ফ্যাসিবাদী নয় আমরা মানবিক সরকার গঠন করব
- পঞ্চগড় প্রতিনিধি
- ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদী সরকার নয়, আমরা কুরআনের আলোকে মানবিক সরকার গঠন করতে চাই। ছোট একটি দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ বসবাস করে। কিসের সংখ্যালঘু আর কিসের সংখ্যাগুরু! সবাই এ দেশের নাগরিক। যে দেশের মানুষের ঐক্য নেই, সে দেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে না। গতকাল বুধবার পঞ্চগড় ঐতিহাসিক চিনিকল ময়দানে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও পঞ্চগড় জামায়াতের আমির অধ্যাপক মো: ইকবাল হোসাইনের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মো: আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দীন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, রংপুর-দিনাজপুর জেলার পরিচালক অধ্যাপক মাওলানা মো: আব্দুল হাকিম, জাগপার সভাপতি ব্যারিস্টার তাসনিয়া প্রধান, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো: দেলোয়ার হোসেন, জেলা নায়েবে আমির মাওলানা মো: মফিজ উদ্দীন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পক্ষে রতন চন্দ্র রায় প্রমুখ।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, আমার পরিচয় আমি একজন মুসলমান। কিছু লোক থাকতে পারে যারা কোনো ধর্মের বিশ্বাসী নয়। তারা কাফের। আমরা সবাইকে নিয়েই চলব। কেউ যেন কারো দোষত্রুটি খোঁজাখুঁজি না করে। তিনি বলেন, পঞ্চগড় চিনিকল আবার চালু করা হোক, এ জেলা একটি কৃষিপ্রধান অঞ্চল। সকাল এবং বিকেল বেলা সারি সারি সবজি ও তরি-তরকারি বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার জন্য তৈরি থাকে। এখানে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলে কৃষকরা উপকৃত হবেন।
তিনি বলেন, আমি আপনাদের মতো একজন পাবলিক। তবে আমাকে আল্লাহ তায়ালা একটি গলা দিয়েছে। যে দাবিটাকে আমরা যথাযথ মনে করি তা বলার চেষ্টা করি। এদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ যদি দেশপ্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে তবে আপনাদের দাবির সাথে আমরাও একমত। এ দেশের যেসব জায়গা উন্নয়নবঞ্চিত প্রথমে সেসব জায়গার উন্নয়ন করতে হবে। আগে দেখা হবে বঞ্চিত এলাকা। চীন-বাংলাদেশ যৌথভাবে একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু কোন এক অপশক্তির কারণে তা বন্ধ রয়েছে।
জামায়াত নেতা বলেন, আমি মা-বোনদের বলতে চাই দেশের উন্নয়নে কাজ করবেন। আপনাদের জন্য মর্যাদা ও নিরাপত্তা থাকবে। আমি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বলতে চাই আল্লাহ যদি এ দেশকে পরিচালনার দায়িত্ব আমাদেরকে দেন তাহলে এমন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করব যেখানে তোমরা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে চিনতে পারবে এবং দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ কারিগর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। শিক্ষাসনদ আসার সাথে সাথে কাজ এসে যাবে।
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মো: আব্দুল হালিম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চগড়ের পাথর শিল্প এবং চিনিকল শিল্পকে ধ্বংস করেছে। চা চাষিরা চায়ের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। তা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। যারা রক্ত দিয়ে দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছেন, তাদেরকে আমরা ভুলব না। আওয়ামী সরকার ২০০৯ সালে বিডিআরের ৫৭ জন অফিসারকে হত্যা করেছে, আমরা এসব খুনিদের বিচার চাই। ফ্যাসিবাদী সরকার জামায়াতকে ধ্বংস করার জন্য সব ধরনের ষড়যন্ত্র করেছে। তবুও আল্লাহর রহমতে জামায়াত নিশ্চিহ্ন হয়নি।
‘কেউ আমাদের ভয় দেখাবেন না’
নীলফামারী প্রতিনিধি জানায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, দুর্নীতি ও দুঃসাশন মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। তিনি বলেন, কেউ আমাদের চোখ রাঙ্গাবেন না, ভয় দেখাবেন না, আপনাদের ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নাই। যে দলের নেতারা হাসতে হাসতে ফাঁসির পাটাতনের ওপর দাঁড়াতে পারে, তাদের ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। তারা কখনো কোথাও কারো কাছে মাথা নত করেনি আল্লাহ ছাড়া। আমরা মাথা নত করব শুধু আল্লাহতায়ালার কাছে। আমরা ১৮ কোটি মানুষের মাথা সোজা করে দাঁড়ানোর একটা স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে চাই। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।
তিনি পঞ্চগড় জেলায় চিনিকল মাঠে জনসভা শেষে ফেরার পথে গতকাল বিকেল ৫টার দিকে নীলফামারীর ডোমার উপজেলা পরিষদ মাঠে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ৫ আগস্টের পর খুনি, জুলুমবাজ, স্বৈরাচারী, গুম, হত্যাকারী ও ধর্ষকরা পালিয়ে গেছে। এখন আমরা যারা আছি স্বৈরাচারের নির্যাতনের শিকার হওয়া মানুষজন। তিনি বলেন, স্বৈরাচারের নির্যাতনে আমরা অসংখ্য সহকার্মীকে হারিয়েছি, অনেকে পঙ্গু হয়েছে, অনেকে আহত হয়েছে। সেই কষ্ট বুকে নিয়ে আমরা আছি।
তিনি বলেন, আগের চাঁদাবাজরা গিয়েছে। এখন সর্বস্তরের মানুষ বলছে শুধু হাত বদল হয়েছে। মানুষ বলছে, চাঁদার রেড একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়ী বলছেন, আগে মাসে মাসে ওই লুটেরা চাঁদা নিতে আসত, এখন যারা আসে তারা বলে রেড বাড়িয়ে দেন। ব্যবসায়ীরা জিজ্ঞেস করেছিল রেড কেন বাড়াতে হবে। তখন ওরা বলে স্বৈরাচাররা তো সাড়ে পনেরো বছর খেয়েছে, আমাদের কপালে কয়দিন আছে জানি না। যে কয়দিন আছি সে কয়দিন আমাদের পেটটা ভরিয়ে নিতে হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর : দুর্নীতি, দুঃশাসন, টেন্ডার ও চাঁদাবাজমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ নতুন বাংলাদেশ গড়া কেবল জামায়াতে ইসলামীর পক্ষেই সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
রাজধানীর একটি মিলনায়তনে রামপুরা উত্তর থানা জামায়াত আয়োজিত ‘পবিত্র মাহে রমজানের তাৎপর্য ও জাকাত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। থানা আমির ফজলে আহমদ ফজলুর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি হাফিজুর রহমানের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান।
মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, সুদভিত্তিক অর্থনীতির কারণেই আমাদের জাতীয় অর্থনীতি আজ বিপর্যস্ত। এতে পুঁজিপতির পুঁজি বাড়ছে; দরিদ্ররা হয়ে পড়ছেন আরো হতদরিদ্র। দুর্নীতিও বাড়ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। তাই দেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে দেশকে দুর্নীতি ও বেকারত্বমুক্ত করতে জাকাত ও কর্জে হাসানাভিত্তিক ইসলামী অর্থনীতি চালুর কোনো বিকল্প নেই।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিপ্লবীদের সম্মাননা : জুলাই-আগস্টের বিপ্লবকে সমুন্নত রেখে শহীদ ও আহতদের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারি পূর্ব লন্ডনের একটি হলরুমে ‘জাস্টিস ফর জুলাই ইউকে’র উদ্যোগে ‘৩৬ জুলাইয়ের যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিপ্লবীদের সম্মাননা প্রদান ও প্রত্যাশার বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, জুলাই বিপ্লবে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করেছে। ছাত্রদের অসীম সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছেন। এটি কোনো একক গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দলের বিপ্লব নয়। এই বিপ্লবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীরা অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে অবশ্যই বিভিন্ন উপায়ে পাইওনিয়ারের ভূমিকায় ছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রবাসীরা। তাদের ভূমিকা ছিল অনন্য।
সংগঠনের সভাপতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আমিন উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সেক্রেটারি এমসি কলেজ সিলেটের সাবেক ছাত্রনেতা আবু তালহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, বিশিষ্ট ইসলামিক চিন্তাবিদ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ইমাম আজমল মসরুর, টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের স্পিকার ব্যারিস্টার সাইফুদ্দিন খালেদ, কমিউনিটি নেতা ও মানবাধিকার সংগঠক মাহফুজ নাহিদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ইউরোপের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, সিলেট মহানগর জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম শাহীন, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কমিউনিটি এক্টিভিস্ট আব্দুল মুনিম জাহেদী কেরল, ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ব্যারিস্টার বদরে আলম দিদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মেধাবী ছাত্রনেতা ও ‘বাংলাদেশ সলিডারিটি ক্যাম্পেইনের’ অন্যতম উদোক্তা আবু সালেহ ইয়াহইয়া, ইউনিভার্সেল ভয়েস ফর হিউম্যান রাইটসের উপদেষ্টা আব্দুল আলী, চট্টগ্রাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ও সামুদা মুসলিম কমিউনিটি সেন্টারের খতিব মঞ্জুর আহমেদ, আর্কিটেক্ট মুর্শেদ আহমদ প্রমুখ।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ : স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও কোনো হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত পরিলক্ষিত হয়নি মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর দেখা গেছে সরকার দায়সারা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটিকেও স্বাধীনভাবে নিরপেক্ষ তদন্ত করতে দেয়া হয় না। আবার সরকারের আজ্ঞাবহ তদন্ত কমিটিকেও দেখা যায় গড়িমসি করে কালক্ষেপণ করতে। দীর্ঘসূত্রতার ফলে শেষ পর্যন্ত প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপায় পড়ে যায়। এই সুযোগে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়।
গতকাল বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস (বিএপি) আয়োজিত বিডিআর হত্যাকাণ্ডে শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডা: লুৎফুর রহমান খান স্মারক বক্তৃতা- ২০২৫ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বিএপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা: মো: আবদুল মোত্তালিবের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা: মো: নিজাম উদ্দিনের পরিচালনায় রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত সভায় বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সেনাবাহিনীর তৎকালীন অফিসার, সেনাসদস্য ও বিডিআর পরিবারের সদস্য এবং জেলফেরৎ বিডিআর সদস্যরা বক্তৃতা করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা