সমবেদনা শিক্ষা দেয় রমজান
- লিয়াকত আলী
- ০১ মে ২০২১, ০১:৪১
রমজানুল মোবারকের আজ শনিবার আঠারো তারিখ। এ মাসের মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণিত হাদিসে মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, এটা সমবেদনার মাস। তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার জন্য রয়েছে পাপ মোচন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং রোজাদারের মতোই তাকে প্রতিদান দেয়া হবে। কিন্তু রোজাদারের প্রতিদান কমানো হবে না। প্রশ্ন করা হলো- হে আল্লাহর রাসূল, রোজাদারকে ইফতার করানোর মতো সামর্থ্য আমাদের প্রত্যেকের নেই। তিনি বললেন, যে কেউ কোনো রোজাদারকে একটু দুধ, একটি খেজুর কিংবা একটু পানীয় দিয়ে ইফতার করাবে, তাকেই আল্লাহতায়ালা এ প্রতিদান দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্ত করে আহার করাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে হাউজে কাওছার থেকে পানি পান করাবেন। অর্থাৎ রমজানের সিয়াম সাধনার ফলে মুসলমানদের মধ্যে পরস্পরে সমবেদনা ও সহানুভূতির গুণ আরো জোরদার হয়। সমাজের দুস্থ ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের কষ্ট অনুভব করার সুযোগ এনে দেয় রমজান। মুমিন বান্দারা মানবিকতার দীক্ষা পায় সিয়াম পালনের মাধ্যমে।
পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সহানুভূতি পৃথিবীতে মানবজাতির অস্তিত্ব ও স্থায়িত্বের অন্যতম শর্ত। তাই ইসলামে এই দিকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন মাজিদে মাতা-পিতা, আত্মীয়স্বজন ও সব মানুষের সাথে সদাচার ও সহানুভূতিমূলক আচরণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইসলামে আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের প্রতি কর্তব্য পালনের ওপর এতই জোর দেয়া হয়েছে, বিশ্বের অন্য কোনো ধর্ম ও আদর্শে যার নজির পাওয়া যায় না। মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জিবরাইল আলাইহিস সালাম আমাকে প্রতিবেশীর অধিকার আদায়ে এতই তাগিদ দিতে থাকেন যে আমি মনে করেছিলাম প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী সাব্যস্ত করা হবে। আদম-হাওয়া আ:-এর সন্তান হিসেবে পৃথিবীর সব মানুষ একই পরিবারের সদস্য এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক হতে হবে সহমর্মিতা ও সহানুভূতিমূলক এটাই ইসলামের শিক্ষা। কুরআন মাজিদে মুসলমানদের একে-অপরের ভাই বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (সূরা হুজুরাত-১০)
হাদিস শরিফে পুরো সৃষ্টি জগৎকে আল্লাহর পরিবার সাব্যস্ত করে সৃষ্টির সেবাকে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়ার উপায় বলে বর্ণনা করা হয়েছে। হজরত আনাস রাদিয়াল্লøাহু আনহু বর্ণনা করেন, হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, গোটা সৃষ্টিকুল আল্লাহর পরিবার। এই পরিবারের কল্যাণে যে ব্যক্তি আত্মনিয়োগ করে, সে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়।
এ প্রসঙ্গে একটি প্রসিদ্ধ হাদিস রয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা বলবেন, হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম। তুমি আমাকে খাবার দাওনি। মানুষ বলবে, হে আল্লাহ আপনি রব্বুল আলামিন আপনাকে খাওয়াব কিভাবে? তিনি বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল। তুমি তাকে খাবার দাওনি। সেদিন তুমি তাকে খাবার দিলে আজ তা আমার কাছে পেতে। হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম। তুমি আমাকে পানি দাওনি। মানুষ বলবে, আপনি সারা জগতের পালনকর্তা। আপনাকে পানি পান করাব কিভাবে? আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল। তুমি তাকে পানি দাওনি। সেদিন যদি তাকে পানি দিতে, তাহলে আজ তা আমার কাছে পেতে। হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ ছিলাম। তুমি আমার সেবা করনি। মানুষ বলবে আপনি রব্বুল আলামিন। আপনাকে সেবা করব কিভাবে? আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা রোগে কাতর ছিল। তুমি তার সেবা করনি। সেদিন তুমি তার সেবা করলে আমাকে সেখানে পেতে।
মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোটা মুসলিম উম্মাহকে একটি দেহের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, কারো চোখে যন্ত্রণা হলে যেমন পুরো শরীর অস্বস্তি বোধ করে, মাথা ব্যথা হলে যেমন পুরো শরীর অসুস্থ হয়, গোটা মুসলিম উম্মাহ এমনই।
মাহে রমজানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুমিনদের মধ্যে পরস্পরের সহানুভূতি ও সমবেদনার গুণ অর্জিত হয়। বিশেষ করে যারা দুস্থ, অনাহারের কষ্ট যাদের সহ্য করতে হয়, তাদের ব্যথা বোঝার সুযোগ হয় সিয়াম পালনের কারণে। যারা কখনো ক্ষুধার যন্ত্রণা পোহায়নি, খাবারের অভাব কাকে বলে, যারা জানে না, তারা কিভাবে বুঝবে অভাবী লোকদের কষ্ট? লাগাতার একমাস রোজা রাখার কারণে এই ব্যক্তিরা নিরন্ন মানুষদের প্রতি সদয় হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারে। এজন্যই মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের অন্যতম ভিত্তি সাব্যস্ত করেছেন রমজান মাসের সিয়ামকে এবং পারস্পরিক সহানুভূতিকে এ ইবাদতের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা