দেশে ১ টাকার কাজে ব্যয় হয় ৩ টাকা!
অবৈধ আয় চলে যাচ্ছে বেগমপাড়ায়-সানেমের ওয়েবিনার- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
দেশের এক টাকার কাজে ব্যয় করা হয় তিন টাকা। বাকি দুই টাকা যাচ্ছে সুযোগ সন্ধানীদের পকেটে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেকখানি উন্নতি হলেও এখনো বৈষম্য কমেনি। এক দিকে উন্নয়ন হচ্ছে, অন্য দিকে বাড়ছে বৈষম্য। অবৈধ আয় চলে যাচ্ছে বিদেশে। আর এভাবে গড়ে উঠছে ‘বেগমপাড়া’।
গতকাল সন্ধ্যায় এক ওয়েবিনারে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন অর্থনীতিবিদরা। ‘বাংলাদেশের ৫০ বছর : অর্জন, চ্যালেঞ্জ ও শিক্ষা’ শিরোনামের এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, করোনায় নতুন করে দারিদ্র্যসীমায় নেমে আসা মানুষগুলোকে কী কৌশলে দরিদ্র দশা থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব হবে সে উদ্দেশ্যে কার্যকর কোনো কৌশল নেই। পুঁজির সরবরাহ, মানসম্মত শিক্ষা ও নগদ সহায়তা দেয়াÑ এ তিন জায়গা হতে পারে শক্তিশালী হাতিয়ার। তবে এসব জায়গার মধ্যেই দুর্বলতা রয়েছে। নতুন দারিদ্র্য ঠেকাতে এ মানুষগুলোকে আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের পর মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের সময় কর আদায় বেড়েছিল। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির লোকজনকে ধরার কৌশল নেয়ার পর এই দুই দলের নেতাদের মধ্যে ভীতি কাজ করে। রাস্তায় দামি দামি গাড়ি পড়ে থাকে। ড. আকাশ বলেন, উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে এক টাকার কাজে তিন টাকা খরচ হয়। বাকি দুই টাকা যাচ্ছে সুযোগ সন্ধানীদের পকেটে। বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় আয়ের এই অর্থ পাচার হচ্ছে। সারা বিশে^র মতো এ দেশেও ১ শতাংশ ধনীর বিরুদ্ধে চলছে বাদ বাকি ৯৯ শতাংশের লড়াই।
পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, বছরের শেষ দিকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের তোড়-জোড় চলে। এতে চুরির সুযোগ বেড়ে যায়। আবার কর আদায়ও ঠিকমতো হচ্ছে না। কর জিডিপি অনুপাত নেপালের চেয়েও কম। তিনি বলেন, এখন ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে। গরিবরা আরো গরিব হচ্ছে। মুুক্তিযুদ্ধ হয়েছে দুর্নীতি এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে। স্বাধীন দেশে এগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান কর জিডিপি বাড়াতে প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দেয়ার পরামর্শ দেন। পরোক্ষ করের মাধ্যমে গরিব মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে। বৈষম্য কমাতে সুবিচারপূর্ণ বণ্টন কৌশলে যেতে হবে। সার্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। নাহলে এক দেশে দুই অর্থনীতি চালু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, করোনার পর যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী অর্থনীতির দেশও সব মার্কিনীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) থেকে উত্তরণের ধকল সামলাতে অবশ্যই বিভিন্ন দেশের সাথে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে হবে। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যাদের সাথে কোনো দেশের এফটিএ নেই। এ বিষয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আলোচনায় এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, শিক্ষিত বেকার এখন দেশের বিশাল একটা সমস্যা। অর্থনীতি পড়লেই সবাই থিংকট্যাংক কিংবা ব্যাংকার হতে চায়। শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের কারখানায় নেয়া যায় না। তাদের কিভাবে কারখানায় আনা যায় তা গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে। দেশে এত অর্থনীতিবিদের কি প্রয়োজন! সেবা খাতে এত লোকের কাজের সুযোগ নেই যেটা শিল্প খাতে আছে। অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, সাসেক্স বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষণা ফেলে ড. সোহেলা নাজনীন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা