নতুন ড্যাপে আকর্ষণীয় অনেক প্রস্তাব, বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়
- হামিম উল কবির
- ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
নতুন ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) আকর্ষণীয় অনেক প্রস্তাব রয়েছে; কিন্তু কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে বিস্তর সন্দেহ রয়েছে। কারণ জনকল্যাণমূলক সব পরিকল্পনা অনেক সময় গোষ্ঠী স্বার্থে হয় বাদ পড়ে যায়, নয়তো আংশিক বাস্তবায়ন অথবা সংশোধনী আনতে আনতে তা আর জনকল্যাণের কিছু থাকে না। গোষ্ঠীর স্বার্থের কাছে হেরে যায় জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ঢাকা শহরের জন্য নেয়া জনকল্যাণমূলক বেশিরভাগ পরিকল্পনা শেষ পর্যস্ত পুরোপুরি বাস্তবায়ন হতে পারেনি স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাবে। ঢাকার প্রথম ড্যাপে যেভাবে বন্যা প্রবাহ এলাকা চিহ্নিত করা হয় শেষ পর্যন্ত সেগুলো বাণিজ্যিক এলাকায় রূপান্তর হয়ে যাওয়ার উদাহরণ রয়েছে। এর আগে ১৯৫৯ সালে প্রণীত ঢাকার প্রথম পরিকল্পনার অর্ধেকও বাস্তবায়ন হয়নি, তা বাস্তবায়ন হলে পুরান ঢাকায় এখনো নৌকায় যাতায়াত সম্ভব হতো, বিশেষ করে ধোলাইখালের আশপাশ এলাকায়।
বর্তমানে ২০২২ থেকে ২০৩৫ সালের বাস্তবায়নাধীন ড্যাপে বেশ কিছু আকর্ষণীয় এবং জনকল্যাণমূলক প্রস্তাবনা রয়েছে, কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে পরিকল্পনাবিদদের কাছে। যেমন নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন ড্যাপে পাঁচটি আঞ্চলিক পার্ক, ৪৯টি পানিকেন্দ্রিক পার্ক (ওয়াটার বেজড পার্ক), পাঁচটি ইকোপার্ক এবং অন্যান্য পার্কের জন্য আটটি স্থান নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। এমনকি পরিবেশ নির্মল রাখতে নতুন ড্যাপে মোট ১১০ একর জায়গায় ১১টি কমপোস্ট প্ল্যান করার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। পরিকল্পনাবিদদের অনেকেই বলছেন, আপাত দৃষ্টিতে কমপোস্ট প্ল্যান্টের কথায় অনেকের চোখ কপালে উঠতে পারে; কিন্তু ঢাকার দুই কোটি মানুষের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হলে কমপোস্ট প্ল্যান্টের বিকল্প নেই। এ ধরনের প্ল্যান্ট বাস্তবায়ন হলে নোংরা-ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখবে না ঢাকাবাসী। আবার গাছের পরিচর্যায় কাজে লাগবে কমপোস্ট সার।
নতুন ড্যাপে ১২৩টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রস্তাবনাও রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনবহুল এই শহরে মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতি নজরই দেয়া হয়নি এর আগে। রাজউক প্রণীত ড্যাপে প্রস্তাবিত ১২৩ স্বাস্থ্য কেন্দ্র বাস্তবায়ন হলে ঢাকাবাসী উপকৃত হবে; কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেছেন অনেকেই। নগরজীবনে মানুষকে স্বস্তি দিতে ঢাকায় ছয় লাখ ৪৪ হাজার গাছ রাখার কথাও বলা হয়েছে। ঢাকায় গাছপালা ও জলাভূমি কম রয়েছে এটা প্রায় সব ঢাকাবাসী জানেন। পরিকল্পনায় ঢাকার ২০ শতাংশ স্থানে গাছগাছালি থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র দুই শতাংশ স্থানে। গাছগাছালি অথবা সবুজ বনানী তাপ শোষণ করে পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করে। গ্রীষ্মকালে ঢাকা হয়ে ওঠে বসবাসের অনুপযোগী। গ্রীষ্মের দিনগুলোতে এতো তাপমাত্রা থাকে যে মাঝে মাঝে মনে হয় কেউ যেন মুখে আগুনের বাতাস ঢেলে দিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে গরমের সময়টাতে ঢাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশি থাকে; কিন্তু ঢাকার পাশে সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছগাছালি বেশি থাকায় সেখানে ঢাকার চেয়ে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কম থাকে। এই গবেষণাটি করা হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং অ্যান্ড জিআইএস’র উদ্যোগে। বন বিভাগের হিসাবে দেশের ১৪ শতাংশ এলাকাজুড়ে গাছপালা রয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে মাত্র ৯ শতাংশ। বিশ্বের বনজ সম্পদ পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ’ পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ঢাকার ৫.৯ শতাংশ এলাকায় রয়েছে গাছপালা।
পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ড্যাপে প্রস্তাবিত ছয় লাখ ৪৪ হাজার গাছের পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করতে পারলে আবারো ঢাকা বসবাসযোগ্য হয়ে উঠবে, গরমের মাত্রাও কমে আসতে পারে। এর বাইরে ঢাকা হয়ে উঠবে সবুজ-শ্যামল, দেখলেই মন জুড়িয়ে যাবে। আরবান লাইফলাইন ঠিক রাখতে ঢাকায় ৫৬৬ কিলোমিটার নদীপথ বা জলপথ বাস্তবায়নের প্রস্তাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো: আশরাফুল ইসলাম বলেন, রাজউক পরিকল্পনাবিদসহ অন্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে আগামী ২০৩৫ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য জনকল্যাণমূলক অনেক প্রস্তাব করেছে। সরকার এবং নগরবাসীর সহযোগিতায় রাজউক চেষ্টা করবে প্রস্তাবনা অনুসারে নগরকে সুন্দর রূপে গড়ে তুলতে। সবার সহযোগিতা পেলে সামনের দিনগুলোতে ঢাকা অনুপম একটি নগরীতে পরিণত হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা