অজ্ঞাত প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ২৯ মিলিয়ন ডলার
বাংলাদেশ সম্পর্কে ট্রাম্প- কূটনৈতিক প্রতিবেদক
- ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৪
বাইডেনের আমলে বাংলাদেশের নাম না জানা এক প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৯ মিলিয়ন বা দুই কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত শুক্রবার ওয়াশিংটনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর গভর্নরদের কর্ম অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার সময় ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমি শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে দেশটির জন্য প্রায় দুই কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছিল বাইডেন প্রশাসন। নামহীন কোনো এক প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে এই অর্থ পাঠানোর কথা ছিল, যেখানে নাকি কাজ করতো মাত্র দু’জন। ২৯ মিলিয়ন ডলার! তারা চেক পেয়েছে। কল্পনা করতে পারো? তোমার একটা ছোট্ট প্রতিষ্ঠান আছে, এখানে-ওখানে ১০ হাজার ডলার করে পাও, আর তারপর হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্র সরকার থেকে ২৯ মিলিয়ন ডলার পেয়ে যাও! ওই প্রতিষ্ঠানে মাত্র দু’জন লোক কাজ করে। দু’জন! আমি মনে করি, তারা খুব খুশি, খুব ধনী হয়ে গেছে। শিগগিরই তারা একটা নামকরা বিজনেস ম্যাগাজিনের কভারে চলে আসবে, কারণ তারা বেশ ‘সফল’!’
ভারতকে অর্থ সহায়তা দেয়ার কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ভোটার উপস্থিতির জন্য আমার বন্ধু নরেন্দ্র মোদি ও ভারতের কাছে ২১ মিলিয়ন ডলার যাচ্ছে! আমরা ভারতে ভোটার উপস্থিতির জন্য ২১ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছি। আমাদের কী হবে? আমিও চাই ভোটার উপস্থিতি।
ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ইউএসএআইডি ও ডিএফআইডির অর্থায়নে স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ (এসপিএল) কর্মসূচির আওতায় রাজনৈতিক দলগুলোর সক্ষমতা তৈরি এবং রাজনৈতিক সহিংসতা কমানোর পাশাপাশি দল ও সংগঠকদের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে তারা কাজ করে। এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
সরকারি অর্থের অপচয় রোধ এবং ফেডারেল অর্থের কৃচ্ছ্রতাসাধনে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের আদেশে গঠিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সির (ডোজ) নির্দেশে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এক টুইট (এক্স) বার্তায় বরাদ্দ বাতিলকৃত দেশ ও প্রকল্পগুলোর তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, বাতিল হওয়া প্রকল্পগুলো আন্তর্জাতিক সহায়তা ও অভ্যন্তরীণ উদ্যোগ সংক্রান্ত, যা অত্যাবশ্যকীয় নয় এবং নতুন প্রশাসনের অগ্রাধিকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বরাদ্দ বাতিলের তালিকায় বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও নেপাল, মালদোভাসহ আরো কয়েকটি দেশ রয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ককে প্রধান করে ডোজ গঠিত হয়েছে। তিনি মহাকাশ যান পাঠানো স্পেসএক্স, বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলা, স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা স্টারলিংক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সসহ বিশ্বসেরা বেশ কিছু কোম্পানির কর্ণধার।
ডোজের কোপানলে পড়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নেপাল। দেশটির ফিসক্যাল ফেডারেলিজম প্রকল্পের দুই কোটি ডলার এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রকল্পের এক কোটি ৯০ লাখ ডলারের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।
ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই গত ২০ জানুয়রি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কার্যকারিতা ও বৈদেশিক নীতির সাথে সামঞ্জস্যতা যাচাই করতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছিলেন। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন। তবে জরুরি খাদ্য সহায়তা এবং ইসরাইল ও মিসরের জন্য সামরিক অর্থায়নকে এ সিদ্ধান্তের বাইরে রাখা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড। গত ২৫ জানুয়ারি এক চিঠিতে ইউএসএইড’র সহায়তায় কার্যক্রম পরিচালনা করা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ কথা জানিয়েছেন সংস্থার পরিচালক ব্রায়ান অ্যারন। এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। ইউএসএআইডির সহায়তায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প বন্ধ হওয়ার প্রায় এক হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেয়া হলেও এ সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব অন্যান্য ক্ষেত্রে ক্যাম্পগুলোতে পড়েছে।
ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধের কারণে এক হিসাবে বাংলাদেশের ৩২৭ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) ১০ হাজার কর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশসহ একাধিক ক্ষেত্রে মার্কিন সহায়তা কার্যক্রম ঝুঁকিতে রয়েছে। ড. ইউনূস বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি এন জ্যাকবসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা