২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সিনহা হত্যাকে বিচ্ছিন্ন বিবেচনা করার সুযোগ নেই : টিআইবি

-

কক্সবাজারে সাবেক সেনাকর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনা ‘ক্রসফায়ার’ সংস্কৃতির অবারিত বিকাশের উদাহরণ মাত্র। এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এ মন্তব্য করে। ঘটনার বিশ^াসযোগ্য তদন্ত করে জবাবদিহি নিশ্চিতের পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধের উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছে।
টিআইবি গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সম্প্রতি কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে একজন সাবেক সেনাকর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনার বিশ^াসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে কঠোর জবাবদিহিতা নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই। এই ঘটনায় পুলিশের করা একাধিক মামলার সাথে সেনাবাহিনীর ‘প্রাথমিক তদন্তের’ বক্তব্য একেবারেই বিপরীত। এই বৈপরীত্যগুলো যথাযথভাবে আমলে নিয়ে গ্রহণযোগ্য তদন্ত করে জনগণকে জানাতে হবে আদৌতেই পুলিশ ‘আত্মরক্ষার্থে’ গুলি চালিয়েছিল কিনা। পাশাপাশি নিহতের সঙ্গী শিক্ষার্থী ও অন্যসব সম্ভাব্য সাক্ষীর নিরাপত্তাসহ সব অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
টিআইবি আরো জানায়, একে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই, বরং তা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংস্কৃতিকে স্বাভাবিকতায় রূপান্তরের একটি উদাহরণ মাত্র। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে সারা দেশে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানে গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুধু কক্সবাজার জেলায় পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সাথে শতাধিক ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৮৭ জন। অথচ দেশের সংবিধান সব নাগরিকের আইনি সুরক্ষা পাওয়ার যে অধিকার দিয়েছে, তাতে মাদক কারবারে জড়িত থাকলেই কাউকে বিনা বিচারে হত্যা করার কোনো অধিকার দেয়া হয়নি। নিহতদের বেশ কয়েকজন কোনোভাবেই ইয়াবা কারবারের সাথে জড়িত ছিলেন না, এমন তথ্য-প্রমাণ নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি চাঁদা দেয়া না হলে ‘ক্রসফায়ারে দেয়ার’ মতো অভিযোগও খুব কম নয়।
এই বর্বরতার দায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িতদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানই এড়াতে পারে না। দেশে ইয়াবা কারবারের লাগাম টানা যায়নি, ‘বড় বড় ক্রীড়ানকরা’ এক রকম ‘প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা’ নিয়ে বহাল তবিয়তে আছে। আর পুলিশ বাহিনী, সশস্ত্রবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত এলিট ফোর্স র্যাব, বিজিবি একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু ‘মাদক কারবারি’ ও বেশ কিছু ‘নিরপরাধ’ মানুষকে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় কোনো গ্রহণযোগ্য তদন্ত ও আইনগত পদক্ষেপ না নেয়ায় এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, কার্যত দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো বিনা বিচারে হত্যার লাইসেন্স বা দায়মুক্তি পেয়ে গেছে।
পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনাকর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনাকে এই সামগ্রিক পরিস্থিতির আলোকেই বিবেচনা করতে হবে। কারণ দেশের সংবিধান যেখানে কোনো নাগরিককেই বিনা বিচারে হত্যার অনুমোদন দেয় না, সেখানে ‘দায় মুক্তির’ অপব্যবহারের বিষয়টিও অবান্তর।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আশা করে সরকার এই ঘটনার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিনা বিচারে হত্যার সংবিধানবিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসার কার্যকর উদ্যোগ নেবে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মর্যাদা ও জনআস্থা সমুন্নত রাখার স্বার্থে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি এই মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত সাবেক সেনাকর্মকর্তার সহকর্মী তিন শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement