২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ শাবান ১৪৪৬
`
রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাংক লুট একমাত্র বাংলাদেশেই ঘটেছে : গভর্নর

এস আলমের ৮ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা অবরুদ্ধের আদেশ

-

ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ও তার পরিবারের নামে থাকা ৮ হাজার ১৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২২৭টি হিসাবে এসব টাকা জমা রয়েছে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা আবেদনে উল্লেখ করেছেন।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন। এর আগে দুদকের উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক এসব সম্পদ অবরুদ্ধের আদেশ চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।
আবেদনে বলা হয়, গতকাল এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, সাইফুল আলম ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে বেনামে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎপূর্বক নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ করেছেন।
বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা অস্থাবর সম্পদগুলো অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। অনুসন্ধান নিষ্পত্তির আগে বর্ণিত সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে উক্ত টাকা উদ্ধার করা দুরূহ হয়ে পড়বে। তাই অনুসন্ধান শেষে মামলা দায়ের ও তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে চার্জশিট দাখিলের পর আদালত কর্তৃক বিচার শেষে সরকারের অনুকূলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের সুবিধার্থে ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সাইফুল আলমের এসব সম্পদ অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামীয় বিভিন্ন কোম্পানির ৪২টি শেয়ারে পাঁচ হাজার একশত ৯ কোটি ৬৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৬০ টাকা এবং শেয়ারসমূহ থেকে উদ্ভূত সব মুনাফা অবরুদ্ধের (ফ্রিজ) আদেশ দিয়েছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব।
গত ৩০ জানুয়ারি এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ও তার পরিবারের নামে থাকা ১৭৫ বিঘা সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত। যার প্রদর্শিত মূল্য ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা।
রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাংক লুট একমাত্র বাংলাদেশেই ঘটেছে: গভর্নর
নীলফামারী প্রতিনিধি জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে আর্থিক খাতের সর্বনাশ কোথাও হয়নি। পৃথিবীর নানা দেশে আমি কাজ করেছি, আইন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে। হ্যাঁ দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনা হয়, মূল্য স্ফিতি হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ভাবে ব্যাংক লুট করার ঘটনা একমাত্র বাংলাদেশে ঘটেছে। শুধু একটা ব্যাংক নয়, সাতটি ব্যাংক লুট হয়েছে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়া খাটিয়ে ব্যাংকগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে, অর্থ পাচার করা হয়েছে।’
গতকাল বেলা ১১টায় নীলফামারী সরকারি কলেজের হলরুমে আয়োজিত বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ রূপরেখা শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা জানেন একটা পরিবারের হাতেই ছিল সাতটা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা আইন বহির্ভূত। আইন অনুযায়ী একটা পরিবার থেকে একটা ব্যাংকের শেয়ার করা হতো ১০ পার্সেন্ট, তার বেশি নয়। তাহলে কিভাবে তারা পুরোপুরি ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিল এবং ইসলামী ব্যাংকের ৮০ পার্সেন্টের ওপর শেয়ার হচ্ছে এস আলমের। কিভাবে তারা পেলো? এটা পুরোপুরিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতা, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতা। তারা হয়েছিল পলিটিক্যাল ডাইরেক্টর।’
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তাদের সুরক্ষা দেয়া হয়েছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, ‘কিভাবে একটা পরিবার সাতটা ব্যাংক নিল এবং সবগুলোকে দেউলিয়া করল এটা কি আমরা জানতাম না। অবশ্যই জানতাম। কিন্তু কিছু করা সম্ভব হয়নি। কেন হয়নি সেটাও আমরা জানি। কারণ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যদি এটাকে প্রটেকশন দেয়া হয়, ডিজিএফআই থেকে প্রটেকশন দেয়া হয়, তাহলে কিভাবে সাধারণ মানুষরা প্রতিহত করবে। প্রতিহত করা সম্ভব ছিল না।’
ব্যাংকগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘কিছু ব্যাংক আছে যেগুলো ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক অন্যতম। কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং কেন দাঁড়িয়েছে? কারণ ডিপোজিটেররা কমিটেড টু দ্যা ব্যাংক। তারা চায় তাদের ব্যাংকটা থাকুক। তারা জানে যে ব্যাংকটা ভালো ছিল। ব্যাংকটা ভালো হতে পারে এবং ব্যাংকটা ভালো হবে। এই আস্থাটা কিন্তু আমাদের ব্যাংকিং খাতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ব্যাংকিং খাতের জন্য যদি আস্থাটা দিতে পারি তাহলে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ।’
তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু সবগুলো ব্যাংক কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? হয়তো পারবে না। কিন্তু আমরা তো দাঁড় করাবো। মার্কেট তৈরি হোক যেভাবেই হোক। আমরা প্রত্যেকটা ডিপোজিটারের অর্থ ফেরত দেবো। এই গ্যারান্টিটা আমরা দিচ্ছি। ডিপোজিটের কোনো টাকা হারাবে না। হয়তো সাময়িকভাবে তারা অ্যাক্সেস পাবেন না। যখন আমাদের প্রক্রিয়া শেষ হবে, তখন তাদেরকে অল্টারনেট একটা অ্যাসেট দেয়া হবে। ইনশাআল্লাহ আপনাদের ক্ষতি হবে না। তাই আমরা ব্যাংকগুলোকে এমনভাবে পুনর্গঠন করব, এমনভাবে ম্যানেজমেন্টে নিয়ে আসব যাতে শক্তিশালী ব্যাংক হিসেবে তারা দাঁড়িয়ে যেতে পারে। ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ানোর সময় লাগে না। চার-পাঁচ বছর সময় লাগে। আমরা আশা করি যে পরবর্তী সরকার সেটিকে সামনের দিকে নিয়ে যাবে। সামনের দিকে যদি না নিতে পারে তাহলে কিন্তু এটা গঠনমূলক হবে না। কাজেই দায়িত্বটা পরবর্তী সরকারের।’
পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে আনার বিষয়ে গভর্নর বলেন, ‘যে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে তা উদ্ধারের চেষ্টা করছি। আমরা এখানে অনেকগুলো জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করেছি। আর তারা প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে তথ্য নিচ্ছে। তারা অন্যান্য জায়গা থেকে তথ্য নিচ্ছে। তাদের কিছু সম্পদ, সম্পত্তি যেগুলো বাংলাদেশে আছে সেগুলোকে অ্যাটাচ করা হচ্ছে। ‘স্টোল অ্যাসেট ট্রেসিং’ এগুলোর জন্য বিদেশী কিছু সংস্থা আছে। সরকারি সংস্থা ইংল্যান্ডে আছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকেও আছে। আমরা এদের সাথে যোগাযোগ করছি। তাদের কাছ থেকে আমরা কারিগরি সহায়তা নিচ্ছি। আইনগত সহায়তাও নিচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি ইনভেস্টিগেশনগুলোকে সঠিকভাবে করতে। কারণ এগুলো ইন্টারন্যাশনাল কোর্টে যখন আমরা নিয়ে যাব তখন এটা বাংলাদেশের কোর্টের স্ট্যান্ডার্ডের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন তদন্তের ভিত্তিতেই তাদের সম্পদ আমরা জব্দ করতে পারব এবং পরবর্তীতে ফেরত আনতে পারব।’
তিনি আরো বলেন,‘ইন্টারন্যাশনাল এক্সপিরিয়েন্স হচ্ছে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে চার থেকে পাঁচ বছর লেগে যায়। এর মধ্যে আমরা মালয়েশিয়াতে দেখেছি চার থেকে পাঁচ বছর লেগেছে। আমরা দেখেছি নাইজেরিয়াতে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের যে সম্পদ নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই টাকা ফেরত আনা হয়েছে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের মতো। এটা করা সম্ভব। তবে সময় লাগবে এবং এই সরকারের পক্ষে রেজাল্টটা দেখা সম্ভব নয়। শুরুটা করা সম্ভব, আমরা শুরু করে দেই। কিন্তু শেষটা করতে হবে পরবর্তী সরকারকে।’
আলোচনা সভায় কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ভূইয়ার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান। সভায় কলেজের শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।


আরো সংবাদ



premium cement
পাঠ্যবই মুদ্রণে সফল ৩৫ প্রতিষ্ঠানকে এনসিটিবির সংবর্ধনা অপারেশন ডেভিল হান্টে আরো ৫৮৫ জন গ্রেফতার সেনা অফিসারদের হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের দাবিতে সমাবেশ দেশের আকাশসীমায় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা সচেষ্ট : বিমান বাহিনী রমজানে কোনো নিত্য পণ্যের দাম বাড়বে না : অর্থ উপদেষ্টা নতুন গবেষণা ইনস্টিটিউটের আত্মপ্রকাশ মিরসরাইয়ে উদয়ন মেধাবৃত্তি পরীক্ষার পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন নাহিদের পদত্যাগের গুঞ্জন নিয়ে যা জানা গেল জার্মান নির্বাচন : বুথ ফেরত জরিপে এগিয়ে সিডিইউ কুমিল্লার বুড়িচংয়ে বসতঘর থেকে তরুণীর লাশ উদ্ধার পাবিপ্রবিতে ২ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

সকল