেলা ১১টার পর ঠাণ্ডা বাতাস ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে তা ভারী বৃষ্টিতে রূপ নেয়। একটানা দুই ঘণ্টা চলে এ বৃষ্টি। এ সময় নদীতে জোয়ারের চাপ থাকায় বৃষ্টির পানি আটকে মহানগরীর অধিকাংশ সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়। কোথাও কোথাও হাঁটুপানি জমেছে। শান্তিধাম মোড়, আহসান আহমেদ রোড, স্যার ইকবাল রোড, ডাকবাংলা, শিববাড়ী, ফেরিঘাট, শেখপাড়া, নিউমার্কেট, ময়লাপোঁতা, সাত রাস্তার মোড়, পিটিআই মোড়, টুটপাড়া কবরখানা মোড়, রূপসা, গল্লামারী, নিরালা, জিরোপয়েন্ট, সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর, দৌলতপুর, রেলগেট, মানিকতলা, ফুলবাড়ীগেট, শিরোমনি, ফুলতলা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কেই পানি জমে মানুষের চলাচলে মারাত্মক দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
দুর্ভোগে নীলফামারীর মানুষ
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, সপ্তাহ কুয়াশার পর গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয় নীলফামারীতে, যা দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়ে মানুষজন। বৃষ্টির কারণে সকাল থেকেই জেলার বেশির ভাগ উপজেলার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বৃষ্টির কারণে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। কনকনে ঠাণ্ডার সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, এই বৃষ্টিতে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং ধান-গম ও ভুট্টার জন্য আর্শীবাদ হয়েছে এই বৃষ্টি।
ডিমলা আবহাওয়া অফিসার ইনচার্জ মো: জামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ১১.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় আরো বৃষ্টি হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে।
খুলনায় জনদুর্ভোগ
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় গতকাল শুক্রবার মাঘের ভারী বর্ষণ জনজীবনে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করে। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টা থেকে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল থেকে থেকে অবশ্য গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। সারা দিন সূর্যের দেখা মেলেনি। বৃষ্টির সাথে ছিল দমকা বাতাস। দুপুরের মুষলধারার বৃষ্টিতে অল্পসময়েই নগরীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়। এতে রিকশাচালকসহ চরম বিপাকে পড়েন খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষ। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে শীতের তীব্রতাও বেড়ে যায়।
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মো: আমিরুল আজাদ বলেন, পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে খুলনায় বৃষ্টি হচ্ছে। গত শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এর মধ্যে দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয় ৪২ মিলিমিটার। তিনি বলেন আজ শনিবার সকালেও খুলনায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বগুড়ায় হাড় কাঁপানো শীত
বগুড়া অফিস জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে মাঘের কনকনে শীতে বগুড়ায় দিনভর অঝোরধারায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৩টা থেকে এ বৃষ্টিপাত শুরু হয়। শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা এই শীতের মৌসুমে সর্বোচ্চ। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বগুড়া আবহাওয়া অফিসের ওয়্যারলেস অপারেটর রবিউল ইসলাম।
এ দিকে বৃষ্টির কারণে শীতের তীব্রতাও বেড়েছে। সকাল ৯টায় বগুড়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি। বৃষ্টির প্রভাবে দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা কমে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে। রবিউল ইসলাম বলেন, ‘রাত সোয়া ৩টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গায় বিপর্যস্ত জনজীবন
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গায় রাত থেকে চলছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে বেড়ে গেছে শীতের তীব্রতা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষ। হিমেল বাতাসের সাথে বৃষ্টি যোগ হওয়ায় বেড়েছে শীতের প্রকোপ। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও শুক্রবার ভোর থেকে মেঘের গর্জনের সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। হঠাৎ বৃষ্টির কারণে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। শীত ও বৃষ্টির অসহনীয় মাত্রায় দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। সকালে কাজের সন্ধানে বের হওয়া নিম্নআয়ের কর্মজীবী মানুষ সব থেকে পড়েছেন বিপাকে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ। সকাল ৯টার আগে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার বেগেও বয়ে যাচ্ছে। আজ সারা দিন বৃষ্টির হবে বলে পূর্বাভাস দেয় জেলা আবহাওয়া অফিস।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নসহ হাওরাঞ্চলে শৈতপ্রবাহের কারণে তীব্র শীত, ঠাণ্ডা বাতাশ, কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে রাস্তা-ঘাট। কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশায় বেড়ে চলেছে শীতার্ত মানুষের কাঁপুনি। শীতবস্ত্র না থাকার ফলে কর্মজীবী খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও ছিন্নমূল মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মির্জা রিয়াদ হাসান জানান, কয়েক দিন ধরেই শীতের পরিমাণ বাড়ছে এতে করে ঠাণ্ডাজনিত রোগের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির জানান, আমাদের পক্ষ থেকে শীতার্ত পরিবারগুলোতে শীতবস্ত্র দেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
রাজধানীতে সংঘর্ষে ২ যুবক নিহত জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা তুলে ধরবেন ড. ইউনূস কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু তোফাজ্জল হত্যা : ঢাবির ৬ শিক্ষার্থীর দায় স্বীকার কুমিল্লা-১০ বিনির্মাণে আমাদেরকে কাজ করতে হবে : ইয়াছিন আরাফাত উন্নয়নের নামে দুর্নীতির মহোৎসবে মেতেছিল আ’লীগ : হামিদ আজাদ ভাইকে হত্যা করাতে ১৪ মাসের ষড়যন্ত্র ভান্ডালজুড়ি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে ঢাবি ও জাবিতে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে খুলনায় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাংবাদিক রনো ও তার পরিবার চট্টগ্রাম পানগাঁও নৌরুট জনপ্রিয় করার উদ্যোগ

সকল