গুম পরিবারের কান্না : বাবা কি আর ফিরবে না
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫০
বাবা কি আর ফিরে আসবে না? ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের বিদায় হলো। অন্তর্বর্তী সরকার এলো। আয়নাঘর ভাঙা হলো। কিন্তু বাবা তো ফিরে এলো না। আমাদের অপেক্ষা কি কোনো দিন শেষ হবে না? গতকাল সোমবার রাজধানীতে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে বাংলাদেশ গুম পরিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এভাবে কথাগুলো বলে কাঁদছিল ছোট্ট রোজা। এ সময় শুধু নিজেই কাঁদেনি, কাঁদিয়েছে উপস্থিত অনেককেই।
২০১২ সালে দুই মাস বয়স ছিল তার। সেই সময় বাবা হোসাইন টিপুকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আর ফিরে আসেননি তিনি। প্রায় ১৩ বছরের রোজা এখনো বাবার চেহারা দেখতে পায়নি। বাবা কেমন ছিলেন সে ব্যাপারেও কোনো ধারণা নেই তার। শুধু রোজা নয়, কান্নায় ভেঙে পড়েন গুমের শিকার আলমগীরের মেয়ে সামিয়াসহ আরো অনেকে।
সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক বাংলাদেশ গুম পরিবারের প্রধান সমন্বয়ক মো: বেল্লাল হোসেন বলেন, গত ১৬ বছর গুমের প্রধান কারিগর ছিল র্যাব। এই র্যাব বিলুপ্ত না করলে গুম হওয়া প্রায় ১৬৮৫টি পরিবারের সদস্যরা বিপদের মধ্যেই থাকবে। ইতোমধ্যে ৫ আগস্টের পর গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের নতুন করে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে আর সামনে না এগোতে হুমকি দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, গুম খুন অপহরণের সঠিক বিচার বাধাগ্রস্ত করতে একটি চক্র নানাভাবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এই চক্রের সাথে কাজ করছে কিছু আইনজীবী ও প্রশাসনের লোকজন। তারা গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের মিথ্যা মামলায় জড়ানোরও হুমকি দিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বেল্লাল হোসেন বলেন, স্বজনহারা পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু কোনো সুফল পায়নি। তাদের অপেক্ষা যেন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। তাই আটটি দাবিসংবলিত একটি স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেয়া হচ্ছে। দাবিগুলোর মধ্যে বলা হয়েছে বাংলাদেশে কতগুলো আয়নাঘর রয়েছে তার একটি তালিকা করতে হবে, গুম কমিশনের লোকবল বৃদ্ধি করে সঠিকভাবে তদন্তকার্যক্রম হচ্ছে কি না তার জন্য মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। র্যাবকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে সংস্কার করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একটি চক্র ঘটনার বিচার ও সঠিক তদন্ত যাতে না হয় সে জন্য ভিকটিম পরিবারকে ভয়ভীতি প্রদান, হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করছে। যার সাথে প্রশাসনের কিছু ব্যক্তি ও কিছু আইনজীবীও জড়িত রয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়াও বলা হয়েছে, আমাদের ধারণা আয়নাঘরে আর কোনো মানুষ জীবিত নেই। তাই প্রতিটি ব্যক্তিকে শহীদি মর্যাদা দিয়ে পরিবারগুলোকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। ভিকটিম যারা ফেরত এসেছে অথবা যাদের আর পরিবারের কাছে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই তাদের প্রতিটি পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি ও মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। ভিকটিম পরিবারের সন্তানদের বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ ও নমনীয় ব্যাংকিং লেনদেন ও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্য সনদ প্রদান করতে হবে।
এ সময় বাবা হারানো সামিয়া বলেন, বাবাকে ফিরে পেতে দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য দোয়া করে গেছি। যখন শেখ হাসিনা পালিয়ে যায় তখন থেকেই আশায় বুক বেঁধেছিলাম এই বুঝি বাবা ফিরে এসে সামিয়া বলে ডাক দিচ্ছে। কিন্তু কই বাবাতো আর আসে না। তিনি বলেন, তার বাবা আলমগীর হোসেন ছিলেন ব্যবসায়ী। র্যাব সদস্যরা প্রথম ধাপে তাকে অপহরণ করে ৬০ লাখ টাকার চেক লিখে নেয়। এরপর ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চারটি গাড়ি ও নগদ দুই লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। এ ব্যাপারে আদালতে মামলা দায়ের হলে মিডিয়ায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। সব তাদের পক্ষেই ছিল। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে তারা আবার বাবাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে বাবা আর ফেরেননি। তখন আমার ছোট বোনটি মায়ের গর্ভে ছিল। বোনটি যখন বলে ‘আপু তুমি তো বাবাকে দেখেছো, বাবা কেমন হয়’-তখন চিৎকার করে কাঁদি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা