অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে হবে প্রশাসনসহ সব খাতে
ঋণ প্রণোদনা নয়, মানুষকে নগদ অর্থ দিতে হবে; বৈদেশিক সহায়তা পেতে সরকারকে বড় উদ্যোগ নিতে হবে- হামিদ সরকার
- ২৮ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
শুধু করোনার কারণেই বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বৈরী প্রভাব কিন্তু পড়েনি। করোনা মহামারীর আগে থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দুর্বলতার লক্ষণ ছিল। করোনার প্রভাব সেই দুর্বলতার মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এর আগেই অর্থনীতির সবগুলো সূচকে আশার কোনো প্রতিফলন ছিল না। কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল। আমদানি-রফতানি কমছিল। বিনিয়োগ পরিস্থিতি অনেক আগে থেকেই কম ছিল। রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রায় ছিল বড় ঘাটতি। সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ছয় মাসেই বছরের লক্ষ্যমাত্রার পুরো ঋণ নিয়ে নিয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্যের সঙ্কট ছিল। করোনা আগের দুর্বলতাকে আরো বেশি দুর্বল করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক ও উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর নয়া দিগন্তের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এই অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সরকারের উচিত এখন নতুন রাজস্ব প্যাকেজ দেয়া। ঋণভিত্তিক প্রণোদনায় হবে না, তাই বড় আকারের রাজস্ব প্যাকেজ দিতে হবে। আর বেসিক ইনকাম গ্র্যান্ডের মাধ্যমে মানুষকে আগামী ৬ মাস টাকা দিতে হবে।
নিচে তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
নয়া দিগন্ত : কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে সমগ্র বিশ্বে অচলাবস্থা চলছে। আমাদের অর্থনীতিতে এর অভিঘাত কতটা গুরুতর হবে বলে আপনি মনে করেন?
ড. রাশেদ তিতুমীর: বাংলাদেশ তো অভিঘাতের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় অংশই হলো অনানুষ্ঠানিক খাত। অনানুষ্ঠানিক খাত মানেই হলো যারা দিন আনে দিন খায়। সেটা বাড়ির কাজের লোক, ছোট দোকানদার, ছোট কৃষক। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এমন মানুষের সংখ্যা হলো ৬ কোটির মতো। এদের সঞ্চয় নেই। যেহেতু এদের সঞ্চয় নেই তাহলে এরাই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে যে সামাজিক নিরাপত্তার জাল আছে, সেটার কোনোটা মওসুমভিত্তিক, কোনোটা দুর্যোগভিত্তিক এবং কোনোটা অপর্যাপ্ত। আবার এসবের সবগুলোর ওপর বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, তছরুপ ও রাজনৈতিকভাবে নির্ধারণের অভিযোগ আছে। সামাজিক নিরাপত্তার জালের অপর্যাপ্ততা ও সর্বজনীন না হওয়ার কারণে মানুষের সামনে যখন কোনো বহিঃশক বা ধাক্কা আসে তখন সেটা থেকে অভিযোজন করার কোনো সুযোগ থাকে না। যার কারণে বেশির ভাগ মানুষের ওপরে বড় ধরনের অভিঘাত হচ্ছে। কতগুলো উৎসবকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বেশ কয়টি খাতে মানুষ কাজ করে। সেখানে বড় রকমের ধাক্কা পড়েছে। খুচরা খাতে বড় ধরনের অভিঘাত পড়বে। মোট দেশজ উৎপাদনের বা জিডিপির হিসাব করলে ভোগ ব্যয় কমে যাবে। তার সাথে যোগ হবে, ইতোমধ্যে বিদেশ থেকে ফেরত আসা প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষের আয়হীনতা। তাহলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর একটা প্রভাব পড়বে। সরবরাহ চেইনটা ভেঙে পড়ায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভোগের ক্ষেত্রে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের মূল্য পাচ্ছে না। সে কারণে ভোগ ব্যয় কমে যাবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তৃতীয় থেকে চতুর্থ কোয়ার্টারে সব ধরনের ব্যয় হয়। সেটা এডিপি বা অন্যান্য সব ব্যয়ই। সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। আমদানি ও রফতানি দুটোই কমেছে। বিনিয়োগ আমাদের স্থবির ছিল। বিনিয়োগ, কনজামশন, সরকারি ব্যয়, আমদানি-রফতানি এই চারটিই কমেছে। আর এই চারটিকে নিয়েই আমরা জিডিপির হিসাব করি। সেখানে একটা বড় ধরনের চাপ পড়বে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। আমার হিসাবে এটা অনেক কমে যাবে। যেহেতু এই আঘাতটা হয়েছে ৭-৮ মাস পর, ওই সময় পর্যন্ত ঠিক আছে। শেষের তিন মাসে আঘাতের কারণে এটা কমে যাবে।
শুধু করোনার কারণেই বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বিপরীত প্রভাব পড়ছে তা কিন্তু নয়। আগে থেকেই অর্থনীতিতে দুর্বলতার লক্ষণ ছিল। করোনার প্রভাব সেই দুর্বলতার মাত্রাটাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এর আগেই অর্থনীতির সবগুলো সূচকে আশার ব্যাপার ছিল না। যেমন দারিদ্র্য হ্রাসের হার কমছিল। কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল। আমদানি-রফতানি কমছিল। বিনিয়োগ পরিস্থিতি অনেক আগে থেকেই কম ছিল। রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল পুরো বছরে, সেটা সে ছয় মাসেই নিয়ে নিয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্যের সঙ্কট ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ টার্গেট করেছিল। কিন্তু সেটা হয়েছে ১৩ শতাংশের কিছু বেশি। ফলে সঙ্কটগুলো আগেই ছিল। করোনা আগের দুর্বলতাকে আরো দুর্বল করেছে।
নয়া দিগন্ত : সঙ্কটের কারণে প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশীরা ফেরত আসছেন ও সামনে আরো আসবেন। এতে আমাদের বেকারত্ব বাড়বে। এটা সামাল দেয়ার ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী?
ড. রাশেদ তিতুমীর : ইতোমধ্যে বিদেশ থেকে ফেরত এসেছেন প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ লোক। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর একটা প্রভাব পড়বে। গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকাশক্তি ছিল আমাদের মাইগ্রেশন। যারা বেকার যুবক বা ছদ্ম বেকার বা আধা বেকার এর পরিমাণ বাংলাদেশে বিশাল। কৃষির ওপর নির্ভরশীলতা এখনো ৪০ শতাংশ। এই যে শ্রমিকরা মধ্যপ্রাচ্য ও অন্য দেশে কাজ করতে গেছেন। ওইসব দেশে তেলের দাম অনেক কমেছে। তেলের দাম কমে যাওয়ার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতির কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটবে। এর প্রভাব আমাদের মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসী শ্রমিকদের ওপরও পড়বে। কৃষক উৎপাদক হিসেবে খুবই কম দামে জিনিসপত্র বিক্রি করছেন।
নয়া দিগন্ত : করোনা-পরবর্তীতে বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ কী কী?
ড. রাশেদ তিতুমীর : অনুদানের মাধ্যমে ন্যূনতম ছয় মাস বেসিক আয় সমপরিমাণ নগদ অর্থ মানুষকে দিতে হবে। করোনার ব্যাপারে প্রচুর পরিমাণে টেস্ট করা দরকার। কারণ টেস্ট না করলে লকডাউন উঠানো যাবে না। টেস্ট এবং কন্ট্রাক ট্রেসিং করা দরকার। এখানে জীবনও দরকার, জীবনযাত্রাও দরকার। জীবনযাত্রাকে অব্যাহত রাখার জন্য সরকারকে বেসিক ইনকাম গ্র্যান্ড দিতে হবে।
সরকার তিনটা কাজ করলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারত, যা এখনো করা সম্ভব। যেখানে শ্রমিক উদ্বৃত্ত আছে সেখান থেকে শ্রমিক নিয়ে যেখানে শ্রমিক ঘাটতি আছে সেখানে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে যাতায়াত নিশ্চিত করে পাঠানোর পদক্ষেপ নেয়া। এর মাধ্যমে বোরো ধানসহ অন্যান্য শস্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করা। সরকারের উচিত কৃষিপণ্য কিনে আবার বিক্রি করা। তাহলে আগামী আউশটা চালু রাখতে বা উৎপাদনে যেতে পারবে কৃষক। কারণ টাকা না থাকলে কৃষক কিভাবে মাঠে ফসল ফলাবেন। আর পরিবহন সঙ্কট নিরসনে সরকার পরিবহন রিকুইজিশনের মাধ্যমে এই সহায়তা ঘাটতি অঞ্চলে দিতে পারত। কারণ পরিবহন ইউনিয়ন ও মালিকরা সবই সরকারপন্থী। এখানে পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। এটা এখনই করা দরকার। অর্থৎ পুরো কৃষি খাতকে টিকিয়ে রাখা ও মানুষের বেসিক আয় হিসেবে ১৫ হাজার টাকা ৬ মাসের জন্য দেয়ার ব্যবস্থা করা।
নয়া দিগন্ত : নতুন অর্থবছরের বাজেট আসছে। এ ক্ষেত্রে বাজেট তৈরিতে সরকারের কী কী পদক্ষেপ ও দৃষ্টিভঙ্গি সামনে রাখতে হবে বলে আপনি মনে করেন?
ড. রাশেদ তিতুমীর : মধ্যমেয়াদি তিন বছর মেয়াদে পরিকল্পনা নিতে হবে। এমটিবিএফের আলোকে বাজেট করতে হবে। স্বাভাবিকভাবে যে বাজেট করা হয়, সেটা করা যাবে না। করোনাভাইরাস প্রথম ধাক্কায় বোঝাল আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বলতে কিছুই নেই। পুরো বাংলাদেশ মিলে ১১ শ’ নিবিড় পরিচর্যাকারী বেড বা আইসিইউ বেড আছে। সেখানে বিশ্বমানের আছে মাত্র ১১২টা। ডাক্তারদের মধ্যে সংক্রমণ হার ৫ শতাংশ। কী রকম পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আছে। পরিচয়পত্রের আলোকে প্রতিটি মানুষকে জাতীয় স্বাস্থ্যকার্ডের আওতায় আনতে হবে। জাতীয়ভাবে ডাটাবেজ থাকলে এই রকম একটা ধাক্কা লাগবে না। অবহেলিত স্বাস্থ্য খাতের জন্য কমপক্ষে ২ শ’ থেকে আড়াই শ’ শতাংশ বেশি বরাদ্দ দিতে হবে।
আমাদের সামাজিক নিরাপত্তার জালকে জীবনচক্রভিত্তিক প্রাতিষ্ঠানিক করতে হবে। শিশু থেকে বয়স্ক পর্যন্ত প্রতিটি স্তরের চাহিদাভিত্তিক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে জিডিপির ৬ থেকে ৭ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে তাতে সেটায় রাজস্ব নীতির কোনো অংশ নাই। সেটার ব্যাপার একেবারেই নীরব। শিক্ষা খাত প্রমাণ করছে কী ধরনের যুব বেকার ও যুব দারিদ্র্য রয়েছে। আমরা কোনো টেস্টিং কিটই বের করতে পারিনি। সব দেশেই তাদের কায়দায় নিজস্ব জনশক্তি বা মেধা দিয়ে কিট আবিষ্কার করেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন সিস্টেম কাজ করছে না। এক দিকে দক্ষতা নেই, অন্য দিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বলতে কিছুই নেই। এটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। গণস্বাস্থ্য যেটা করেছে এটা তাদের করার কথা না। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের করার কথা ছিল। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দক্ষতা রিফর্ম করার জন্য বাজেট রাখতে হবে।
প্রণোদনা যা দেয়া হয়েছে তার পুরোটাই ঋণ। মওকুফের কিছু নেই। কৃষিকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের জন্য বরাদ্দ ১৫০ শতাংশের মতো বাড়ানো দরকার। আমরা সরবরাহ চেইন রেখেছি, কিন্তু তাতে উৎপাদন নেটওয়ার্ক যুক্ত করিনি। এ জন্য স্থানীয় দক্ষতা বাড়াতে হবে। চীন ও ভারতের সাথে আমাদের তো আমদানি নেটওয়ার্ক রয়েছে। উৎপাদনভিত্তিক নেটওয়ার্ক না। যেসব দেশে আমাদের রফতানি হয় সেটার শীর্ষ ১০টি দেশ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে। তাই বহুমুখীকরণ, উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা তহবিল হওয়া দরকার। সেটা হবে ম্যাচিং ফান্ড। সেই ম্যাচিং ফান্ডের শর্ত কঠিন হতে হবে। পালন করতে পারলেই টাকা দেয়া হবে। কারণ বাংলাদেশে টাকা দেয়া হয় গোষ্ঠীতন্ত্রের ভিত্তিতে। সেটা বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ ও ব্যাংকিং খাতে দেয়া হয়েছে। তাই অতীতের অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। খাতভিত্তিক এবং একটা কিস্তির শর্ত পরিপালন করার পর আরেক কিস্তির টাকা পাবে। এখানে শৃঙ্খলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশব্যাপী শিল্প অবকাঠামো সমন্বয় তহবিল করতে হবে। আমাদের শিল্প কেন্দ্রগুলো দেশব্যাপী করতে হবে। গ্রোথ সেন্টার করা দরকার। বিসিক, এসএমই, ইপিজেড ঠিক মতো কাজ করেনি। সমন্বিত লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পরিকল্পনা নিতে হবে। কথামালায় রাখলে হবে না। আমাদের সবুজশিল্প তহবিল করতে হবে।
নয়া দিগন্ত : ঘাটতি মোকাবেলায় বা সামাল দিতে কী করণীয় বলে মনে করেন?
ড. রাশেদ তিতুমীর : আমাদের অর্থায়নের উৎস হচ্ছে, এনবিআর, নন-এনবিআর, অনুদান ও ঋণ। রাজস্ব আয় কমে যাবে, আমদানি কমার জন্য শুল্ক বা ডিউটি কমে যাবে, আয়কর কমবে, মূল্য সংযোজন করও কমবে। ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার ইতোমধ্যে টাকা নিয়েছে। ফলে সেখানে তারল্য সঙ্কট আছে। সুদ হার কম বা অনুদান, পরিশোধ করার সময়সীমা অনেক দিন, গ্রেস পিরিয়ড আছে কিনাÑ এসব দেখে টাকা খুঁজতে হবে।
বন্ড ছেড়ে ও ব্যাংকিং খাত থেকে টাকা নেয়া হয়। কিন্তু এ দুটোতেই সুদহার বেশি। বাংলাদেশের ব্যয়ের এক নম্বর খাত হলো সুদ পরিশোধ খাত। আর সরকার সুদ পরিশোধেই বেশি অর্থ ব্যয় করে বাজেটে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেই টাকা নিতে হবে। কারণ এটা সরকারের দায় আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ। দুটোই হচ্ছে জনগণের প্রতিষ্ঠান। সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৬ মাস পর্যন্ত টাকা থাকে। প্রয়োজন হলে সরকারকে টাকাও ছাপতে হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নেয়া যাবে যতক্ষণ না পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি প্রকৃত মজুরি থেকে বেড়ে যাবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সরকারকে টাকা নিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাজেট ঘাটতি হতে পারে। এ জন্য অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কাটতে হবে। ক্যাপাসিটি চার্জের খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ বাদ দিতে হবে, সরকারের যে অতিরিক্ত জনবল প্রশাসনে আছে, সেটা ওএসডি হিসাবে হোক বা একই পদে বেশি লোক থাকা সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। করের আওতামুক্ত বিদেশী শ্রমিক আছে। এদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের কাছ থেকে দ্রুততার সাথে কর আদায় করা যেতে পারে। এখানে ৩০ শতাংশ কর হার ধরে ১ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আদায় করা সম্ভব।
নয়া দিগন্ত : সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা কতটা বাস্তবসম্মত? সামাজিক সুরক্ষায় সরকারের বরাদ্দ সঠিকভাবে মানুষ পাচ্ছে কি?
ড. রাশেদ তিতুমীর : এখানে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে সরকারের দায় কম। এটা সর্বোচ্চ ৩ হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে সরকারের ভর্তুকি। যদি প্যাকেজটার পূর্ণ ব্যবহার হয় তাহলে ওই পরিমাণ অর্থ সরকারকে দিতে হবে। কোনো ব্যাংক সঙ্কটকালীন সময় ঋণ দিতে উৎসাহিত হয় না। এখানে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে ঋণ যাবে না। কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতে সঠিক ব্যক্তি ও কৃষকদের চিহ্নিত করে মাঠ পর্যায়ে ঋণ না দেয়া হলে এই টাকা বড় পোলট্রি ও বড় অ্যাগ্রো প্রসেস শিল্পে চলে যাবে। ছোট ও প্রকৃত কৃষকের কাছে যাবে না।
নয়া দিগন্ত : সঙ্কট থেকে উত্তরণে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সহায়তার কথা বলেছে। বাংলাদেশ এখান থেকে কিভাবে লাভবান হতে পারে?
ড. রাশেদ তিতুমীর : বৈদেশিক সহায়তা পেতে সরকারকে বিরাট উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ সেখানে তো পরিশোধ করতে হবে না। কিন্তু এ ধরনের কোনো উদ্যোগ আমরা দেখছি না। সরকার যা চিঠি লিখেছে তা সবই বহুপক্ষীয় সংস্থার কাছে। খুবই স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেয়া। এটা দ্বিপক্ষীয় ও বিশেষ বিশেষ দেশের কাছে থেকে নিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চীন ও ভারতের কাছে ডেফার্ট পেমেন্ট ও পেমেন্ট হলিডে চাইতে পারে। তাহলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ পড়বে না।
নয়া দিগন্ত : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
ড. রাশেদ তিতুমীর : আপনাকেও ধন্যবাদ। আপনারাও ভালো থাকবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা