সারা বছর যদি এমন হতো!
- হামিম উল কবির
- ২৮ জুন ২০১৯, ০০:০০
গত পাঁচ দিনে নকশা অনুমোদন, ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র প্রদানে বিস্মিত হওয়ার মতো সেবা দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। অন্য সময় রাজউক থেকে একটি ইমারত নির্মাণের অনুমতি পেতে কমপক্ষে ৪৫ দিন সময় তো লাগেই; কেউ কেউ এক বছরেও পান না। কিন্তু সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে ২২ জুন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ২৭ জুন পর্যন্ত পাঁচ দিনে ইমারত নির্মাণের জন্য নকশা অনুমোদন করা হয়েছে ১৮৮টি। প্লানিং বিভাগ ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র দিয়েছে ২৩০টি।
সারা বছরে যা হয় না এই পাঁচ দিনেই রাজউক তা করে দেখিয়েছে। এর বাইরে এস্টেট ও ভূমি শাখা থেকে ৬৯টি নামজারি, ৩২টি প্লটের দখল হস্তান্তর, ৮১টি প্লটের আম-মোক্তার, হস্তান্তর, লিজ ডিড, হেবা, সাতটি নকশা অনুমোদনের ছাড়পত্র, ১০টি ঋণ গ্রহণের অনাপত্তিপত্র, হাতিরঝিল ফ্ল্যাটের সাময়িক বরাদ্দপত্র ৩২টি, উত্তরা এপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হয়েছে ১৭৫টি।
এই অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে এতোগুলো সেবা দেয়া সম্ভব হলো জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ কামরুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘আন্তরিকতা থাকলে অল্প দিনের মধ্যেই এ ধরনের সেবা দেয়া সম্ভব।’ এর আগে রাজউক থেকে এক বছরেও সেবা পাওয়া যেত না, এত দীর্ঘ সূত্রতার কারণ কি ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করলে সব সময়ই স্বল্প সময়ের মধ্যেই এমন সেবা দেয়া সম্ভব।’ সামনের দিনগুলোতে এমন সেবা কি আপনারা দিতে পারবেন, প্রশ্নের উত্তরে কামরুল ইসলাম জানান, ‘জানি না তবে আমার পক্ষ থেকে আন্তরিকতার অভাব থাকবে না।’
রাজউক কম্পাউন্ডে সামিয়ানা টানিয়ে সেবা সপ্তাহে সেবা দিয়েছে রাজউক। পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেল সত্যিই সেবাপ্রত্যাশীদের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক ছিল রাজউকের প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। যে রাজউকের লোকদের সাথে কথাই বলতে পারত না সেবাপ্রত্যাশীরা; গত পাঁচ দিনে তাদের মধ্যে ছিল বিস্মিত হওয়ার মতো আন্তরিকতা। এই প্রতিবেদক সেবাপ্রত্যাশী সেজে দীর্ঘ সময় কথা বলেছেন রাজউক প্রকৌশলীদের সাথে। সব প্রশ্নের উত্তর দিতে তাদের মধ্যে বিরক্তি বোধ ছিল না। শেষে সাংবাদিক পরিচয় পেলে ওই কর্মকর্তার মন্তব্য ‘আমরা সারা বছরই এমন থাকতে চাই সেবাপ্রত্যাশীদের কাছে।’
তবে রাজউকের বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যে সেবাগুলো দেয়া হয়েছে গত পাঁচ দিনে তার বেশির ভাগেরই গ্রাউন্ড ওয়ার্ক আগে করা ছিল। অবশিষ্ট সেবার জন্য রাজউকের কর্মকর্তারা বেশ পরিশ্রম করেছেন সেবা সপ্তাহ সফল করতে।
সেবা নিতে এসেছিলেন উত্তরখানের গোলাম হাবিব উল্লাহ নামে এক ভূমি মালিক। তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, রাজউক কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা দেখে বিস্মিত হয়েছি। জানি না সারা বছর এমন সেবা পাবো কি না। গৃহায়ন মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই কিছু পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। হাবিব উল্লাহ বলেন, আশা করছি দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত এই জাহাজটি তিনি তীরে টেনে তুলতে সক্ষম হবেন।’
সেবা সপ্তাহের সমাপনী উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজউক চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা রাজউককে জনবান্ধব, স্বচ্ছ, দীর্ঘসূত্রতামুক্ত একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাই। আরো বেশি সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে রাজউককে বিকেন্দ্রীকরণের কথা ভাবছি। এত বড় ঢাকায় একটি রাজউকে বসে সব কিছু পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এই উদ্দেশ্যে রাজউকের সব জোনকে শক্তিশালী করতে চাই। স্তরভিত্তিক পরিসর বাড়ার কারণে রাজউককে বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজউকের চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি স্থপতি জালাল আহমেদ এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশের সভাপতি প্রকৌশলী মো: আব্দুস সবুর। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন রাজউকের সদস্য মো: আমজাদ হোসেন খান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা