শুরু হয়েছে ঈদ কেন্দ্রিক চাঁদাবাজি
- আবু সালেহ আকন
- ২১ মে ২০১৯, ০০:০০
ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার মোড়ে বাচ্চু মিয়ার ফলের দোকান। গতকাল দুপুরের দিকে দোকানের সামনে ঝগড়া দেখে উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়। ১০০ লিচুর কথা বলে বাচ্চু মিয়া লিচু দিয়েছেন ৭৩টি। এই নিয়ে ক্রেতার সাথে বাচ্চু মিয়া ও তার দোকান কর্মচারীদের ঝগড়া! বাচ্চু মিয়া জানালেন, কম না দিয়ে উপায় নেই। হিসেবের সময় আড়তে ফল কম দেয়, রাস্তায় রাস্তায় চাঁদা দিতে হয়, দোকান করতে গেলে পুলিশকে পয়সা দিতে হয়। যা উসুল করতে হয় ক্রেতাদের কাছ থেকে। সেজন্য ১০০ লিচুতে ২৭টি লিচু কম! এত চোখের সামনে ডাকাতি! উপস্থিত পথচারীদের সবাই দোকানির এই কাণ্ডে হতবাক হয়ে যান। উল্টো দোকানিরা মিলে ওই ক্রেতাকেই নাজেহালের চেষ্টা করছিল।
কয়েকদিন আগেও রাজধানীর ফুটপাথগুলোতে হকার ছিল না। এখন আবারো হকার বসা শুরু হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় ফুটপাথ ছাড়িয়ে রাস্তাও দখল হয়ে গেছে। রাস্তা ও ফুটপাতে বসার জন্য এরা সবাই লাইনম্যানদের চাঁদা দিয়েছেন।
রাজধানীতে বেশ কয়েক মাস ধরেই ফুটপাথ হকারমুক্ত ছিল। হঠাৎই ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর প্রায় সবগুলো ফুটপাথেই বসতে শুরু করেছে হকার। কোনো কোনো এলাকায় টাকার বিনিময়ে এই হকার বসানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীর মতিঝিল এলাকার এক হকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘টাকা না দিলে কী আর ফুটপাথে বসা যায়!’ আশপাশের আরো কয়েক হকার বললেন, আসলেই তাই। টাকা না দিলে ফুটপাথে বসা যায় না। ফুটপাথে বসতে হলে লাইনম্যানদের টাকা দিতে হয়। লাইনম্যানরাই ঠিক করে দেন কে কোথায় বসবে। বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম নয়া দিগন্তকে বলেন, চাঁদা নিয়েই লাইনম্যানরা হকারদের ফুটপাথে বসাচ্ছে। আগে যেসব লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজ ছিল, এখনো তারাই আছে। হকারদের নতুন করে রাস্তায় বসানোর নাম করে তারা অসহায় মানুষগুলোর কাছ থেকে চাঁদা নিচ্ছে। এককালীন তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হচ্ছে। আবার প্রতিদিন লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজরা তাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
রাজধানীর মানিকনগর কাঁচাবাজারের কয়েক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। এর আগেও তারা চাঁদা নিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে তারা অনেকটাই বেপরোয়া।
ঈদকে সামনে রেখে কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও চাঁদাবাজি শুরু করেছে। রাজধানীর রামপুরা এলাকার কাইল্যা পলাশ ও সুজন সম্প্রতি বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে জেল থেকেই ফোন করেছে বলে ব্যবসায়ীদের কয়েকজন উল্লেখ করেন। ভুক্তভোগীরা বলেন, কাইল্যা পলাশ আর সুজন এর আগেও তাদের কাছ থেকে মোবাইলে হুমকি দিয়ে টাকা নিয়েছে। তারা জেল থেকেই ফোন করে। আর তাদের লোকজন গিয়ে টাকা নিয়ে আসে। এবার তাদের চাহিদা আরো অনেক বেশি বলে ওই ব্যবসায়ীরা বলেন। ব্যবসায়ীরা কাইল্যা পলাশ ও সুজনের ব্যবহৃত দুটো মোবাইল নম্বরও এই প্রতিবেদককে দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেন, শুধু কাইল্যা পলাশ আর সুজনই নয়, অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসীই জেল থেকে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের অনেকেই এরই মধ্যে সাধারণ মানুষের কাছে ঈদকে সামনে রেখে চাঁদা চাওয়া শুরু করেছে।
এদিকে, চাঁদাবাজি নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে পুলিশকে জানালে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা