অজ্ঞাত ২ পুরুষে আটকে আছে তদন্ত
- এস এম মিন্টু
- ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
১৩ বছর আগে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায় নিজ বাসায় নৃসংশভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। তদন্তে গাফলতি ও নানা নাটকীয়তায় এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের মোটিভ বা প্রকৃত আসামিকে শনাক্তই করতে পারেনি পুলিশ বা র্যা বসহ অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা। ঘটনার পর থেকেই সাংবাদিক মহল ও নিহতের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতি ও অপকর্ম তুলে ধরতে গিয়ে এই দম্পতি খুনের শিকার হন বলেও নানা জনশ্রুতি রয়েছে। তবে যে বিষয়টি এতদিন ধামাচাপা দেয়া ছিল তা নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে সম্প্রতি সাগর-রুনির মামলার নতুন তদন্ত কমিটি টাস্কফোর্সকে। যুক্তরাষ্ট্র এবং নেদারল্যান্ডস কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানে সর্বাধুনিক পরীক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিস (আইএফএস) পরীক্ষাগারে আলামত পাঠানোর পর চারজনের ডিএনএ পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ভিকটিম সাগর-রুনি ও অজ্ঞাত দুই পুরুষের ডিএনএ পাওয়া যায়।
র্যা ব সূত্র জানায়, অজ্ঞাত দুই পুরুষের ডিএনএর সাথে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচ না হওয়ার কারণেই মূলত তদন্ত থমকে আছে। সর্বশেষ ডিএনএন পরীক্ষায় এক হাজার ২০০ ডলার খরচ করেও অজ্ঞাত দুই পুরুষের চেহারার আকৃতি পাওয়া যায়নি। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যে দুই পুরুষের ডিএনএ আকৃতির জন্য ডলার খরচ করা হয়েছে তা আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে ‘আইএফএস’ ডিএনএ মাত্র ১০ শতাংশ হওয়ায় হত্যাকারীদের ছবি পায়নি।
গতকাল টাস্কফোর্সের প্রধান এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো: মোস্তফা কামাল নয়া দিগন্তকে বলেন, দুই অজ্ঞাত পুরুষের ডিএনএ পাওয়া গেছে তা আমরা দেখেছি। যেহেতেু খুনিদের অবয়ব বা ছবি মেলাতে পারেনি তাই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, তাদের শনাক্ত করতে।
তিনি বলেন, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে পেতে যা যা প্রয়োজন তদন্ত কমিটি তাই করবে। তিনি বলেন, র্যা ব তদন্ত করতে গিয়ে যা পারেনি সে বিষয়গুলো আমরা করব।
মেঘকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে পিবিআই প্রধান বলেন, আমরা মেঘের সাথে একবার কথা বলেছি। যেহেতু মেঘের বয়স এখনো ১৮ পূর্ণ হয়নি। আর কিছুদিন পরে যখন মেঘের ম্যাচুরিটি আসবে তখন তার সাথে বাবা-মায়ের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে খোলামেলা কথা বলা যাবে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি আবু সালেহ আকন নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা আর তদন্তের নামে নাটকীয়তা চাই না। প্রকৃত আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করা হোক। তিনি বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় না আনা হলে আমরা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে কঠোর কর্মসূচি দিবো। এই কর্মসূচিতে প্রয়োজনে সাংবাদিক সমাজ আরেকবার জীবন দেবে তবুও সাগর-রুনির রক্ত বৃথা যেতে দেবে না।
এক নজরে সংক্ষিপ্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন : র্যা ব কর্তৃক টাস্কফোর্সে পাঠানো তথ্যে দেখা গেছে, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের মামলাটি রথ্যাবের ওপর তদন্তভার দেয়া হয় ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল। হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নং-৩২৫৯/২০১২ এর আলোকে মামলাটির তদন্তভার রথ্যাব গ্রহণ করে। রিট পিটিশনে বিচারপতি মামলা তদন্ত তদারকিকল্পে ডিআইজি পদমর্যাদার নিচে নয় এরূপ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। এ পর্যন্ত সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, অপরাধ বিজ্ঞানীসহ এই পর্যন্ত ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে পরামর্শ করা হয়েছে এবং তাদের জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জন সাংবাদিক, দু’জন অপরাধ বিজ্ঞানী এবং তিনজন সমাজবিজ্ঞান ও আইন বিভাগের শিক্ষক রয়েছেন।
অগ্রগতির প্রতিবেদনে র্যা ব জানিয়েছে, ডিজিটাল যেসব পদ্ধতি প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে রিটের দিকনির্দেশনার আলোকে ডিএনএ রিপোর্ট সংগ্রহসহ যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তকালে ডিএনএ পরীক্ষার বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া রিটের নির্দেশাবলীর আলোকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, সিআইডি ফরেনসিক ল্যাব এবং ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে আইএফএস প্রতিষ্ঠানে সর্বাধুনিক পরীক্ষায় দুইজন ভিকটিম এবং দুইজন অজ্ঞাত পুরুষের ডিএনএ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলে সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট পৌঁছার আগেই অধিকসংখ্যক লোক প্রবেশ করায় ডিএনএর মধ্যে অধিক মিশ্রণ পাওয়া যায়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ২টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে সাংবাদিক সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। নিহত রুনির ভাই বাদি হয়ে ডিএমপির শেরেবাংলা নগর থানায় ১২ ফেব্রুয়ারি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং-২৩।
এ মামলায় রথ্যাব কর্তৃক আটককৃত ও সন্দেহভাজন আসামিসহ মোট ২৫ জনের আলামতগুলো ডিএনএ টেস্টের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইএফএস পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। মামলাটির তদন্ত করেন রথ্যাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার শফিকুল আলম। আইএফএসের ল্যাবে পাঠানো ডিএনএ প্রতিবেদন সংক্রান্তে অধিকতর তদন্ত চলমান রয়েছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি মোহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ বিভিন্ন বাহিনীর তদন্তে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে নিয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনপূর্বক তদন্ত করে আগামী ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশনা দেন। গত ১৭ অক্টোবর আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগ, রাজনৈতিক শাখা-২ কর্তৃক সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনি হত্যা মামলার তদন্তের বিষয়ে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।
মামলায় সন্দেহভাজন গ্রেফতার করা হয় ৮ জনকে : মামলায় গ্রেফতারকৃত সন্দেহভাজন আসামিদের মধ্যে আটজনসহ ২৫ জনের ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়েছে। কিন্তু তাদের ডিএনএ অভিযোগ প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে ম্যাচ করে নাই। গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন- গ্রিলকাটা চোর এবং ডাকাত দলের সদস্য মো: বকুল মিয়াকে (২৬) ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয়। একই পেশায় একই দিন গ্রেফতার মো: কামরুল হাসান ওরফে অরুণ (২৭), মো: রফিকুল ইসলামকে (২৫)। তারা এখনো জেল হাজতে আছেন। মো: মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু (২৫) গ্রেফতার হওয়ার পর বর্তমানে জামিনে আছেন। এ ছাড়াও গ্রিলকাটা চোর মো: আবু সাইদ (২৮), এইচআর বিভাগে প্রাইভেট সেক্টরে চাকরিজীবী মো: তানভীর রহমান (২৯) বর্তমানে জামিনে আছেন। সাগর-রুনির বাসার নিরাপত্তা প্রহরী পলাশ রুদ্র পাল (৩০) এনাম আহমদ ও আমিনুল হক কলিম (২৩)। তারা বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা