ডিসেম্বর থেকে মাঠে নামার পরিকল্পনা বিএনপির
দাবি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকালীন সরকার- মঈন উদ্দিন খান
- ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০৫, আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৬:২৭
নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে আগামী ডিসেম্বর থেকে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলের নির্বাহী কমিটি, উপদেষ্টা কাউন্সিল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সাথে সিরিজ বৈঠকের পর মাঠে নামার এমন পরিকল্পনাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে হাইকমান্ড। দলের মূল নেতাদের সাথে বৈঠকের পর এখন জেলা পর্যায়ের নেতা ও সমমনা পেশাজীবী সংগঠনের মতামতও নেবে দলটি। এরপরই কর্মসূচি প্রণয়নের দিকে নীতিনির্ধারকরা নজর দেবেন।
জানা গেছে , গত সপ্তাহে টানা তিন দিনের সিরিজ বৈঠকে ২৮৬ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ১১৮ জন নেতা বক্তব্য রাখেন। বৈঠকে বিএনপির সিনিয়র, মধ্যম ও তরুণ নেতাদের সবাই বলেছেন, আন্দোলন ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না, বরং তাকে আজীবন কারারুদ্ধই থাকতে হবে। তারা বলেন, ভোটের অধিকারের ফয়সালা রাজপথেই করতে হবে। আন্দোলন ছাড়া নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। এমনকি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করাও সম্ভব হবে না।
মাঠের নেতাদের এ ধরনের বক্তব্যকে আমলে নিয়েছে হাইকমান্ড। বৈঠকগুলোতে তারা ডিসেম্বরে আন্দোলনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘সামনে রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হবে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত যেসব নেতা মাঠে থাকবেন না তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজপথে থাকা নেতাদেরই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে ঠাঁই দেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ মুহূর্তে আমাদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা, গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সে লক্ষ্যেই আমরা দলীয় নেতাদের মতামত নিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে আমরা কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাংগঠনিক জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের মতামত নেবো। সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে আমরা সামনে পথ চলতে চাই। এটাও ঠিক, আমাদের দাবিগুলো সরকার স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেবে না। এ ক্ষেত্রে আন্দোলনের বিকল্প নেই। আমরা আন্দোলনেই আছি। সময়মতো আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি দেবো।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। বিএনপি ইসির পুনর্গঠন ইস্যুতেই প্রথমে মাঠে নামার চিন্তা করছে। এ লক্ষ্যে তৈরি করা হচ্ছে দলীয় প্রস্তাবনা।
সর্বশেষ ২০১৭ সালে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের এই কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগেই নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নাম চূড়ান্ত করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের আগেও রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি।
পরে রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপেও বসেছিল তারা। যদিও ওই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি বলে দাবি বিএনপির। জানা যায়, ক্ষমতাসীন সরকার নতুন আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠনের চিন্তাভাবনা করছে। বিএনপি বলছে, সার্চ কমিটিই হোক আর আইন করেই হোক এই সরকারের অধীনে সব নির্বাচন কমিশনই হবে আজ্ঞাবহ। তাই নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করতে হবে। এ নিয়ে দলটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট নাগরিকসহ পেশাজীবীদের সাথেও আলোচনা করবে। এরপর দলীয়ভাবে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরা হবে। প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির সাথেও এই ইস্যুতে বসতে চায় বিএনপি।
জানা যায়, ধারাবাহিক বৈঠকে বিএনপি নেতারা হাইকমান্ডকে জানান, দলকে আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।
তারা মনে করেন, এই দাবি আদায়ে কোনো রকম ছাড় দেয়া যাবে না। সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনে নামতে হবে। আন্দোলনে নামার আগে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মাঝে একটি আত্মিক বন্ধন গড়ে তুলতে হবে। দেশের কোথাও কোনো নেতাকর্মী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের হাতে নির্যাতনের শিকার হলে একযোগে প্রতিবাদে ফেটে পড়তে হবে। দলকে শক্তিশালী করতে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের কমিটিতে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। প্রতিটি কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে হবে।
বৈঠকে মধ্যম সারির নেতারা বলেন, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, মহিলা দলসহ সব অঙ্গসংগঠনকে সক্রিয় রাখতে পুনর্গঠন করতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিকে জনগণের দাবিতে পরিণত করতে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে অটুট রেখে ডান-বামসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, পেশাজীবীসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করতে হবে।
বিএনপির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই। বৈঠকে আমি এই বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছি। আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, দলকে সুসংগঠিত করে সুনির্দিষ্ট টার্গেট নিয়ে আন্দোলনে নামতে হবে। আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফেরা যাবে না।
সিরিজ বৈঠকের শেষ দিন গত বৃহস্পতিবার অঙ্গসংগঠনের নেতারা সবাই আন্দোলন-সংগ্রামের বিষয়টি তুলে ধরলে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে বলা হয়, এবারের আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে থাকতে না পারলে আগেভাগেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। তবে কাউকেই দল থেকে বাদ দেয়া হবে না। দলের সাথেই রাখা হবে, কোনো দায়িত্বে নয়।
আন্দোলনের আগে দল গোছানোর পরামর্শ : আন্দোলন শুরুর আগে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনগুলো গোছানোর পরামর্শ এসেছে ধারাবাহিক বৈঠকে। তিন দিনের বৈঠকে জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের পাশাপাশি সব অঙ্গসংগঠন আন্দোলনমুখী নেতৃত্বে পুনর্গঠনের দাবি এসেছে। বিশেষ করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল ও ছাত্রদলের মতো অঙ্গসংগঠনগুলোর ‘দ্রুত কমিটি’ গঠনের জন্য নেতারা তাগাদা দেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির অঙ্গসংগঠন ৯টি এবং সহযোগী সংগঠন দু’টি। সব অঙ্গসংগঠনের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। ওলামা দল, তাঁতী দল ও মৎস্যজীবী দল ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি করে যে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল তারও মেয়াদ চলে গেছে। বিএনপির দুই সহযোগী সংগঠন হচ্ছে- শ্রমিক দল ও ছাত্রদল। এর মধ্যে শ্রমিক দলের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ এবং ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ শনিবার। তারা নির্ধারিত মেয়াদেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। জানা গেছে, নির্বাচিত নেতৃত্বেও ছাত্রদল নিয়ে হতাশ বিএনপির হাইকমান্ড।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা