০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
থানায় ছাত্রী নির্যাতন

উখিয়ার ওসি মর্জিনাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

-

পুলিশের এক সদস্যের সাথে প্রেমের পর বিয়ের প্রস্তাব তোলায় থানায় বেঁধে নির্মম নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী এক ছাত্রী মামলা দায়ের করেছে উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আকতার, কনস্টেবল মো: সুমন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল ইসলাম ও এএসআই মো: শামীমের বিরুদ্ধে।
গতকাল মঙ্গলবার কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ রিয়াদ সোলতানা নুরী নামের এক মহিলা মামলাটি দায়ের করেন।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বাদি কক্সবাজারের একটি বেসরকারি কলেজের ছাত্রী বলে জানা গেছে। তিনি নারী নির্যাতন আইনে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট একরামুল হুদা।
অভিযোগে জানা গেছে, সুমন নামে এক পুলিশ কনস্টেবলের সাথে প্রেমের পর বিয়ের প্রস্তাব তোলায় পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মামলার বাদি ওই ছাত্রী। কনস্টেবল হলেন কুমিল্লা জেলার হোমনা ইউনিয়নের হাসান আলীর ছেলে সুমন। উখিয়া মরিচ্যা চেক পোস্টে দায়িত্বরত অবস্থায় ওই মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সুমনের। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে চলতি বছরের ৭ জুলাই রাতে উখিয়া থানায় নির্মম পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন ওই ছাত্রী।
মামলার বাদি জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের সূত্র ধরে পুলিশ কনস্টেবল সুমনের সাথে তার সম্পর্ক হয় প্রায় এক বছর আগে। এরই মধ্যে তাদের বেশ কয়েকবার সরাসরি দেখা হয়। শারীরিক সম্পর্কও হয়। উখিয়া মরিচ্যা চেকপোস্টে দায়িত্বের সুবাদে খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে সুমনসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য থাকেন। সর্বশেষ ওই কক্ষেও সুমনের সাথে দেখা করতে যান ছাত্রী। এরপর থেকে কিছুদিন যোগাযোগ বন্ধ রাখেন সুমন। যোগাযোগ বন্ধ রাখার একপর্যায়ে ৭ জুলাই সকালে কথা হয় সুমনের সাথে। সুমনের কথা মতো উখিয়ার মরিচ্যায় যান তার প্রেমিকা। সেখানে তাদের বিয়ের ব্যাপারে অনেক কথা হয়। এরপর ছাত্রীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে বিকেলের দিকে উখিয়ার ইনানী নিয়ে যান সুমন। সেখানে তারা ওঠেন সুমনের কয়েকজন বন্ধুর কক্ষে। বন্ধুদের সামনেও তাদের বিয়ের বিষয়ে কথা ওঠে। কথার একপর্যায়ে সুমন ও তার প্রেমিকার মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। সেখানে তারা সিদ্ধান্ত নেন মরিচ্যা গিয়ে কাজি ডেকে বিয়ে করবেন। মরিচ্যায় গিয়ে বিয়ের নামে নানা টালবাহানা শুরু করে সুমন। ৭ জুলাই রাত ১০টার দিকে প্রেমিকাকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে উধাও হয়ে যায় সুমন।
ওই ছাত্রী আরো বলেন, ‘যখন সুমন রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে উধাও হয়ে যায়; তখন রাত ১১টার দিকে আমি কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন স্যারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে বিষয়টি অবগত করি। স্যার উখিয়া থানায় যোগাযোগ করে সেখানে যেতে বলেন। স্যারের কথায় আমি রাত সাড়ে ১১টার দিকে উখিয়া থানায় হাজির হয়ে ওসি মর্জিনা আক্তারকে সব বিষয় খুলে বলি। বলার পর থেকে আমার ওপর নির্যাতন শুরু করে।’ ছাত্রী বলেন, ‘প্রথম দফায় আমাকে ব্যাপক মারধর করেন ওসি নিজেই। এরপর দ্বিতীয় দফায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য (পুরুষ) আমাকে মারধর করে। পুলিশের ব্যাপক মারধরে আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তক্ষরণও হয়। পুরো শরীরজুড়ে পুলিশি নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। হিজাব দিয়ে চোখ বেঁধে এবং হাতকড়া পরিয়ে মারধর করা হয়। নির্যাতনের সময় অনেক মন্দ গালিগালাজ করা হয়। ‘কনস্টেবল সুমনের সাথে যোগাযোগ না রাখার হুমকি দিয়ে দফায় দফায় মারধর করা হয়। এমনকি ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে চালান করে দেয়ার হুমকিও দেন ওসি। এর পরের দিন ৮ জুলাই আমার বাবার সাথে যোগাযোগ করেন ওসি। বাবা উখিয়া থানায় এসে আমাকে নিয়ে যান। কিন্তু আমার মোবাইল ফোনটি রেখে দেন ওসি।’
তিনি বলেন, বাসায় এসে চকরিয়ার একটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। ৯ জুলাই ডাক্তার দেখাই চকরিয়ার একটি হাসপাতালে। আঘাতের চিহ্ন দেখে ডাক্তারও রীতিমতো অবাক হন। এরপর কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছিলাম। ওই ছাত্রী বলেন, সুমন দেখে শুনে আমার সাথে সম্পর্ক করেছে। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শারীরিক সম্পর্কও করেছে। তাই বলে আমাকে এমন নির্যাতন করবে মেনে নিতে পারছি না। মহিলা ওসি নিজে মেরেছে ঠিক আছে; কিন্তু পুরুষ পুলিশের দ্বারা নির্মম মারধর করা হয়েছে। আমার শরীর দেখলে বুঝা যায় কেমন নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ। আমি এর বিচার চাই। বিচারের জন্য আমি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement