২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ শাবান ১৪৪৬
`

দেশকে অস্থিতিশীল করতে আ’লীগের ভয়ঙ্কর ছক

-

দেশকে অস্থিতিশীল করতে পতিত আওয়ামী লীগ ভয়ঙ্কর ছক এঁকেছে। সেই ছক অনুযায়ী একের পর এক তারা নানা অঘটন ঘটিয়ে চলছে। অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর পেছনেও তাদের হাত রয়েছে বলে জানা গেছে। দেশকে বিদেশীদের কাছে হেয় করতে ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে তারা ব্যবহার করছে। একটি সূত্র বলেছে, আগামী মার্চের মাঝামাঝি ও এপ্রিলের মধ্যে তারা দেশকে চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

একটি সূত্র বলেছে, নানা ইস্যু নিয়ে কাজ করছে পতিত আওয়ামী লীগ। গত ৫ আগস্ট হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর পর আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী রাতারাতি ভোল পাল্টে সাধু সেজেছে। এরা বিভিন্ন গ্রুপের সাথে মিশে গিয়ে এখন মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর জন্য। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, ঢাকায় হঠাৎ করেই ছিনতাই-চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িতরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এর সাথে জড়িত রয়েছে আওয়ামী সমর্থিত ঢাকার সাবেক কাউন্সিলরদের সহযোগীরা। এদের মধ্যে কাউন্সিলরদের নিয়ন্ত্রিত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা জড়িত। এখনো ঢাকার বেশির ভাগ অপরাধ তাদেরই নিয়ন্ত্রণে বলে একাধিক সূত্র জানায়। সূত্র বলেছে, এ সবের পেছনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ সারির নেতাদের ইন্ধন রয়েছে। এই কিশোর গ্যাং সদস্যদের অনেকেই এখন অন্য কোনো প্রভাবশালীর আশ্রয়ে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী মধ্য-এপ্রিলের মধ্যে দেশকে চরম অসহিষ্ণু পর্যায়ে নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উইং মাঠে কাজ করে চলছে। তাদেরকে সহায়তা দিচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো থেকে শুরু করে কিছু দিবসকেন্দ্রিক বিতর্ক সৃ৭ষ্টির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে চায় আওয়ামী লীগ।

৭ মার্চের শেখ মুজিবের ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবরে ইউনেস্কো ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। গত বছর পর্যন্ত ব্যাপক আয়োজনে ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করে আওয়ামী লীগ। এবার দেশে আওয়ামী লীগ না থাকার কারণে এই ভাষণ কেউ শুনবে কি না সন্দেহ। এবার কোনো আয়োজনও থাকবে না ৭ মার্চ। এটা বড় করে দেখিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে হেয় করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ তার পক্ষে আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমের প্রচার প্রচারণা পায়নি। এই ৭ মার্চকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নিজের পক্ষে প্রচার প্রচারণা পেতে চায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।

আওয়ামী লীগ পয়লা বৈশাখকেও টার্গেট করেছে। ওই দিন পুতুল শো এর (‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’) বিষয়টি ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে। এবারের এই পুতুল শোতে কেউ বাধা দিলে সেটা বড় করে বিশ্ব মিডিয়ায় প্রচারের পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি থাকায় এই বিষয়টির প্রতি আওয়ামী লীগ জোর দিচ্ছে; যাতে দেশকে বহির্বিশ্বে হেয় করা যায়।

১৭ মার্চ শেখ মুজিবের জন্মদিন এবং শেখ মুজিবকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে আখ্যা না দিয়ে অন্য কিছু করা হলে সেটা নিয়েও বিশ্বব্যাপী প্রচার প্রচারণার টার্গেট রয়েছে আওয়ামী লীগের। বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা বাহাউদ্দিন নাছিম, হাছান মাহমুদ এবং আরাফাতের মতো অনেকের দায়িত্ব রয়েছে এসব নিয়ে প্রচার প্রচারণা চালানোর। এর বাইরেও তাদের দায়িত্ব রয়েছে বিভিন্ন গুজব ছড়ানোর। অনলাইন-ভিত্তিক এই গুজব ছড়ানো হবে, যার প্রভাব পুরো দেশে পড়তে পারে। এ ছাড়া ম্যুরাল ভাঙা, টুঙ্গিপাড়ায় কোনো হামলার ঘটনা ঘটলে আওয়ামী লীগ ভিকটিম সেজে বিশ্বে প্রচার প্রচারণা চালানোর চেষ্টা চালাবে। ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে কোনো হামলা হলে সেখানে বাংলাদেশে উগ্রবাদের উত্থানের একটি প্রচার প্রচারণা চালানোর টার্গেট রয়েছে আওয়ামী লীগের। সেক্ষেত্রে তারা নিজেরাই তৌহিদী জনতা সেজে এই হামলা চালানোর চক্রান্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।

ইতঃপূর্বে গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের একটি অডিও ব্যাপকভাবে প্রচার হয়। ওই অডিওতে শোনা গেছে তার বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। ঢাকার মানুষকে রাতের বেলায়তো নয়-ই দিনের বেলায়ও ঘুমাতে দেয়া হবে না। একাধিক সূত্র বলেছে, ঢাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতির পেছনে এই বাহিনীর বিশাল এক যোগসাজশ রয়েছে।

এদিকে, আওয়ামী লীগকে যারা দেশ থেকে তাড়িয়েছে সেসব রাজনৈতিক ও সামাজিক দলগুলোর অভ্যন্তরে কোন্দল বাধানোর বিশাল পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। সেক্ষেত্রে পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি পর্যায়ে এখনো আওয়ামী লীগের যেসব দোসর আছে তাদেরকে কাজে লাগাতে চায় আওয়ামী লীগ। একজনকে আরেকজনের বিরুদ্ধে উসকে দেয়ার কাজটি করবে তারা। ফলে আওয়ামী বিরোধী শক্তি নিজেরাই নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়বে। এমনকি, নিজ দলের মধ্যেও কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষকে উসকে দেয়ার টার্গেট রয়েছে আওয়ামী লীগের। বিভিন্ন পেশাজীবীদের দাবিদাওয়ার মিছিলে-বিক্ষোভে আওয়ামী লীগের লোকজন প্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, এমনকি লাশ ফেলে দেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে।

বিশেষ করে নারীদের লাশ ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। পরিকল্পিতভাবে নারী ধর্ষণ করে নারীবাদীদের উসকে দেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে যেসব নারীবাদী সংগঠন নারী নির্যাতনের শত ঘটনায়ও নীরব থাকতো তাদেরকে ঠুনকো কোনো ঘটনায়ও মাঠে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। বর্তমানে দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক শক্তি যাতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে না পারে সেজন্য যা যা করার আওয়ামী লীগ করবে বলে জানা গেছে। আপতত দু’টি বৃহৎ গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে তারা কোনো কথা বলবে না বলে পরিকল্পনা রয়েছে।

ইসকন বা ভারত ইস্যু সরাসরি না বলে সনাতনি বা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন হচ্ছে বলে প্রচার চালাবে তারা।

এদিকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে সরকারও নানা পরিকল্পনা করেছে বলে সরকারের দায়িত্বশীলরা বলেছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল বলেছেন, সন্ধ্যার পর থেকে কঠোর অবস্থানে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব বলেছেন, আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি সরকার সিরিয়াসলি নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল আইন উপদেষ্টাসহ আরো অনেকেই কথা বলেছেন। পুলিশের একটি সূত্র বলেছে পুলিশ এখনো অনেকটা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। আবার পুলিশের কিছু কর্তা রয়েছেন যাদের কমান্ড এখনো পুরোপুরি মানছে না নিচের কর্মকর্তা-সদস্যরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement