পিলখানা হত্যার সুবিচার নিশ্চিত করতে জাতি দায়বদ্ধ : ড. ইউনূস
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

জাতীয় শহীদ সেনা দিবসে জাতির পক্ষ থেকে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এই হত্যার সুবিচার নিশ্চিত করতে জাতি দায়বদ্ধ। গতকাল এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা একথা বলেন। এদিন প্রথমবারের মতো দেশে পালিত হয় জাতীয় শহীদ সেনা দিবস।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি, প্রথমবারের মতো পালিত হচ্ছে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস। ২০০৯ সালের এই দিনে পিলখানায় সংঘটিত নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার সব শহীদের স্মরণে এখন থেকে প্রতি বছর এই দিনটিকে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।’ তিনি এই দিনে জাতির সূর্য সন্তান, শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের গভীর বেদনার সাথে স্মরণ করেন ও বিনম্র শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। একই সাথে তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানান।
শহীদ পরিবারের সদস্যরা একান্ত প্রিয়জন হারানোর এতগুলো বছর পরও স্বজন হত্যার বিচার পেতে অপেক্ষা করে আছেন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পিলখানায় বীর সেনা সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর অনেকগুলো বছর ধরে জাতি হিসেবে আমাদের নানা বিভ্রান্তিতে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এই নির্মমতার সুবিচার নিশ্চিত করতে দায়বদ্ধ। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। সমব্যথী হয়ে দেশ ও জনগণ শহীদ পরিবার ও সকল নিপীড়িতের পাশে দাঁড়াবে সেই আশাবাদ রাখছি একই সাথে। তিনি বলেন, এখন থেকে এই দিনটি আমাদের চেতনা ও অনুভূতির একটি নিয়ামক হয়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করার ব্রত নিয়ে পথচলা একদল সাহসী মানুষের অনাকাক্সিক্ষত নির্মম মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেবে। তাদের এই আত্মত্যাগের স্মরণে আমরা জাতি হিসেবে যেন নিজেদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সঙ্কল্পবদ্ধ হই। দুঃশাসন, ষড়যন্ত্র ও আত্ম-অহঙ্কারে আর যেন কোনো প্রাণ না হারায়। মানুষ যেন আত্মসম্মান ও মানবিক অধিকার নিয়ে নিজের যোগ্যতা ও মেধায় তার প্রাপ্য অবস্থানে পৌঁছাতে পারে এই প্রত্যাশা করি। তিনি বলেন, ‘ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বেকারত্বমুক্ত পৃথিবী গড়ার পথে বাংলাদেশই যেন হয় আদর্শিক মাপকাঠি। জাতির শহীদ সেনাদের স্মরণে এই দিনে আমরা একটি স্বনির্ভর ও সুসভ্য বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকারবদ্ধ হই।’
হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার চালুর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
হজযাত্রাকে সহজ, সুন্দর ও নিরাপদ করতে ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ চালু করে হজযাত্রীদের সার্বক্ষণিক সেবার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় এ নির্দেশ দেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পবিত্র হজ পালন সহজ করার জন্য মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে একটা সুযোগ দিয়েছেন; এই সুযোগ যেন আমরা সর্বোচ্চ কাজে লাগাই। একজন হজযাত্রীও যেন কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার না হন সে প্রচেষ্টা থাকতে হবে। দেশে লাইসেন্স প্রাপ্ত হজ এজেন্সির সংখ্যা ১২৭৫টি। এর মধ্যে হজ কার্যক্রমের জন্য যোগ্য এজেন্সি ৯৪১টি, হজযাত্রী নিবন্ধনকারী এজেন্সি ৭৫৩টি এবং লিড এজেন্সি ৭০টি।
এই এজেন্সিগুলোর দায়িত্ব কী হবে সেটা সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করে বুকলেট আকারে ও অনলাইনে প্রকাশের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কেউ হারিয়ে গেলে, অসুস্থ হয়ে পড়লে, লাগেজ হারিয়ে গেলে বা অন্য কোনো ধরনের সমস্যায় করণীয় কী, কাকে জানাবে এটার সুস্পষ্ট গাইডলাইন থাকতে হবে। হজযাত্রীদের প্রত্যেকের কাছে এই বুকলেট দিতে হবে। নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ কী নেয়া হবে সেটাও উল্লেখ থাকতে হবে, বলেন তিনি। তিনি বলেন, দেশেই একটি হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার স্থাপন করতে হবে যাতে করে বাংলাদেশ বসেই সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করা যায়।
ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করার জন্য কলসেন্টারে কী ধরনের অভিযোগ আসছে সেগুলো মনিটরিং করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
একইসাথে কোনো এজেন্সি দায়িত্ব পালন না করলে তার লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘হজ ক্রেডিট কার্ড চালু করে দিলে হজযাত্রীদের ভোগান্তি কমে যাবে। দেশে ফেরার পর যে কার্ডে যে অর্থ থেকে যাবে সেটা নগদ ফেরত দিয়ে দেয়া হবে। লাগেজ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সেজন্য চেক-ইনের পরে ট্যাগটা কপি করে রাখা যেতে পারে। ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে লাগেজ ট্যাগের তালিকা থাকবে।’
সভায় উপস্থিত ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। এ ছাড়া ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কাগজপত্রহীন বাংলাদেশীদের নিয়মিতকরণের আহ্বান : মালদ্বীপে বসবাসরত বৈধ কাগজপত্র নেই এমন বাংলাদেশীদের বৈধ কাগজপত্র প্রদানের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনার জন্য সে দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। একইসাথে তিনি মালদ্বীপে আরো বেশি বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের আহ্বান জানান।
মঙ্গলবার মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিউনীন রশিদ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান। বর্তমানে মালদ্বীপে বাংলাদেশী অভিবাসীরা মূলত পর্যটন ও মৎস্য শিল্পে কর্মরত রয়েছেন। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী চিকিৎসকও মালদ্বীপে কর্মরত আছেন।
মালদ্বীপের হাইকমিশনার প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে মালদ্বীপের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে মেডিক্যালে অধ্যয়ন করছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা