২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ শাবান ১৪৪৬
`

সুরমা কুশিয়ারায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণে বিএসএফের বাধা

সিলেটে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা
-


সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা-কুশিয়ারার জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে ৮০ কিলোমিটারজুড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজে নামলেই বাধা দিচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। তারা সরাসরি বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে অস্ত্র তাক করে আছে। কাজ বন্ধ না করলে গুলি ছোড়ার হুমকি দিচ্ছে। বিএসএফের এমন হুমকিতে গত চার মাস ধরে ৩০টি স্থানে বন্ধ রয়েছে বাঁধ মেরামতের কাজ।
গোটা সিলেট জেলাকে আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ‘প্রি-আপ’ নামে প্রায় ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে শুরু হয়ে এই প্রকল্প চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ভারতের বাধার মুখে বাঁধ নির্মাণের এই বিশাল কাজ কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে।
সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ মেরামত ও নতুন করে নির্মাণ করতে মাটি ফেলে ভরাট করা সম্ভব না হওয়ায় আগামী বর্ষা মৌসুমে সিলেটের জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলাসহ এই অঞ্চলের ১৪-১৫টি উপজেলায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সীমান্ত নদী সুরমা-কুশিয়ারায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণে বাধা না দিতে তারা যৌথ নদী কমিশনকে (জেআরসি) চিঠি দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে সভা ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাতে কোনো সাড়া দিচ্ছে না।
এ দিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিএসএফ যেভাবে কাজে নামলেই গুলি করার হুমকি দিচ্ছে তাতে কাজ করা সম্ভব নয়। বিএসএফ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আগ্রাসী ভূমিকা চালাচ্ছে অথচ বিজিবি সেরকম কোনো প্রতিবাদ করছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সুরমা-কুশিয়ারা নদীর অর্ধশত স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েক দফায় বন্যায় প্লাবিত হয় জকিগঞ্জ কানাইঘাটসহ পুরো সিলেট। বন্যাপরবর্তী পুরাতন বাঁধ মেরামত ও নতুন বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পাউবো। বিগত অর্থবছরে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারও নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু মাটি ভরাটের কাজ শুরু হলে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বিএসএফ। ফলে শ্রমিকরা কাজ করতে পারছেন না।

জানা যায়, ভারত থেকে নেমে আসা বরাক নদী জকিগঞ্জের আমলশীদ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সুরমা-কুশিয়ারা নামে দু’দিকে প্রবাহিত হয়। নদী দুটির প্রায় ৬৬ কিলোমিটার অংশ সীমান্ত নদী হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে কুশিয়ারার ৪১ কিলোমিটার ও সুরমার ২৫ কিলোমিটার আন্তঃসীমান্ত নদী।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাজে বিএসএফের বাধা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস নয়া দিগন্তকে জানান, বিএসএফের বাধার কারণে সুরমা কুশিয়ারার অন্তত ৩০ স্থানে বাঁধ নির্মাণের কাজ করা যাচ্ছে না। বিএসএফ আমাদেরকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বাঁধের কাজে নামলেই তারা শুট করবে। এস্কেভেটর ও ড্রাম ট্রাক নিয়ে মাটি ভরাটের কাজ করতে গেলেই বিএসএফ বন্দুক তাক করে ভয় দেখায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তিনি জানান,এই প্রকল্পের মোট ৫টি প্যাকেজের দু’টিতেই কাজ শুরু করে আমরা বাধার মুখোমুখি হচ্ছি।
মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইব্রাহিম ট্রেডার্স এর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ইঞ্জিনিয়ার এমরান হোসেন বাচ্চু নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে বলেন, সীমান্ত এলাকা জকিগঞ্জের মানুষ সাহসী এবং দেশপ্রেমিক। তারা আমাদের কাজে দূর থেকে মাটি কেটে এনে দিচ্ছে। নানাভাবে সাহস যোগাচ্ছে। তবে তিনি বিজিবির ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বিএসএফের গুলি তাক করার ঘটনার পরও বিজিবির সেরকম কোনো প্রতিবাদ প্রতিরোধ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবির জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ এমদাদুল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট। সীমান্ত নদী হওয়ার কারণে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পাদিত একটি চুক্তিকে সামনে আনছে। আমরা পাউবোকে বলেছি এ বিষয়ে যৌথ নদী কমিশনে চিঠি লিখে বৈঠকের আয়োজন করে বিষয়টি সমাধান করতে।
সরেজমিন জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মানিকপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কুশিয়ারার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের (পুরাতন) বিশাল অংশ নতুন করে নদীতে ভেঙে পড়ছে। ভয়াবহ ভাঙনের ফলে গাছপালা ও কৃষিজমি কুশিয়ারায় হারিয়ে গেছে। একদিকে বিএসএফের বাধায় পুরাতন বাঁধের ভাঙন বেড়েই চলেছে, অন্যদিকে নতুন করে এসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে এই এলাকার হাজার হাজার মানুষ ভয়াবহ বন্যার আতঙ্কে রয়েছেন। জকিগঞ্জের রারাই এলাকার বাসিন্দা মাওলানা আলাউদ্দিন তাপাদার বলেন, আমরা কুশিয়ারা পাড়ের মানুষ ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছি। ২০২২ ও ২০২৪ সালের বন্যায় আমাদের আশপাশের ৮-১০টি গ্রাম মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী মানিকপুর গ্রামের বিশাল এলাকাজুড়ে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁধ না হলে আমাদের কয়েকটি ইউনিয়নের বিশাল এলাকা বন্যায় ভেসে যাবে। মানিকপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, বিএসএফের বাধার কারণে এ বছর শুষ্ক মৌসুমে বাঁধে মাটি ভরাটের কাজ করতে না পারায় আমরা এলাকাবাসী ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছি।

এ বিষয়ে নয়া দিগন্তের সাথে কথা বলেন জকিগঞ্জের বারহাল ইউপির চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী। তিনি জানান, বিএসএফ বলছে সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর কোনো কাজ করতে দেবে না। কিন্তু আমাদের পুরাতন ডাইকগুলো (বাঁধ) সীমান্তের ৫০-১০০ গজের ভেতরে। আমরা যখন বাঁধ মেরামত করতে যাই ঠিক তখনই বিএসএফ শক্তভাবে আমাদের বাধা দিচ্ছে। কাজ বন্ধ না করলে গুলি করার হুমকি দিচ্ছে। তিনি জানান, আইন অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতরে কৃষিকাজ, মাছ আহরণ ও পানি ব্যবহারসহ বেশ কিছু বিষয়ে অনুমতি রয়েছে। অতীতে নদীর বাঁধ নির্মাণের কাজে বিএসএফ কখনো বাধা দেয়নি। বন্যায় সুরমা-কুশিয়ারায় যেসব স্থানে ভাঙন দেখা দিতো শুকনো মৌসুমে পাউবো সেসব স্থানে মাটি ফেলে বাঁধ নির্মাণের কাজ করতো। কিন্তু এ বছর বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হলে বিএসএফ বাধা দিচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কুশিয়ারার মাইজকান্দি, ছবড়িয়া, শৈষ্যকুড়ি, বাখরশালসহ ১০-১২টি এলাকায় এবং সুরমার হাজিগঞ্জ, বাল্লা গ্রামসহ ৫-৭টি এলাকায় পুরনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে প্রবল ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিএসএফের বাধায় এসব এলাকায় বাঁধ মেরামত করতে না পারায় আগামী মৌসুমে বিনা বাধায় বন্যার পানিতে ভেসে যাবে লোকালয়। এতে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বন্যা দেখা দেবে। ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ফসলহানির আশঙ্কা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
জার্মান নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার করতে হবে : রফিকুল ইসলাম খান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে পৃথক অধিদফতর গঠনের সুপারিশ ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা কুষ্টিয়ার-দৌলতপুরে চরাঞ্চলের সাইফ বাহিনীর প্রধান আটক শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন ওবায়দুর রহমান কোনো চাপ বা কারো নির্দেশনায় কাজ করবে না নির্বাচন কমিশন : ইসি ফুলবাড়ীতে পিকনিকের বাস উল্টে আহত ১৬ পবিপ্রবিতে বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ২ দাউদকান্দিতে স্কুলশিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ নেত্রকোনায় ফিরছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর

সকল