একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের জন্য রাজপথে থাকা প্রয়োজন
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। প্রায় সাড়ে ছয় মাস দায়িত্ব পালন শেষে পদত্যাগ করে রাজনীতিতে ফিরছেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পদত্যাগপত্রে নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, আমার সশ্রদ্ধ সালাম গ্রহণ করুন। প্রথমেই আমি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত সহযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের পরে ছাত্র-জনতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরিবর্তিত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য আপনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।
তিনি লিখেন, বৈষম্যহীন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আপনার নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদে আমাকে সুযোগ দেয়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। ৮ আগস্ট শপথ নেয়া উপদেষ্টা পরিষদে আমি ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাই। নাহিদ লিখেন, ‘নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আপনার নেতৃত্বে দায়িত্ব পালনে সদা সচেষ্ট থেকেছি। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমার ছাত্র-জনতার কাতারে উপস্থিত থাকা উচিত মর্মে আমি মনে করি। ফলে আমি আমার দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেয়া সমীচীন মনে করছি।’
নাহিদের সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং : গত কয়েক দিন ধরে তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, তার এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ঘোষিত নতুন রাজনৈতিক দলে যোগদানের জন্য পদত্যাগ করবেন বলে শোনা যাচ্ছিল। সোমবারও তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি পদত্যাগ করিনি। তবে গতকাল প্রধান উপদেষ্টার কাছে তিনি তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। যমুনা থেকে পদত্যাগ করে হেঁটে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তাদের সাথে বেলা পৌনে ৩টার দিকে ব্রিফিংস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম, ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, সিনিয়র সহকারী প্রেস সেক্রেটারি ফয়েজ আহমদ ও সহকারী প্রেস সেক্রেটারি সুচিস্মিতা তিথি উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ের শুরুতে শফিকুল আলম জানান, খুব সংক্ষেপে নাহিদ বক্তব্য দেবেন। বক্তব্যে নাহিদ বলেন, আজ বেলা ১টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল। এ বৈঠকে আমি আমার একটা ব্যক্তিগত বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং আলোচনা সাপেক্ষে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আমার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আমার যে দু’টি মন্ত্রণালয় ছিল তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি, এ দু’টি মন্ত্রণালয় থেকে ইস্তফা দিয়েছি। এ ছাড়া জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনসহ সরকারের যেসব কমিটিতে ছিলাম সব কমিটি থেকে একই সাথে ইস্তফা আমার হচ্ছে।
তিনি বলেন, মূলত একটি গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ আগস্ট আমরা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে প্রথমে দু’জন ও পরে আরো একজনসহ তিনজন অন্তর্বর্তী সরকারের অন্য উপদেষ্টাদের সাথে দায়িত্ব নেই। তখন দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সেই সময় আমাদের দায়িত্ব গ্রহণ করাটা যৌক্তিক মনে হয়েছিল।
নাহিদ বলেন, গত ছয়-সাড়ে ছয় মাস অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। হয়তো আমরা আশানুরূপ ফলাফল এখনো পাইনি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে যে সরকার একটা স্টেবিলিটিতে এসেছে। ব্যক্তিগতভাবে সরকারের বাইরে দেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি সেই পরিস্থিতিতে একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের জন্য আমার রাজপথে থাকা প্রয়োজন, ছাত্র-জনতার কাতারে থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ছয় মাস খুব কম সময়। আমি আমার চেষ্টা করেছি; ফলাফল জনগণ মূল্যায়ন করবে। আজ থেকে মূলত আমি সরকারের কোনো দায়িত্বে নেই।
নাহিদের প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়ে দেন- তাদের কাছ থেকে মাত্র তিনটি প্রশ্ন নেয়া হবে। এ সময় একজন গণমাধ্যমকর্মী জানতে চান, এই পদক্ষেপের ফলে তথ্য উপদেষ্টার শূন্যতা কিভাবে পূরণ হবে? এ প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, আমার পরে কে দায়িত্ব নেবে সেটা ক্যাবিনেটের পরবর্তী সভায় কেবিনেটই ঠিক করবে। আমি আমার জায়গা থেকে মনে করেছি আমার বাইরে প্রয়োজন। এখনো গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন হয়নি। বিচার ও সংস্কারের যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে একটি সরকার গঠিত হয়েছিল সেই সরকারে এখনো দু’জন ছাত্রপ্রতিনিধি হয়ে রয়েছেন, তারা মনে করেছেন তারা সরকারে থেকেই জনগণের সেবা করবেন। তারা যখন রাজনীতি করার প্রয়োজন বোধ করবেন তখন হয়তো সরকারে পদ থেকে সরে আসবেন।
নতুন দলে অংশগ্রহণের জন্যই কি পদত্যাগ করেছেন- প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, হ্যাঁ, নতুন যে রাজনৈতিক শক্তি ও দল গঠন হচ্ছে সেখানে আমার অংশগ্রহণের অভিপ্রায় রয়েছে। জনগণের সাথে মিশে, আবার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং আমাদের অভ্যুত্থানের যে প্রতিশ্রুতি সেটা বাস্তবায়নে মাঠে থেকে কাজ করার লক্ষ্যে আমি সরকার থেকে পদত্যাগ করেছি।
নতুন দলে তিনি কী দায়িত্ব পাচ্ছেন- প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, এটি জানার জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেদিন দল ঘোষণা হবে সেদিন অপেক্ষা করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা