করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে
- সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
- ১৬ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যয় বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এক বছরের ব্যবধানে সরকারি ব্যয় শূন্য দশমিক ৮ ভাগ বাড়ানো হবে। বর্তমানে জিডিপি’র অনুপাতে সরকারি ব্যয় ১৫ দশমিক ১ ভাগ। চলতি অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ১৫ দশমিক ৯ ভাগে উন্নীত করা হবে।
এ বিষয়ে অর্থবিভাগের এক নীতি বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উৎপাদন খাতে ক্রিয়াশীল ফ্যাক্টরগুলো অনেকাংশে অচল হয়ে পড়েছে যার ফলে সমাজের সব শ্রেণীর লাখ লাখ লোকের আয় এবং জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয় কমে গেছে। অন্যদিকে, করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে গিয়ে সরকারকে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার এক লাখ তিন হাজার কোটি টাকার ( ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপির ৩.৭%) অর্থ সহায়তা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে। এ সব উদ্যোগের কারণে চলতি অর্থবছর এবং পরবর্তী তিনটি অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বেড়ে যাবে। ’
এই ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কোনো ক্ষতিকর প্রভাব অর্থনীতির ওপর পড়বে না উল্লেখ করে অর্থবিভাগ বলছে,‘বাংলাদেশে ঋণের স্থিতি-জিডিপির অনুপাত এখনো কম ( ৩৩ শতাংশ)। এই কারণে বাজেট ঘাটতি কিছুটা বাড়িয়ে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে বিলাসী ব্যয়Ñ যেমন বিদেশ ভ্রমণকে নিরুৎসাহিত করা হবে (ইতোমধ্যে যা কার্যকর করা হয়েছে। ভ্রমণ ব্যয় ৫০% হ্রাস করে গত মাসে অর্থ বিভাগ থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে) এবং কর্মসৃজন ও কৃষিখাতে উৎপাদন বাড়ানোর উপর জোর দেয়া হবে। ’
নীতি বিবৃতিতে এ সম্পর্কে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ ও ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় জিডিপি’র হিসাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি এবং দেশব্যাপী গুণগত ও মানসম্পন্ন সরকারি সেবা সম্প্রসারণে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। মূলত বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল ও অগ্রসরমান দেশের তুলনায় বাংলাদেশের জিডিপির হিসাবে সরকারি ব্যয় তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম। বাংলাদেশে ২০১৯ সালে সরকারি ব্যয়ের আকার ছিল জিডিপির ১৫ দশমিক ১ শতাংশ, যেখানে ভিয়েতনাম, ভারত ও নেপালের ক্ষেত্রে এই হার ছিল যথাক্রমে ২২.৩, ২৭.১ ও ৩০.৫ শতাংশ। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলোর সরকারি ব্যয়ের আকার বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। যেমন ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফ্রান্সে এই ব্যয় ৫৫.৮, ডেনমার্কে ৫১.১, বেলজিয়ামে ৫১.৯ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে, সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধির গতি ও মূল্যস্ফীতি ধারা স্থিতিশীল রেখে সীমিত সম্পদের মধ্য হতে কিভাবে সরকারি ব্যয়ের আকার বৃদ্ধি করা যায়। ’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানে সোয়া লাখ কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়েছে তাতেই সরকারের ব্যয় অনেকখানি বৃদ্ধি পাবে। এই প্রণোদনার অংশ হিসেবে কর্মসৃজনে তিনটি সরকারি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বরাবর সম্প্রতি এক হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এটা কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে একটি ভূমিকা রাখবে। শুধু তাই নয়, সরকারি ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো শুরু হয়েছে। বিদেশ ভ্রমণ ব্যয় হ্রাস এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত গাড়ি কেনার ওপর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যয়টি কমানো হয়েছে এডিপিতে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ ব্যয় বন্ধ করে দেয়া। এতে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা সরকারের সাশ্রয় হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুলাই কর্মসৃজনের জন্য সরকারি তিন ব্যাংক ও এক ক্ষুদ্রঋণদানকারী সংস্থাকে এক হাজার কোটি টাকার সহায়তা দেয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পল্লী কর্মসংস্থান ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও পিকেএসএফ। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ২৫০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা