সরকারের লোকজনের কথা শুনলে মনে হয় তারা ‘সম্ভবত লক্ষ্যচ্যুত’ হচ্ছেন
কর্মশালায় তারেক রহমান- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তির কথাবার্তা দেখে মনে হচ্ছে তারা সম্ভবত নিজেদের লক্ষ্য থেকে কিছুটা বিচ্যুত হচ্ছেন। তাদের বিভিন্ন বিবৃতি থেকে সংশয় তৈরি হচ্ছে, মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে।
গতকাল ঢাকা বার আইনজীবী ফোরামের ‘৩১-দফা’ প্রশিক্ষণ' শীর্ষক কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, বিগত ১৫-১৬ বছরে প্রত্যেকটি সেক্টরে যে অরাজকতা, অন্যায় হয়েছে, তা আপনাদের স্মৃতিতে রয়ে গেছে। আপনারা বিভিন্ন নির্যাতন-অত্যাচারের কাহিনী শুনেছেন। বর্তমানে আলোচিত শব্দ ‘বৈষম্যের’ শিকার হয়েছেন। বিএনপিসহ যেসব দল মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিল, তাদের নেতাকর্মীদের কী অবস্থা হয়েছে, আপনারা চাক্ষুষ দেখেছেন। সবক্ষেত্রে একটা ভঙ্গুর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা প্রায় আড়াই বছর আগে ৩১ দফা ঘোষণা করেছি। আমাদের অতীতের রাষ্ট্রপরিচালনার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এই ৩১ দফা উপস্থাপন করেছি। আমরা দেখেছি স্বৈরাচারের সময় অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, প্রশাসনসহ সব সেক্টর ধ্বংস হয়েছে। আমরা এখন কতগুলো পলিসি বা সিদ্ধান্ত না নিলে দেশকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করা সম্ভব নয়।
তারেক রহমান বলেন, যে সময় কেউ সাহস করেনি সংস্কারের কথা তুলতে, স্বৈরাচারের চোখে চোখ রেখে বলতে যে, এই এই বিষয়ে সংস্কার করা দরকার, তখন বিএনপি ও রাজপথের আন্দোলনের কিছু দল মিলিতভাবে আমরা ৩১ দফা দিয়েছিলাম। আজকের অনেক ব্যক্তি সে সময় সংস্কারের ‘স’ এর ধারে কাছেও ছিলেন না। কিন্তু বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সেদিন ৩১ দফা উপস্থাপন করেছিল। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের লক্ষ্য আছে যে কিভাবে আমরা দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে চাই। ৩১ দফায় আমরা বলেছি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে আবার প্রবর্তনের কথা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া ইত্যাদি। আরেকটি বিষয় আছে নৈতিক পরিবর্তন, রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন। এই বিষয়গুলোকে অ্যাড্রেস করতে হলে, সংসদের মধ্য দিয়ে করতে হবে। সংসদ ছাড়া কিভাবে এগুলো বাস্তবায়ন করা যায়, তা একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার বোধগম্য নয়।
তিনি বলেন, যারা সংস্কারের কথা বলছেন, আমার ধারণা তারাও এটা বুঝতে সক্ষম যে, যাই করি না কেন, এটা এক-এগারোর সরকারেও দেখেছি, তারাও অনেক বড় বড় কথা বলেছিল। কিন্তু পরে যখন পার্লামেন্ট বসেছিল, স্বৈরাচার যখন ক্ষমতা নেয় যদিও ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঘাপলা ছিল। ক্ষমতায় যাওয়া স্বৈরাচারের বিভিন্ন কথাবার্তা থেকে সেটা বেরিয়ে এসেছে। যা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত এবং নির্বাচনের ফলাফলের বিভিন্ন বিশ্লেষণেও দেখা গেছে। তারপরও গণতন্ত্রের স্বার্থে সেটা আমরা মেনে নিয়েছিলাম। তখন কিন্তু সংস্কার প্রস্তাবকে অন্যভাবে পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছিল। কারণ সেটি প্রকৃত জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ছিল না।
এবার আর সেবারের তফাত এটাই যে, এবার সংস্কারের প্রস্তাব প্রথম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি দেশের মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছে। যেহেতু প্রথম প্রস্তাব আমরা দিয়েছি, সেহেতু এটা বাস্তবায়ন করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। আর যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, তবে অবশ্যই সংসদের প্রয়োজন। জনগণের রায়ের মাধ্যমে যে সংসদ আসবে, সেই সংসদই একমাত্র সংস্কার প্রস্তাবকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হবে, যোগ করেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, কোন নির্বাচন আগে হবে, কোন নির্বাচন পরে হবে- এমন দাবি থাকতেই পারে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা বিবেচনা করতে হবে। আমরা বাইরে তাকালে বিভিন্ন অস্থিরতা দেখতে পাই। অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে, দেশের মানুষ যে সিদ্ধান্ত নিতে চায়, তার সাথে একমত পোষণ এবং দেশের মানুষকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করা। আমরা লক্ষ্য করছি, সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তির কথাবার্তা দেখে মনে হচ্ছে তারা সম্ভবত সেই লক্ষ্য থেকে কিছুটা বিচ্যুত হচ্ছেন। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন বিবৃতি থেকে সংশয় তৈরি হচ্ছে, মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে।
রাজনীতিতে যখন সংশয় থাকবে, তখন অস্থিরতা তৈরি হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অস্থিরতা থাকলে আমরা যে যতই সংস্কারের কথা বলি না কেন, কোনোটাই সফল হবে না। রাজনীতি অস্থির হলে, এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে, আর অর্থনীতির প্রভাব পড়বে সবকিছুতে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারসহ সব মানুষের এখন লক্ষ্য হওয়া উচিত দেশকে যত দ্রুত সম্ভব একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসা।
সারা পৃথিবীতে রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক সংসদে নিয়ে আসা হয় মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, সংসদ সবচেয়ে বড় জায়গা যেখানে রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়। আমরা সংসদকে কার্যকর করতে যত দেরি করব, এই অস্থিরতা, তর্ক-বিতর্ক ততই বাইরে ছড়াতে থাকবে। আর যত ছড়াবে, সবক্ষেত্রে অস্থিরতা তত বাড়বে, যা সামগ্রিকভাবে দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
তিনি বলেন, তালি পাওয়া কথা বলা সহজ, কিন্তু বাস্তবতা অনেক ভিন্ন এবং রূঢ়। বাস্তবতায় আমাদের অনেক বিষয় বুঝে মেনে চলতে হয়। আমি বলতে চাই, কোনটি আগে করব তা নিয়ে বেশি বিতর্ক চলতে থাকলে জাতি সামগ্রিকভাবে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেবে। সেজন্য বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা মনে করি, দেশকে যত দ্রুত সম্ভব একটি স্থিতিশীল অবস্থা আনা যাবে, তত দ্রুত ধ্বংসের কিনারা থেকে বের করে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন, অনেকে বলে থাকেন যে, ‘নির্বাচন হলেই কি সব সমস্যা সমাধান হবে?’ আমরা বলছি, নির্বাচন হলে একটা স্থিতিশীল অবস্থা আসবে এবং ধীরে ধীরে পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে, তাতে সমস্যার তীব্রতা ধীরে ধীরে কমবে। নির্বাচন হলে সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন জন দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন, তারা আলোচনা করবেন, কাজ করবেন। একদিনে কিছুই পরিবর্তন হবে না, কিন্তু সম্ভাবনা শুরু হবে।
তারেক রহমান আরো বলেন, আমাদের ৩১ দফার উদ্দেশ্যই ছিল কিভাবে দেশ ও দেশের মানুষের অবস্থার উন্নতি ঘটানো যায়। এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের সুযোগ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল পেলে তা বাস্তবায়নে যথাসাধ্য চেষ্টা থাকবে। আমরা ৩১ দফা দিয়েছি, অন্তর্বর্তী সরকারের ছয়টি কমিশন বিভিন্ন সুপারিশ দিয়েছেন। মিলিয়ে দেখলে দুটোর মধ্যে খুব একটা তফাত পাওয়া যাবে না। কিছু পার্থক্য থাকলেও, মূল বিষয়গুলোর মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। ৩১ দফা শুধু আমাদের নয়, বাংলাদেশের জনগণের একটি বৃহৎ অংশের মতামতের প্রতিফলন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা