হোয়াইটওয়াশ হলো না
- জসিম উদ্দিন রানা
- ২৯ মে ২০২১, ০০:০৫
শুরুতে লঙ্কান অধিনায়ক কুশল পেরেরার টস জয় এবং সেঞ্চুরি। এরপর বল হাতে দুশমন্ত চামিরার আগুন ঝরানো বোলিংয়ে নেয় বাংলাদেশের ৫ উইকেট। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে টাইগার মোসাদ্দেক হোসেন ও মাহমুুদুল্লাহ রিয়াদের হাফ সেঞ্চুরি এবং এর আগে বল হাতে তাসকিনের ৪ উইকেটই বাংলাদেশের প্রাপ্তি। এই তিনটি বিষয় বাদ দিলে দিনটি ছিল শ্রীলঙ্কার। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই রাজত্ব করেছে সফরকারীরা। আর স্বাগতিকদের বিবর্ণ ব্যাটিং ও ফিল্ডিং শ্রীলঙ্কার জয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। অধিনায়ক কুশল পেরেরার সেঞ্চুরিতে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রান করে সফরকারি শ্রীলঙ্কা। জবাবে খেলতে নেমে বড় কোনো জুটি গড়তে না পারায় সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৮৯ রানই করতে পারে বাংলাদেশ। ফলে ৯৭ রানে হার মেনে ২-১ ব্যাবধানে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তামিম বাহিনীকে। হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যায় টাইগারদের।
২৮৭ রানের বড় লক্ষ্য। জবাব দিতে নেমে শুরুতেই নেই নাঈম, সাকিব ও তামিম। ২৮ রানে ৩ উইকেট। আরো একবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আগের দুই ম্যাচে ১৫ আর শূন্যের পর গত১কাল ৪ রানে সাজঘরের ফিরেেেছন। এরপর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন মুশফিক ও মোসাদ্দেক। আগের দুই ম্যাচে ৮৪ আর ১২৫ রানের ইনিংসে দলকে জেতানো মুশফিকের ব্যাট থেকে বড় ইনিংস আশা করেছিলেন ভক্তরা। সেট হয়েও আউট হলেন ২৮ রানে। বাংলাদেশের জয়ের আশা কার্যত ওখা্েনই শেষ।
প্রায় দুই বছর পর ওয়ানডে দলে ফেরা মোসাদ্দেক দেখেশোনে খেলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। এরপরই ছন্দপতন। রমেশ মেন্ডিসকে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ হওয়ার আগে ৭২ বলে ৩ চার আর এক ছক্কায় ৫১ রান করেন। এরপর ১৭ বলে ১৬ করে আউট হন আফিফ। ১৫৮ রানে বাংলাদেশের শেষ ৬ উইকেট।
অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ একপ্রান্ত আগলে রেখেছেন। মিরাজ ও তাসকিন নেমেই হতাশা উপহার দিয়ে খালি হাতে ফিরেন সাজঘরে। এর আগে আফিফ ফিরেন ১৬ রানে। শেষ পর্র্যন্ত ৪২.৩ ওভারে ফার্নান্দোর বলে আউট হওয়ার আগে মাহমুদুল্লাহ তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি (৫৩)। সব উইকেট হারিয়ে ১৮৯ রানই করতে পারে বাংলাদেশ। দুশমন্ত চামিরা বল হাতে আগুন ঝরিয়েছেন। তাতেই মূলত পুড়ছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। লঙ্কান এই ডান হাতি এই পেসারকে খেলতে গিয়ে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠেছে স্বাগতিকদের। সিরিজে একমাত্র বোলার যিনি ৯ ওভার বল করে মাত্র ১৬ রান খরচায় ৫ উইকেট নিযেছেন। তার শিকার তামিম, নাঈম, সাকিব, মিরাজ ও তাসকিন। হাাসারাঙ্গা, রমেশ দু’টি করে এবং ফার্নান্দো একটি উইকেট নিযেছেন। এর আগে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হাতছাড়া, তাই হোয়াইটওয়াশ এড়াতে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে চারটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে শ্রীলঙ্কা। তিনজনেরই অভিষেক ঘটে। আর বাংলাদেশের একাদশে ওপেনার লিটন দাসের পরিবর্তে মোহাম্মদ নাঈম ও সাইফুদ্দিনের জায়গায় তাসকিন আহমেদ একাদশে সুযোগ পান।
টস জিতে শুরু থেকেই দানুশকা গুনাতিলকাকে নিয়ে মারমুখী মেজাজে পেরেরা। পাওয়ার-প্লেতে ৭৭ রান করেন তারা। ১২তম ওভারে তাদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরান বাংলাদেশের পেসার তাসকিন। ওই ওভারের দ্বিতীয় বলে গুনাতিলকার (৩৯) উইকেট উপড়ে ফেলেন তিনি। দলীয় ৮২ রানে প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। একই ওভারের শেষ বলে তিন নম্বরে খেলতে নামা পাথুম নিশাংকাকে রানের খাতা খোলার আগে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন তাসকিন।
তৃতীয় উইকেটে পেরেরা ও কুশল মেন্ডিসের ৬৯ রানের জুটি গড়েন। অবশেষে তাসকিনই ২২ রান করা মেন্ডিসকে ফেরান। ১৫১ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন হলেও, অন্যপ্রান্তে দলের চাকা সচল রেখেছিলেন পেরেরা। সাকিবের বলে ৬৬ ও ৭৯ রানে যথাক্রমে মোস্তাফিজ-আফিফের হাতে দু’বার জীবন পেয়ে সেঞ্চুরির দোর গোড়ায় পৌঁছে যান পেরেরা। এরপর ৯৯ রানে আবারো জীবন পান পেরেরা। এবার বোলার মোস্তাফিজ, ফিল্ডার মাহমুুদুল্লাহ। তিনবার জীবন পেয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন কুশল পেরেরা। ৯৯ বলে ১০ চার এক ছক্কায় ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন কুশল। ১২২ বলে ১১ চার ও এক ছক্কায় ১২০ রান করা পেরেরাকে ফেরান শরিফুল। এরপর শ্রীলঙ্কাকে বড় স্কোর এনে দেন লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। সিরিজে প্রথমবার খেলতে নামা নিরোশান ডিকবেলা (৭) রান আউট হন। হাসারাঙ্গা ডি সিলভা (১৮) তাসকিনের চতুর্থ শিকার। তবে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ৭০ বলে চারটি চারে অপরাজিত ৫৫ ও রমেশ মেন্ডিসের অপরাজিত ৮ রানে ৬ উইকেটে ২৮৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা। তাসকিন ৯ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন। মিরাজ, সাকিব, মোসাদ্দেক, মোস্তাফিজ থাকেন উইকেট শূন্য। শরিফুল নেন এক উইকেট।
ম্যাচ শেষে কুশল পেরেরা বলেন, জয়ের দরকার ছিল। তবে আমরা সিরিজটি হেরেছি। প্রথম ১০ ওভার দেখেশুনে খেলে সেট হয়ে ৩০-৩৫ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করার চেষ্টা করেছি। আমাদের বোলিং বিভাগ সত্যিই ভালো কাজ করেছে। প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটিং ছিল উদ্বেগজনক। যখন ঘুরে দাঁড়িয়েছি তখন সিরিজ শেষ।
মুশফিকুর রহীমের মতে, ছেলেরা এই সিরিজের জন্য সত্যিই কঠোর পরিশ্রম করেছে। কয়েক মাস ধরে আমরা সেরা ক্রিকেট খেলিনি তবে ভাগ্যক্রমে আমরা প্রথম দু’টি ম্যাচেই আমাদের পরিকল্পনাগুলো কার্যকর করেছিলাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরো বেশি করে অবদান রাখতে হবে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা সহজ নয়। তারা কখনোই হাল ছাড়ে না। সিরিজ উপভোগ করেছি।
ম্যান অফ দ্য ম্যাচ : চামিরার বক্তব্য আমি যেভাবে বোলিং করেছি, তাতে খুব খুশি। দলের জন্য ভুমিকা রাখতে পেরে সন্তুষ্ট।
বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল জানান, আমরা সিরিজ জিতেছি কিন্তু সম্পূর্ণ খেলা খেলিনি। সম্ভাবনার পক্ষে খেলিনি। আমাদের কাজ করার আরো ক্ষেত্র রয়েছে। শেষ ম্যাচে আমাদের সুযোগগুলো নিতে পারিনি। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনটি ক্যাচ মিস করেছি। তাদেরকে আরো ৩০ রান কমে আটকে দেয়া যেত। নতুররা অনেক চেষ্টা করেছে। যদি তারা পারফর্ম করে তবে আমরা আরো ভালো একটি দল হয়ে উঠব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা : ৫০ ওভারে ২৮৬/৬ (গুনাথিলাকা ৩৯, পেরেরা ১২০, মেন্ডিস ২২, ধনাঞ্জয়া ৫৫*, হাসারাঙ্গা ১৮, শরিফুল ১/৫৬, তাসকিন ৪/৪৬)।
বাংলাদেশ : ৪২.৩ ওভারে ১৮৯ (মোসাদ্দেক ৫১, মাহমুদুল্লাহ ৫৩, মুশফিক ২৮, তামিম ১৭, আফিফ ১৬, চামিরা ৫/১৬, মেন্ডিস ২/৪০, হাসারাঙ্গা ২/৪৭, ফার্নান্দো ১/৩৩)।
ম্যাচ সেরা : দুশমন্ত চামিরা (শ্রীলঙ্কা)
সিরিজ সেরা : মুশফিকুর রহীম (বাংলাদেশ)।