উপকূলে আমফানের আঘাত
বেড়িবাঁধ ভেঙে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত; ঝড়ে গাছচাপা পড়ে শিশু নিহত- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২১ মে ২০২০, ০০:০০
ঘূর্ণিঝড় আমফান স্থলভাগ অতিক্রম করে দুর্বল হয়ে গেছে। বাংলাদেশ উপকূলে নয়, এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের দিঘা উপকূলে প্রথম আঘাত করেছে। শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি অনেকটাই দুর্বল হয়ে স্থলভাগে উঠেছে। স্থলভাগে ওঠার সময় ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে গতি ছিল ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। তবে এটা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার সাথে গতি বাড়িয়ে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠেছিল। সাগরে অবস্থানের সময় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এক কিলোমিটার দূরে এটা ছিল ক্যাটাগরি-৫ হ্যারিকেন সম একটি সুপার সাইক্লোন। সাগরে অবস্থানকালে এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ওঠে ঘণ্টায় ২৪৫ কিলোমিটার, কিন্তু গতকাল বুধবার বিকেলে স্থলভাগে ওঠার সময় আমফান ক্যাটাগরি-২ মানের ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে যায়। এ দিকে আমাদের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় কয়েকটি জেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙে গেছে। পটুয়াখালীর গলাচিপায় ঝড়ের সময় গাছচাপা পড়ে ৫ বছরের একটি শিশু নিহত হয়েছে। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ঝড়ের তাণ্ডবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল বুধবার বিকেল ৪টার দিকে পশ্চিমবঙ্গের সাগর দীপের পূর্ব পাশ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাংলাদেশ ও ভারতের সুন্দরবন এলাকায় অবস্থান করছিল। আমফান আরো উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পরবর্তী ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল রেখা অতিক্রম করে। অবশ্য জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ হিমাওয়ারি-৮ থেকে প্রাপ্ত ইনফ্রারেড চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ মো: মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় আমফানের মূল কেন্দ্রের অগ্রভাগ বেলা ৩টা ১০ মিনিটের দিকে উপকূল অতিক্রম করে স্থল ভাগে প্রবেশ করেছে। ঘূর্ণিঝড় বৃত্তের অর্ধেক তখন পর্যন্ত সমুদ্রের ওপর অবস্থান করছিল।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহা বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৯ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম কালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলাগুলো এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আমাদের খুলনা ব্যুরো জানায়, বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় ৬০-৭০ কিলোমিটার গতিতে আমফানের অগ্রভাগ আঘাত হানে। একই সাথে ধীরে ধীরে আঘাতের মাত্রা বাড়ছে আমফানের। এসব তথ্য জানিয়েছেন সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী। তিনি বলেন, বিকেল ৪টার দিকে সাতক্ষীরা উপকূলে ২০-৩০ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানার পর ধীরে ধীরে মাত্রা বাড়ছে আমফানের। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিবেগে এগোচ্ছে। রাত ৮টার দিকে ঘণ্টায় গতিবেগ থাকবে ১৮০-২০০ কিলোমিটার।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঘূর্ণিঝড় আমফানের অগ্রভাগ সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা ও সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আঘাত হেনেছে। ওই এলাকায় বর্তমানে বাতাসের গতিবেগ ৬০-৭০ কিলোমিটার।
এ দিকে উপকূলীয় এলাকাসহ সাতক্ষীরায় ঝড় শুরু হয়েছে। ঝড়ের সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও হচ্ছে। এরই মধ্যে উপকূলের বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছেন। সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম আবুজর গিফারী বলেন, ঘূর্ণিঝড় আমফান উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হেনেছে। উপকূল অতিক্রম করে সামনে অগ্রসর হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়টি। তবে এখনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। উপকূলীয় এলাকার ১ লাখ ৪০ হাজার বাসিন্দাকে আমরা নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছি। এর আগে সকাল ৬টায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর ও বরগুনাসহ উপকূলীয় জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে। বুধবার সারারাত ধরে আমফান সুন্দরবন উপকূল অতিক্রম করবে।
এ দিকে আমফানের প্রভাবে গত মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে খুলনা অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০-১৫ ফুট বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
সাতক্ষীরার ৪৫ পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় মঙ্গলবার রাত থেকে থেমে থেকে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি হচ্ছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে সুন্দরবন উপকূল তৎসংলগ্ন নদ-নদী। জোয়ারের পানিও বেড়েছে। যত সময় বেশি হচ্ছে ততই তীব্র বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া। ঘূর্ণিঝড় আমফানের কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষ ছুটছে আশ্রয়কেন্দ্রে।
এ দিকে উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করছে স্থানীয় প্রশাসন ও সিপিপি সদস্যরা। তোলা হয়েছে লাল ফ্লাগ। উপকূলীয় দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা, পদ্মপুকুরসহ অন্য ইউনিয়নের সাধারণ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার কাজ করছে ১২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিস। ১০৩টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। এ পর্যন্ত সাতক্ষীরার ১৪৫টি সাইক্লোন শেল্টারসহ ১৮৪৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে দুই লাখ ১৩ হাজার ৪০০ জন আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষজনকে শুকনা খাবার দেয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার রাত থেকে উপকূলীয় উপজেলাতে বিদ্যুৎ বিছিন্ন আছে।
উপকূলীয় দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ও পদ্মপুকুরের ৫৫ হাজার মানুষের মধ্যে ১০ হাজার মানুষকে নদী পার নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। বাকি মানুষ স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্কুল, মসজিদসহ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে আছেন উপকূলের মানুষ। শ্যামনগর ও আশাশুনির অন্তত ৪৫টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, যা ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা ডাম্পিং করে মেরামত করেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
গাবুরা দ্বীপের ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম, জানান, আইলার পর থেকে শ্যামনগর ও আশাশুনির বেড়িবাঁধগুলোর অত্যন্ত নাজুক অবস্থা। যথাযথভাবে ওইসব বাঁধগুলো সংস্কার না হওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অমাবস্যায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধির সাথে ঝড়ের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষি ও সাদা সোনা খ্যাত চিংড়িখামার।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, জেলার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনির লক্ষাধিক মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পর্যাপ্ত মাস্ক ও গামছা দেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আমফানের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ প্রত্যেক ইউনিয়নে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
বরগুনায় বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ২০ গ্রাম
বরগুনা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে জোয়ারের চাপে বরগুনার চার স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে অন্তত ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের ও বাড়িঘর তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নম্বর বুড়িরচর ইউনিয়নের ছোট লবণগোলা গ্রামের একটি নির্মাণাধীন স্লুইস গেটের পাশের বেড়িবাঁধ ভেঙে পাঁচ গ্রাম প্লাবিত হয়। ৫ নম্বর আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়নের পায়রা নদী-সংলগ্ন বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে অন্তত আট গ্রাম। পাথরঘাটা উপজেলায় জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে আরো সাত গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সদর উপজেলার ছোট লবণগোলা ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল খালেক বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আমাদের এখানে বেড়িবাঁধ সংস্কারের পাশাপাশি একটি স্লুইস গেট নির্মাণের কাজ চলমান। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উঁচু জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে পাঁচ গ্রাম তলিয়ে গেছে।
বরগুনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কাওছার আহমেদ বলেন, বুধবার সকালে জোয়ারের চাপে জেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর আমরা পেয়েছি। আমরা ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামত করতে মাঠে নেমেছি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা আক্তার বুধবার ভোরে জানান, এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষ যেতে শুরু করেনি। উপকূলবর্তী চরম ঝুঁকিপূর্ণ কিছু এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে সামান্য সংখ্যক মানুষ আশ্রয় নেয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বসতির লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
জেলার পায়রা, বলেশ্বর ও বিষখালী নদীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়েছে। নদীতীরের বাসিন্দারা বলছেন, নদীতে ইতোমধ্যেই স্বাভাবিকের তুলনায় ৫ থেকে ৬ ফুট পানি বেড়েছে। বরগুনার বাইনচটকি ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা আল আমিন বলেন, বিষখালী নদীর এ এলাকায় জোয়ারের পানি বেড়ে ফেরির গ্যাংওয়ে সংযোগ সড়ক তলিয়ে গেছে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মো: মাহতাব হোসেন বলেন, এ মুহূর্তে বরগুনার প্রধান তিনটি নদীতে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এ দিকে বরগুনা সদর উপজেলার পরীরখাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শহীদুল ইসলাম (৬৪) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। তার মৃত্যুর বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ সেলিম নিশ্চিত করেছেন। বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার বলেন, মৃত শহিদুল ইসলাম আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। আমরা তার পরিবারকে যথাযথ সহায়তা প্রদান করব।
পটুয়াখালীতে ৩০ গ্রাম প্লাবিত
সিপিবি টিম লিডার নিখোঁজ
পটুয়াখালী ও গলাচিপা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে সাগর ও নদীর পানি বেড়ে কলাপাড়ার এক ইউনিয়নের ১৭টি গ্রাম ও রাঙ্গাবালীর ৮টি গ্রাম এবং গলাচিপার ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কলাপাড়ায় নৌকা ডুবে সিপিবি টিম লিডার শাহআলম নিখোঁজ রয়েছে। এ পর্যন্ত ৩ লাখ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় আমফানের কারণে পায়রা সমুদ্র বন্দর ও পটুয়াখালী জেলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মাসফাকুর রহমান জানান, মধ্য চালিতাবুনিয়া, বিবির হাওলা, চরলতা, গোলবুনিয়া, চর আন্ডা, খালগোড়া, গোঙ্গীপাড়া, চর কাশেম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৭৪০টি বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন চরের মানুষদের সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে আসা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষের খাওয়ার জন্য শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া যারা রোজা আছেন তাদের ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার মো: রবিউল ইসলাম জানান, লালুয়া ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ডের ১৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে তারা সাইক্লোন শেল্টারে অবস্থান করছেন। পানিবন্দী ওয়ার্ডগুলো হলো ইউনিয়নের ৪, ৫, ৬ ও ৮।
গলাচিপায় কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত
গলাচিপা উপজেলার চর কারফারমা, চর বাংলা, বড় কাজল, ছোট কাজল, ছোট শিবা ও পৌরসভার বেড়িবাঁধের বাইরের নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গলাচিপা উপজেলার সর্বত্র বাতাস বইছে এবং বৃষ্টি হচ্ছে।
জানা গেছে, উপজেলা গোলখালী ইউনিয়নের পূর্ব গোলখালী গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে বেশ কয়েকেটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার লোকজনকে দ্রুত সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে। এ দিকে রতনদী তালতলী ইউনিয়নের বদনাতলী ফেরিঘাটের উত্তর পাশের বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। এতে ওই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
চরকাজল ইউনিয়নের দফাদার মাসুদ পারভেজ জানান, চরকাজল ইউনিয়নের নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধ অনেকাংশে না থাকায় এসব জায়গা থেকে পানি প্রবেশ করছে। ১নং থেকে ৫নং ওয়ার্ড তলিয়ে গেছে। ফলে বড় কাজল, ছোট কাজল ও ছোট শিবার প্রায় ২৫ হাজার লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বেশি ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে আসার কাজ চলছে।
গলাচিপা পৌরসভার মেয়র আহসানুল হক তুহিন জানান, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গলাচিপা পৌরসভার বেড়িবাঁধের বাইরে বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় বাসিন্দাদের দ্রুত সরিয়ে আনার কাজ চলছে। সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেয়া সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।
গলাচিপা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস এম দেলোয়ার হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় উপজেলায় এখনো কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
হাতিয়ায় তলিয়ে গেছে অর্ধশতাধিক গ্রাম
নোয়াখালী ও হাতিয়া সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ঘূর্ণিঝড় প্রভাবে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়া প্রচণ্ড দমকা বাতাস, ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বর্ষণে উপজেলা নিঝুমদ্বীপ, নঙ্গলিয়া, নলেরচর, কেয়ারিংচর, নলচিরা, সুখচর, ঢালচর, তেল্লারচর, জাগলারচর, বদনারচর, তমরদ্দি, চরঈশ্বর, সোনাদিয়া ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের এসব স্থান ৪-৫ ফুট পানির নিচে রয়েছে।
মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে সাধারণ জোয়ারে চেয়ে ৪-৫ ফুট জোয়ারে তলিয়ে যায় নিঝুমদ্বীপ, চরঈশ্বর, নলচিরা, হরনী ও চানন্দী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদ। এ ছাড়া ও তমরদ্দি ইউনিয়নের জোড়খালি, কোরালিয়া, আঠারবেকী ও ক্ষিরোদিয়া, সোনাদিয়া ইউনিয়নের মাইজচরা, পশ্চিম মাইজচরা, হৈইকবাধা এবং জাহাজমারা ইউনিয়নের মোক্তারিয়া ঘাট এলাকা জোয়ারে তলিয়ে যায়। এ সময় প্রবল জোয়ারে নলচিরা ঘাট এলাকা থেকে ২০-২৫টি দোকান ঘর মালামালসহ ভেসে যায়। বৃষ্টির পানি ও জোয়ারে তলিয়ে যায় নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের শতাধিক কাঁচা ঘর। জোয়ারে ভেসে যায় হাতিয়ার প্রায় পাঁচ হাজার পুকুর ও ঘেরের মাছ। জোয়ারে চরঈশ্বর, সোনাদিয়া, সুখচর ইউনিয়নের প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়ক নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া দেড় শতাধিক গ্রামীণ কাঁচা সড়ক সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। নলচিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: হুমায়ুন কবির বাবলু ও নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন বলেন, জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়ায় কোনো প্রাণহানি হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রেজাউল করিম জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ও অমাবস্যার প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া, ভারী বর্ষণের কারণে ও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় জোয়ার অব্যাহত থাকায় দ্বীপের নিচু এলাকাগুলোর কিছু অংশ পানির নিচে রয়েছে। বেড়ির বাইরের ও চরাঞ্চলের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছে।
ঝালকাঠিতে ঝড়ে বসতঘর ও দোকান বিধ্বস্ত
ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠিতে বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। নদী উত্তাল থাকায় নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে নদীতে জোয়ারের পানি বাড়ছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। দুপুরে শহরের কলেজ খেয়াঘাট এলাকায় গাছ উপড়ে পড়ে একটি বসতঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝালকাঠি সদর ও অন্য তিনটি উপজেলার ২৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৩ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জেলা প্রশাসক মো: জোহর আলী জানিয়েছেন। সুগন্ধা ও বিষখালী নদী তীরের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাদ্যসামগ্রী দেয়া হচ্ছে। দুপুরে জেলা প্রশাসক নদীতীরের সাইক্লোন শেল্টারগুলো পরিদর্শনে যান। সেখানে আশ্রিত মানুষের সাথে কথা বলেন তিনি।
খুলনায় জোয়ারের পানি বাড়ছে
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় বুধবার সকাল থেকে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। দুপুরে একবার কিছুক্ষণ ভারী বর্ষণ হয়ে থেমে যায়। দমকা বাতাসের সঙ্গে থেমে থেমে ভারী বর্ষণ এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত অব্যহত ছিল।
ঝড়ো বাতাস শুরু হওয়ায় জনমনে আতঙ্ক বেড়ে গেছে। কয়রা ও দাকোপে নদীপাড়ের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের হারেজখালী, বিনাপানি, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাজীপাড়া বেড়িবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করার উপক্রম হয়। গাতিরঘেরি, গাববুনিয়া, গাজিপাড়া, কাটকাটা, কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রার পুরাতন লঞ্চঘাটসংলগ্ন এলাকা, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট, ঘাটাখালি, হরিণখোলা, গোবরা, মহারাজপুর ইউনিয়নের উত্তর মঠবাড়ি, দশালিয়া ও লোকা, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিবাড়ি, নয়ানি, শেখেরটেক এলাকার বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহা জানান, কয়রায় ১১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্রে খিচুড়ি রান্না করে খাবারের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ১৪টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা রয়েছে। কয়রা-পাইকগাছার সংসদ সদস্য মো: আক্তারুজ্জামান বাবু বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ বেঁড়িবাধ পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাউবো কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ জানান, এ পর্যন্ত ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছেছেন।
বরিশালে গুঁড়ি বৃষ্টি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশালে হঠাৎ দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ার পাশাপাশি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দুপুরে বরিশাল নগরীর নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এ দিকে মানুষের আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস।
বরিশাল আবহাওয়া অফিস জানায়, বরিশালে বাতাসের স্বাভাবিক গতিবেগ ঘণ্টায় রয়েছে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার, তবে মাঝে মাঝে সর্বোচ্চ গতিবেগ ৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠছে। বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গেল ২৪ ঘন্টায় ৪৯ দশমিক ০৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
বরিশাল জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলায় গত রাতে এক লাখ ৪২ হাজার মানুষ এবং বিভাগীয় প্রশাসন সূত্র জানায় বিভাগে ১০ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। তবে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে বিলম্ব হওয়ার খবরে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা অনেকেই বুধবার সকালে বাড়িতে ফিরে গেছেন।
কক্সবাজারে ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত
কক্সবাজার ও কক্সবাজার (দক্ষিণ) সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় আমফান ধেয়ে আসায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। সাগর উত্তাল রয়েছে। সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। সব নৌযান নিরাপদে রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চালু করা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। উপকূলের মানুষকে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি ২২১টি স্কুল-কলেজে নিরাপদে নিয়ে আনা হচ্ছে। সিপিপির ভলান্টিয়ার, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিংসহ নিচু এলাকার মানুষজনকে নিরাপদে নিয়ে আসতে সহায়তা করছে। শুকনো খাবার ও ত্রাণের ব্যবস্থার পাশাপাশি সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় ওষুধসহ মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১০ হাজার ভলান্টিয়ার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বাতাসের তীব্রতা বাড়ার পাশাপাশি থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
ইতোমধ্যে কক্সবাজারের প্রায় পাঁচ হাজারেরও অধিক ফিশিং ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে নোঙর করেছে। জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি ও সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য স্থানীয় আবহাওয়া দফতরের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। জেলা ও উপজেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সিভিল সার্জন ডা: মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় আটটি রেপিড রেসপন্স টিমসহ ৮৮টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একইভাবে জেলার সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেøক্সে কর্মরত সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলার ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিও বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। রামু সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ঘূর্ণিঝড়ের সময় নিরাপদ রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক।
ফরিদপুরে প্রস্তুত ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরের সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলায় খোলা হয়েছে ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র। এসব এলাকার কাঁচা ঘরবাড়ির বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে ও প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। জেলেদের বলা হয়েছে নদীতে মাছ ধরার জন্য না নামতে। বন্ধ রাখা হয়েছে সব ধরনের নৌ চলাচল। কৃষি ফসল যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ফরিদপুর আবহাওয়া অফিসের ইনর্চাজ সুরজুল আমিন জানান, মঙ্গলবার দুপুরে ও রাতে বৃষ্টি হয়। বুধবার থেমে থেমে হালকা বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাসুম রেজা বলেন, নর্থচ্যানেল, ডিক্রিরচর ও আলিয়াবাদ ইউনিয়নে চারটি ফ্ল¬াড সেন্টার প্রস্তুত করা হয়েছে। কাঁচা ঘরবাড়ির বাসিন্দাদের সেখানে আশ্রয় নিতে বলা হচ্ছে। সব প্রাইমারি স্কুলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আপৎকালীন সময়ের জন্য শুকনো খাবার হিসেবে চিঁড়া, মুড়ি ও গুড় মজুদ করা হয়েছে।
ডিক্রিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান মিন্টু বলেন, নৌ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জনগণকে সতর্ক করতে মাইকিং করা হচ্ছে। ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, জেলায় এ মৌসুমে ২৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে, যার ৫০ ভাগই এখনো কাটা হয়নি। এসব পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, জেলায় সব মিলিয়ে ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হয়েছে শুকনো খাবার তৈরি করে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করা মানুষের জন্য সরবরাহের জন্য।
চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুরে দুর্যোগ মোকাবেলায় নানা প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। চাঁদপুর সদর, হাইমচর ও মতলব উত্তর উপজেলার চরাঞ্চলের ১৮টি ইউনিয়নে সতর্কতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগে ইতোমধ্যে নদীতীরবর্তী ১২ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। মানুষকে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বাড়তি প্রবাহিত হচ্ছে। নদীতে চলাচলকারী বিভিন্ন নৌ-যান নিরাপদ স্থানে নোঙর করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো: মাজেদুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় আমফানের কারণে চাঁদপুরে চরাঞ্চলে সব মসজিদে মাইকিং করা হয়েছে। সব উপজেলার নির্বাহী অফিসারকে সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকার জন্যও বলা হয়েছে। নদীতীরবর্তী ১২ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।