প্রণোদনার অর্থ কারা পাচ্ছে পর্যালোচনা দরকার : সিপিডি
- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০০
করোনা মোকাবেলা সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ পর্যালোচনা করার সুপারিশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ‘প্রণোদনার অর্থ কতটুকু ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের হাতে যাচ্ছে, আর কতটুকু অনাদায়ী থাকার আশঙ্কা রয়েছেÑ এসব বিষয়ে সার্বিক পর্যালোচনা প্রয়োজন। একই সাথে অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারে মধ্যমেয়াদে সরকারের নীতিগত সহায়তা অব্যাহত রাখা উচিত এবং চলতি অর্থবছরের বাজেট এক্ষুনি সংশোধন করা প্রয়োজন।
চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) অর্থনীতি নিয়ে এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ দিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে পর্যালোচনা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। সিপিডির নিয়মিত আয়োজন ‘ইনডিপেনডেন্ট রিভিউ অব বাংলাদেশ’স ডেভেলপমেন্ট (আইআরবিডি) প্রোগ্রাম’-এর আওতায় দেশের অর্থনীতির গতি প্রকৃতি তুলে ধরতে আয়োজন করা হয় এই সংবাদ সম্মেলন।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান যৌথভাবে এ প্রতিবেদন তৈরি করেন।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, চলমান কোভিড পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মিশ্র সঙ্কেত পরিলক্ষিত হচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতির কিছু সূচকে ইতিবাচক ধারা দেখা গেলেও কিছু সূচকে নিম্নমুখী প্রবণতা রয়েছে। সার্বিকভাবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আরো সময় লাগতে পারে। এমতাবস্থায় অর্থনীতি সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারে মধ্যমেয়াদে সরকারের নীতিগত সহায়তা অব্যাহত রাখা, সবচেয়ে জরুরি খাতে সরাসরি অর্থ সরবরাহ করা এবং দ্রুততম সময়ে সংশোধিত বাজেট তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
মূল প্রবন্ধে ড. তৌফিক বলেন, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা সব খাতে সমানভাবে বিতরণ হয়নি। জানুয়ারি পর্যন্ত কৃষি খাতে প্রণোদনার অর্ধেকও বিতরণ হয়নি। ব্যাংকের সাথে সম্পর্ক না থাকায় ছোট খাতের উদ্যোক্তারা প্রণোদনা পাচ্ছেন না।
বিতরণ করা প্রণোদনার টাকা কারা পাচ্ছেন এ প্রশ্ন উত্থাপন করে তিনি বলেন, এ প্রণোদনার কতটুকু ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের হাতে যাচ্ছে, আর কতটুকু অনাদায়ী থাকার আশঙ্কা রয়েছেÑ এসব বিষয়ে সার্বিক পর্যালোচনা প্রয়োজন। পাশাপাশি যারা প্রণোদনা পাননি, তাদের জন্য নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা প্রয়োজন। আর অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ছোট উদ্যোক্তাদের অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এ প্রণোদনায় ব্যাংকের ভূমিকা কমাতে হবে।
করোনার সময়েও দেশের সামষ্টিক মূলসূচকগুলো ভালো রয়েছে বলে জানান তৌফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাজস্ব আহরণে বড় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য থাকলেও সর্বশেষ হিসাবে তা বেড়েছে ৮ শতাংশ। রফতানি এক শতাংশের মতো নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হলেও আমদানি কমে আসা, প্রবাসী আয় বৃদ্ধির কারণে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের অবস্থাও ভালো। তবে ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে আসার সাথে কমেছে বিনিয়োগ। তিনি আরো বলেন, প্রণোদনার অর্থ বিতরণের পরেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার পাহাড় জমেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকে বাড়তি তারল্যের পরিমান দুই লাখ কোটি টাকায় দাঁড়ায় । আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বাড়তি তারল্য দ্বিগুণের বেশি। এ অবস্থায় করোনা বাস্তবতা থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সম্প্রসারণমূলক মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি অবলম্বনের পরামর্শ দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, যেকোনো সঙ্কটে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যয় বাড়িয়ে জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করা পুনরুদ্ধারের একটি জনপ্রিয় অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া।
সরকারের ব্যয় বাড়লে, জনসাধারণের কাছে অর্থ প্রবাহ বাড়লে পণ্য ও সেবার চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকে। এ সুযোগ কাজে না লাগিয়ে এ কঠিন সময়ে সরকারের ব্যয় সঙ্কোচন করা হয়েছে। তিনি বলেন, করোনা সঙ্কটে বাজেট ঘাটতি জিডিপির সাড়ে ৬ শতাংশে উন্নীত করার সুপারিশ থাকলেও অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে সরকারের আয়ের চেয়ে ব্যয় কম হয়েছে।
অর্থায়নের উৎস সম্পর্ক তিনি বলেন, বিদেশ থেকে এখনো কম সুদে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া ব্যাংকেও প্রচুর উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এ অবস্থায় বাজেট ঘাটতির চিন্তা না করে সরকারের বাজেটের আকার বাড়ানো উচিত।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় বর্তমানে তিন লাখের বেশি খেলাপি রয়েছে। এখানের ব্যবসায়ীদের ইচ্ছাকৃত খেলাপি হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এ অবস্থায় প্রণোদনার ঋণের মেয়াদ সুনির্দিষ্ট করতে হবে।
সিপিডির প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাভিলাষী আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যেই সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে সরকারি সংস্থার সাথে আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাবে বড় ধরনের পার্থক্য এবং এ নিয়ে বিতর্ক ওঠেছে। তবে প্রবৃদ্ধির এই হার অর্জিত হলেও অর্থনীতির সব খাত একইভাবে পুনরুদ্ধারিত হবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা