আর্থিক খাতে আ’লীগের দুর্নীতির টাকায় হতো ১৪ মেট্রোরেল
অর্থনৈতিক কৌশল নির্ধারণী সভার তথ্য- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩৯
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আর্থিক খাতে যে ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে তার অর্থ দিয়ে ১৪টি মেট্রোরেল কিংবা ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। শুধু তাই নয়, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রায় ১৬ বিলিয়ন বা এক হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারও পাচার করা হয়েছে। হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হয়েছে আরো ১৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা।
গতকাল সোমবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অর্থনৈতিক কৌশল নির্ধারণী সভায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিগত সরকারের দুর্নীতির গভীরতা বিষয়ে সভায় জানানো হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় উন্নয়ন প্রকল্পে গড়ে ৭০ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়। রাজনৈতিক প্রভাব এবং অযৌক্তিক প্রকল্প ব্যয়ের মাধ্যমে ১৪ থেকে ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ অপচয় করা হয়েছে। দেশী উৎপাদন ও সরবরাহের অসত্য তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের মাধ্যমে অর্থনীতি সম্পর্কে ভুল ধারণা প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়াও সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় প্রদত্ত ভাতার সুবিধাভোগী নির্বাচনেও দুর্নীতি করা হয়। ২০২২ সাল পর্যন্ত যাদের ভাতা দেয়া হয়েছে তাদের প্রায় ৭০ শতাংশই গরিবই ছিল না।
সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য একক ঋণগ্রহীতার এক্সপোজার সীমা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। প্রকৃত ঝুঁকি বিবেচনায় ঋণ প্রদান কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে বারবার রিশিডিউলিং এবং রাইটঅফ করার সুযোগ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ দক্ষ জনবল দ্বারা গঠন করতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও কমপ্লায়েন্স ডিপার্টমেন্টকে শক্তিশালী করতে হবে এবং কার্যকর অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) আরো শক্তিশালী করতে হবে। আমানতকারীদের অর্থের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে।
উচ্চ হারে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের পরিবর্তে নমনীয় সুদে ঋণ গ্রহণ করতে হবে। বৈশ্বিক অস্থিরতা থেকে বাংলাদেশকে সুরক্ষা দিতে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত ও জোরদার করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন এবং এর মান নিশ্চিত করতে হবে। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে করনীতি এবং কর প্রশাসন সম্পূর্ণ পৃথক করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় কর ছাড় বাতিল করতে হবে। সরবরাহ ব্যবস্থায় বিদ্যমান ত্রুটি নিরসনে উদ্যোগ নিতে হবে। তৈরি পোশাকশিল্পের উপর অতিনির্ভরশীলতা কমাতে হবে। অন্যান্য সম্ভাবনাময় শিল্পকে উৎসাহিত করতে হবে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে সমন্বিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নীতি প্রস্তুত করতে হবে।
এ ছাড়া নির্দেশনা দেয়া হয় রফতানি, বিনিয়োগ এবং শিল্পে ন্যায্য মজুরি কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবসা সহজ করতে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সংস্কার করতে হবে। সম্ভাবনাময় রফতানি পণ্যের জন্য বিশেষ সহায়তা প্রদান করতে হবে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। প্রযুক্তিনির্ভর পণ্যের রফতানি বৃদ্ধিতে গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। দেশের শিল্প পার্কগুলোর মধ্যে উচ্চগতির ট্রেন চালু করতে হবে। এসএমইগুলোর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা কাঠামো আরো শক্তিশালী করতে হবে। সম্ভাবনাময় শিল্প ও ব্যবসার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়নের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। এসএমইসহ সব শিল্প ও ব্যবসায় নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। স্টার্টআপ-এর বিকাশে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে হবে। শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা