বৈষম্যমুক্ত সমাজের অঙ্গীকার
ভাষাশহীদদের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা- সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক
- ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৫৪
অমর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাতের প্রথম প্রহর থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানুষের ঢল নামে। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে দলে দলে মানুষ ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে আসেন। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তারা ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও সব শ্রেণিপেশার মানুষ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণে শামিল হন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথমে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ১০ মিনিটের ব্যবধানে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা শ্রদ্ধা জানান।
এরপর একে একে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্টদূত, কূটনীতিক ও হাইকমিশনাররা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পর্যায়ক্রমে তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা। এরপর বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার এবং আনসার, বিজিবি, র্যাব, এনএসআইর মহাপরিচালকরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে রাত ১২টা ৪০ মিনিটে সর্বস্তরের মানুষের জন্য শহীদ মিনার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেণিপেশার মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এ সময় শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম রাত ১টা ২৭ মিনিটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় সংগঠনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, সদস্যসচিব আরিফ সোহেল, দফতর সম্পাদক জাহিদ আহসানসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা।
জুলাই-অগাস্টে ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলায়নের পর প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারিতে এবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজনে ছিল সেই অভ্যুত্থানের ছাপ। প্রতি বছর শহীদ মিনার এলাকার দেয়ালে বিভিন্ন স্লোগান, কবিতা ও গানের লাইন লেখা হলেও এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে গ্রাফিতি। কোনো কোনো দেয়ালের উপরে ব্যানার বসানো হয়েছে, যেগুলোয় বিভিন্ন গান ও কবিতার লাইন কিংবা নানা স্লোগানে একুশকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
একুশের প্রথম প্রহরে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাল চট্টগ্রামের মানুষ
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে যথাযথ মর্যাদায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি পালন উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম কেন্দ্র্র্র্রীয় শহীদ মিনারে একুশের প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।
ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রথমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেন।
এরপর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো: জিয়াউদ্দীন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো: আহসান হাবীব পলাশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমন্বয়কসহ সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর পরপর মহানগর বিএনপি, বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, সামাজিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা নিবেদন পূর্বে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৫২ সালে ভাষার জন্য সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারদের আত্মত্যাগ করেছেন ’৭১ এ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া লাল-সবুজের পতাকা, নব্বইয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন আর ’২৪-এর ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যের বিকল্প নেই, ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।