২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ক্ষুদ্র ঋণের কাক্সিক্ষত সুফল মানুষ পায়নি

উন্নয়ন মেলা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী
উন্নয়ন মেলা উদ্বোধন শেষে স্টল ঘুরে দেখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : বাসস -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে বলেছেন, কেউ কেউ এর প্রবক্তা হিসেবে নাম-যশ কামালেও বাস্তবতা হচ্ছে যে, দেশের জনগণ এর অতটা সুফল পায়নি। তিনি বলেন, ‘এক সময় আমরা দেখেছি ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে (কর্মসূচি) কেউ কেউ খুব বাহবা নেয়ার চেষ্টা করেছেন। এক সময় আমরাও এটাকে সমর্থন দিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম যে, এর মাধ্যমে বুঝি মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে পারবে।’ ‘কিন্তু যখন আমরা বিষয়টা আরো গভীরভাবে দেখলাম, তাতে দেখলাম, আসলে এর মাধ্যমে দারিদ্র্য ঠিক বিমোচন হয় না। দারিদ্র্য লালন-পালন হয়’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত ‘উন্নয়ন মেলা ২০১৯’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং পিকেএসএফের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে সাত দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র ঋণটা স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। যদিও আমাদের দেশে কেউ কেউ ক্ষুদ্র ঋণের প্রবক্তা সেজে বিশ্বে ভালো নামটামও করে ফেলেছেন। কিন্তু দেখা গেছে হয়তো নিজে যতটা নাম কামিয়েছেন দেশের মানুষ ততটা শুভফল পায়নি, এটা হলো বাস্তব।’ বঙ্গবন্ধু বিআরডিবির মাধ্যমে এই ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া শুরু করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষকে কিভাবে সমবায়ের মাধ্যম একত্রিত করে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করে তাদের কিভাবে দারিদ্র্যসীমার থেকে বের করে আনবেন সেই পরিকল্পনাটাই জাতির পিতা নিয়েছিলেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন এবং পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মইনুদ্দিন আবদুল্লাহ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ বিদেশী কূটনীতিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে কৃষকদের কল্যাণ ও দারিদ্র্য নিরসন এবং কৃষির উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী এই সম্মাননা স্মারক মতিয়া চৌধুরীর হাতে তুলে দেন। পুরস্কার হিসেবে একটি সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট এবং ৫০ হাজার টাকার চেক দেয়া হয়।
গ্রামীণ এলাকা থেকে পিকেএসএফের সহযোগী প্রতিষ্ঠানসহ, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, গবেষণা ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং সেবামুখী সংগঠনসহ ১৩০টি সংস্থার মোট ১৯০টিরও বেশি স্টল মেলায় স্থান পেয়েছে। মেলায় রয়েছে তৃণমূল পর্যায়ের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কৃষি, খাদ্য এবং প্রচলিত পণ্য। এছাড়া সাত দিনে পাঁচটি সেমিনারও অনুষ্ঠিত হবে মেলায়। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে।
জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করে গ্রামীণ জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার সরকারের চালু করা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির বিভিন্ন কর্মসূচি, যেমনÑ বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ততা ভাতা চালু, গরিবদের মাঝে খাদ্য বিতরণ, কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে এবং স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ, বর্গাচাষিদের বিনা জামানতে এবং স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের মতো কর্মসূচির উল্লেখ করেন।
তার সরকারের সময়ে দেশের অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য বহির্বিশ্বে তাকে অনেক অনুসন্ধিৎসু প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে গেলে আমাকে প্রশ্ন করা হয়Ñ বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির ম্যাজিকটা কী?’ ‘আমি তাদের বলি, আসলে কোনো ম্যাজিক নেই। দেশকে ভালোবাসা, দেশকে জানা এবং দেশের মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করাÑ এটাই হলো মূল ম্যাজিক,’ যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, পিকেএসএফকে ক্ষুদ্র ঋণের গণ্ডি থেকে বের করে এনে সামগ্রিক উন্নয়নে কাজে লাগাচ্ছে তার সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে পিকেএসএফ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে দেশে-বিদেশে একটি শীর্ষস্থানীয় উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে এক কোটি চল্লিশ লাখ দরিদ্র ও নিম্নআয়ের পরিবারকে পিকেএসএফ বিভিন্ন কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ফাউন্ডেশন দেশের ২০২টি ইউনিয়নে ‘সমৃদ্ধি’ নামক কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষাসহ জীবন ও জীবিকা-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সমন্বিত করে একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। বয়স্ক মানুষের জীবন-মান উন্নয়নে বাস্তবায়ন করছে ‘প্রবীণ কর্মসূচি’।
আয়কর মেলায় রিটার্ন দাখিল প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আয়কর মেলায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সাবেক কর কমিশনার সিদ্দিক হোসেন চৌধুরী এই রিটার্ন দাখিল করেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) মো: মোশাররফ হোসেন ভুইয়া এবং সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
টেস্ট ম্যাচ দেখতে কলকাতা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার টেস্ট ম্যাচ দেখতে আগামী ২২ নভেম্বর কলকাতা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিনই কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। এ সময় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করবেন।
গত বুধবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনাকে ইডেন গার্ডেন্সের টেস্ট ম্যাচ উপভোগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এর আগে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) প্রধান সৌরভ গাঙ্গুলী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার টেস্ট ম্যাচ দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি থাকায় নরেন্দ্র মোদি ২২ নভেম্বর কলকাতায় থাকতে পারছেন না।
ইডেনে প্রথমবারের মতো দিবা-রাত্রি টেস্ট ম্যাচ খেলবে উভয় দল। গোলাপি বলে এই খেলা শুরু হবে ভারতীয় সময় বেলা ১টায়। প্রধানমন্ত্রী ২২ নভেম্বর কলকাতায় গিয়ে সন্ধ্যায় ঢাকা ফিরে আসবেন।
আমিরাত সফর : দুবাই এয়ার শোতে যোগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল শনিবার সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) যাচ্ছেন। এ সফরকালে তিনটি চুক্তি সই হবে। এগুলো হলো বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও আমিরাত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ ও আমিরাত অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি এবং দুবাইতে বাংলাদেশ মিশন নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দসংক্রান্ত প্রটোকল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিমান বাহিনীর প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন।


আরো সংবাদ



premium cement