দুধের পরীক্ষা ও রিটে কারসাজি আছে কি না খতিয়ে দেখা উচিত : প্রধানমন্ত্রী
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ৩১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
দুধের পরীক্ষা ও রিটে কোনো কারসাজি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি জানি না হঠাৎ করে একজন প্রফেসর সাহেব কী পরীক্ষা চালালেন, আর এই পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে আদালতে রিট হলো। একে একে সব কোম্পানির দুধ উৎপাদন বন্ধ। আমদানি করা গুঁড়াদুধের ব্যাপারে কোনো পরীক্ষা হয় না। তাই গুঁড়াদুধ আমদানিকারকদের কোনো কারসাজি এখানে আছে কি না বা তারা কোনোভাবে উৎসাহিত করছে কি না তা আমাদের দেখা উচিত।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে এক জরুরি সভায় মোবাইল ফোনে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় গুজব, গণপিটুনি, ডেঙ্গু ও বন্যা পরিস্থিতি নিয়েও নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গবাদি পশু রোগমুক্ত রাখতে অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয়। সে ক্ষেত্রে দুধে কিছুটা অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি থাকতে পারে। তবে দুধের যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকার কাজ করছে। একে একে সব কোম্পানির দুধ উৎপাদন বন্ধ। এতে দুধের ঘাটতিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। আবার যারা খামার করছে তারাই বা কিভাবে জীবনযাপন করবে, আর গরুকেই বা কী খাওয়াবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন তাদের এ বিষয়ে ভাবা উচিত, দেখা উচিত। হঠাৎ একটা গুজব ছড়িয়ে রফতানি বাধাগ্রস্ত করা বা দেশের উৎপাদিত পণ্যের মান সম্পর্কে কথা বলা- এতে দেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট হয়। কাজেই যারা গুজব ছড়াবে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যারা খামার করেছে বা গরু পালন করছে, তাদের কাছ থেকে দুধ কেনা হচ্ছে। এ মানুষগুলোর কাছে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য গরু কিনে দিয়েছি। তারা যদি দুধ বিক্রি করতে না পারে, অর্থ জোগাড় করতে না পারে, তাহলে গরুকে কী খাবার দেবে আর নিজে কিভাবে খাবার কিনে খাবে। এ বাস্তবতাটা চিন্তা করা দরকার।’
বিদেশ থেকে যেসব দুধ আসে সেগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে কি না জানতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘যিনি দেশের দুধ পরীক্ষা করেছেন তিনি বিদেশ থেকে আমদানি করা গুঁড়াদুধ পরীক্ষা করেছেন কি না? আমার মনে হয়, তিনি এটা কখনো করেননি। আমি অনুরোধ করব, তিনি যেন বিদেশ থেকে আমদানি করা গুঁড়া দুধও পরীক্ষা করে দেখেন। আমরা আমদানিনির্ভর থাকতে চাই না, স্বনির্ভর থাকতে চাই। আমরা দেশের চাহিদা দেশে উৎপাদিত পণ্য দ্বারা মেটাতে চাই।’
গুজব ও গণপিটুনি ইস্যুতে দেশবাসীকে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাউকে সন্দেহ হলে পুলিশের হাতে তুলে দিন। মিডিয়ার যারা আছেন তাদের বলব, অহেতুক ভুল তথ্য ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। গুজব ও ভুল তথ্য প্রচারকারী এবং গণপিটুনিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভৌগোলিক কারণে আমাদের দেশে বিভিন্ন সময় নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায়। বর্তমানে বেশ কয়েকটি জেলায় যে বন্যা দেখা দিয়েছে, তা সামাল দিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্য দায়িত্বশীলরা কাজ করছে। তা ছাড়া আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বন্যাকবলিতদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বন্যা ও নদীভাঙন থেকে রক্ষা পেতে এবং নদীগুলোতে পানি ধরে রাখতে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার নদীগুলো ড্রেজিংয়ের কাজ করছে। নদীর পানি ধারণক্ষমতা বাড়াতে পারলে নদীভাঙন ও বন্যাপ্রবণতা কমবে এবং শুষ্ক মৌসুমেও পানির ঘাটতি কমবে।’
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও এনামুল হক শামীম, কার্যনির্বাহী সদস্য কামরুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানসহ দলীয় সংসদ সদস্য এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।
প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ডের সাক্ষাৎ : কমনওয়েলথ ‘ব্লু চার্টার’ বাস্তবায়ন এবং জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে কমনওয়েলথে নেতৃত্ব প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থার মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসি। গত সোমবার সন্ধ্যায় (লন্ডনের স্থানীয় সময়) লন্ডনে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে এই আহ্বান জানান। কমনওয়েলথ মহাসচিব বলেছেন, ‘কমনওয়েলথ ব্লু চার্টার এবং জলবায়ু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেয়া উচিত।’
‘কমনওয়েলথ ব্লু চার্টার’ হচ্ছে মহাসাগর সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান এবং টেকসই মহাসাগর উন্নয়নের লক্ষ্যে কমনওয়েলথ সদস্যভুক্ত ৫৩টি সদস্য রাষ্ট্রের পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার একটি অঙ্গীকারনামা। প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ মহাসচিবের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন এবং বলেছেন, ‘তার সরকার এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।’ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এবং কমনওয়েলথ মহাসচিব তথ্যপ্রযুক্তি খাত এবং এসডিজি বাস্তবায়নে অগ্রগতি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চায় বাংলাদেশ
বাসস জানায়, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার দীর্ঘায়িত এই রোহিঙ্গা সমস্যাকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই নিষ্পত্তি করতে চায়। লন্ডনের স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় লর্ড আহমেদ অব উইম্বলডন সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। ‘প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে এ কথা জানান। লর্ড আহমেদ বর্তমানে যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ ও জাতিসঙ্ঘবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
যুক্তরাজ্য সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ নিযুক্ত হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূতদের সম্মেলন এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানে যোগদান উপলক্ষে গত ১৯ জুলাই রাষ্ট্রীয় সফরে লন্ডন পৌঁছেন।
লন্ডন থেকে টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, লর্ড আহমেদ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সকল প্রকার সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন এবং বিষয়টি নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অবগত রয়েছেন বলে জানান। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও লর্ড আহমেদ উভয়ই একমত পোষণ করে বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং সন্ত্রাসবাদকে ইসলাম কখনো সমর্থন করে না।’ এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে একত্র করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব ধর্মমতের মানুষ বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে।’ ইসলামের প্রকৃত মূল্যবোধ জনগণের কাছে তুলে ধরতে তার সরকার সারা দেশে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার গড়ে তুলছে বলেও শেখ হাসিনা লর্ড আহমেদকে অবহিত করেন। প্রধানমন্ত্রী ও লর্ড আহমেদ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন লর্ড আহমেদ। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একমাত্র শিক্ষাই নারীর ক্ষমতায়নের নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে।’
নারীর ক্ষমতায়নে তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬০ শতাংশ শিক্ষক নারীদের থেকে নিয়োগ করছে।’ বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে উভয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বৈঠকে আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ‘আগামীর দিনগুলোতে এই বন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে।’
লর্ড আহমেদের সাথে তার সহধর্মিণী সিদ্দিকা আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো: নজিবুর রহমান এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা