০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

মহানন্দার পানি প্রত্যাহারে বাংলাদেশের উদ্বেগ

মোদির সফরে হচ্ছে না তিস্তা চুক্তি
-

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পানি প্রত্যাহারের কারণে মহানন্দা নদীর প্রবাহ কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া মনু, ধরলা, গোমতি, খোয়াই, দুধকুমার ও মুহুরি নদীর পানি বণ্টন চুক্তি করতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সরকার।
গত মঙ্গলবার দিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ আহ্বান জানানো হয়। অন্য দিকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। আর ভারতের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির জলশক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব পঙ্কজ কুমার। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান এতে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে বাংলাদেশের সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের উজানে অবস্থিত রহিমপুর খাল খনন, আখাউড়ার সিঅ্যান্ডবি খাল ও জানজি নদী থেকে তিস্তায় দূষণ, অভিন্ন নদীর অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে কবির বিন আনোয়ার তিস্তার পানি বণ্টনে অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি সইয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়া মনু, ধরলা, গোমতি, খোয়াই, দুধকুমার ও মুহুরি নদীর পানি বণ্টন চুক্তির ওপর জোর দেন তিনি। ১৯৯৬ সালে সই হওয়া গঙ্গা চুক্তির বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের পাওয়া পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে তিনি যৌথ সমীক্ষার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বৈঠকে ত্রিপুরার সাবব্রুম শহরের জন্য খাবার পানি সরবরাহ করতে ফেনী নদী থেকে পানি প্রত্যাহারে বাংলাদেশের সাথে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হয়। এ জন্য ফেনী নদীর পানি বণ্টনের খসড়া চুক্তি প্রণয়নের বিষয়টি আলোচনা হয়। বাংলাদেশের চিনি কলগুলোর বর্জ্যরে কারণে পশ্চিমবঙ্গের মাথাভাঙ্গা-চুরনি নদীর পানি দূষণের বিষয়টি উত্থাপন করে ভারত। পরবর্তী সচিব পর্যায়ের বৈঠকের জন্য সুবিধাজনক সময়ে ঢাকা আসতে পঙ্কজ কুমারকে আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশের পানিসম্পদ সচিব।
পরে কবির বিন আনোয়ার ভারতের জলশক্তি মন্ত্রী গাজিন্দ্র সিং এবং প্রতিমন্ত্রী রতন লালের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে পানিসম্পদ খাতে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে যোগ দিতে ভারতের গাজিন্দ্র সিং চলতি বছর বাংলাদেশে আসবেন বলে কবির বিন আনোয়ার আশা প্রকাশ করেন।
এ দিকে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈঠকটি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদী দুই দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। উভয় পক্ষই এই বিষয়ে দুই দেশের বিদ্যমান ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। দুই পক্ষ নদীর পানিবণ্টন, দূষণ কমানো, নদী তীর রক্ষা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, অববাহিকা ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণে সম্মত হয়েছে। একটি যৌথ প্রযুক্তিগত কার্যনির্বাহী দল এই বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করবে বলে দুই সচিব একমত হন।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের আগে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই পরিকল্পনার আওতায় এর আগে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র সচিব ও বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর নৌপরিবহন সচিবদের বৈঠক হবে।
মোদির সফরে তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন ঢাকা সফরে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হচ্ছে না। তবে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের পরে পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের আশ্বাস দিয়েছে ভারত।
দিল্লিতে পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে গতকাল ঢাকা ফিরে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে এ কথা জানান। তিনি বলেন, তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়টির সাথে পশ্চিমবঙ্গের সরকারও জড়িত। সেখানে বিধানসভা নির্বাচন চলছে। ভারতের পানিসম্পদ সচিব বলেছেন, নির্বাচন শেষ হলে সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়ে আলোচনা করে এর সমাধান করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল