২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ২২ শাবান ১৪৪৬
`
আজহারের মুক্তির দাবিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি গণ-অবস্থান

আমরা ফ্যাসিবাদের জ্বালা থেকে এখনো মুক্ত হতে পারিনি : ডা: শফিক

জাতীয় প্রেস ক্লাবে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন ডা: শফিকুর রহমান : নয়া দিগন্ত -


জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল কারারুদ্ধ এ টি এম আজহারুল ইসলামের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে গণ-অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলে গতকাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এ দিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াত আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদীদের তাড়িয়েছে; কিন্তু আমরা ফ্যাসিবাদের জ্বালা থেকে এখনো মুক্ত হতে পারিনি।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকিরের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সভায় আরো আলোচনা করেন- কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, কামাল হোসেন, ড. আব্দুল মান্নান, কামরুল আহসান হাসান, ড. মোবারক হোসেন, ডিইউজে সভাপতি মো: শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদীরা যেসব অপকর্ম করত, সেই অপকর্ম যদি আমিও করি তাহলে আমিও একজন ফ্যাসিবাদী। আমরা বারবার অনুরোধ করে বলেছি, দয়া করে শহীদের রক্তের প্রতি সম্মান জানান। দয়া করে আহত-পঙ্গু ভাই-বোনদের প্রতি সম্মান দেখান। তাদের রক্তকে, জীবনকে, তাদের ইজ্জতকে, তাদের আবেগকে, তাদের ত্যাগকে মেহেরবানি করে অপমানিত করবেন না।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ভাষা আন্দোলনে অধ্যাপক গোলাম আযমের যতটুকু অংশ ততটুকু অংশের স্বীকৃতি দিতে অসুবিধা কোথায়? বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরী, যিনি ভাষা আন্দোলনের স্মারকের কাজ করেছিলেন তাকে কোথাও স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে না কেন? তমদ্দুন মজলিস নামের যে সংগঠন এ আন্দোলনের সূচনা করল তারা ইতিহাস থেকে দূরে কেন? যার যেখানে জায়গা তাকে সেখানে জায়গা করে দিতে হবে। এ আন্দোলনের যার যতটুকু অবদান তার স্বীকৃতি দিতে হবে।

তিনি বলেন, ঘাটে-ঘাটে যে চাঁদাবাজি হয় এর কারণে প্রত্যেকটা দ্রব্যমূল্য বহুগুণ বেড়ে যায়। এর চাপ এ দেশের শ্রমজীবী মানুষের ওপর পড়ে। এমনকি রাস্তার আমার একটা ভিক্ষুক ভাই অথবা বোনের ওপরেও পড়ে। তাহলে তো আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা কেন এই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবো, কেন আমরা নীরবে সহ্য করব? কাজেই এ ব্যাপারে আমাদেরকে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, বিনয়ের সাথে বলি, এ কাজ বন্ধ করুন। জাতিকে স্বস্তির সাথে বাঁচতে দিন, সামনে এগিয়ে যেতে দিন। আবার যাতে ফ্যাসিবাদের নতুন ধারার অধ্যায় তৈরি না হয়, তা থেকে ফিরে আসুন। ফিরে না এলে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমরা এ লড়াই বাদ দেবো না। আমরা অবিরাম চলা সৈনিক। আমি দুনিয়া থেকে চলে যেতে পারি; কিন্তু এই কাফেলা থাকবে ইনশাআল্লাহ।
এর আগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প উদ্বোধন করেন ডা: শফিকুর রহমান। মহানগরী দক্ষিণ কার্যালয়ের সামনে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে ব্লাড গ্রুপিং, রক্তদান, ফ্রি রোগী দেখা ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।

ঢাকা মহানগরী উত্তর : ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন জাতি হিসেবে আমাদের জন্য গর্বের এবং ‘প্রেরণার উৎস’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি ও সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ। গতকাল রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনের কাউন্সিল হলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন- কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও মাওলানা ইয়াছিন আরাফাত এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন ও মোস্তাফিজুর রহমান ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। অধ্যাপক গোলাম আযম ও প্রিন্সিপাল আবুল কাসেমসহ ইসলামপন্থীরা এ আন্দোলনের সূচনা ও নেতৃত্ব দিলেও রাম-বামেরা তা হাইজ্যাক করেছে। ভাষা আন্দোলনের অগ্রসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম হলেও তাকে অবমূল্যায়ন করে ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে একুশে পদক থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি সব ধরনের হীনম্মন্যতা পরিহার করে শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযমকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয়ার আহ্বান জানান।
২৫ ফেব্রুয়ারি গণ-অবস্থান : জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গণ-অবস্থান কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। বিবৃতিতে তিনি বলেন, এ টি এম আজহারুল ইসলাম তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের মিথ্যা ও সাজানো মামলায় বিগত ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আটক আছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলের অনেক নেতাকর্মী মুক্তি লাভ করেছেন। দেশবাসী আশা করেছিল, চরম জুলুম-নির্যাতনের শিকার এ টি এম আজহারুল ইসলামও স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে মুক্তি লাভ করবেন; কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় সাড়ে ছয় মাস পার হওয়া সত্ত্বেও এ টি এম আজহারুল ইসলাম মুক্তি লাভ করেননি। এতে দেশবাসী হতবাক ও বিস্মিত।

গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে জামায়াত আমির ডা: শফিকুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জানিয়ে তিনি কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
যে ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে সেখানেই শেখ হাসিনার বিচার হবে
ফুলতলা (খুলনা) সংবাদদাতা জানান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, যে ট্রাইব্যুনালে মিথ্যা, সাজানো, পাতানো মামলায় নিজামী, মুজাহিদ, আব্দুল কাদের মোল্লা, মীর কাসেম আলীসহ জামায়াতের শীর্ষনেতাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে সেই ট্রাইব্যুনালেই মানবতাবিরোধীদের মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনার বিচার হবে। তবে শেখ হাসিনার আমলের ট্রাইব্যুনালে মিথ্যা মামলা আর কথিত বিচার হলেও এখন সঠিক বিচার হলেই শেখ হাসিনা শাস্তি পাবেন।
৫ আগস্টের পর অনেক আসামি মুক্তি পেলেও জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামকে বিনা অপরাধে এখনো কারাগারে থাকতে হচ্ছে উল্লেখ করে জামায়াতের এই শীর্ষনেতা বলেন, এ জন্য আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে গণ-অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ওই অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি দেশবাসীকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের বিরুদ্ধে নই, জুলুমের বিরুদ্ধে’।

ফুলতলা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় বেজেরডাঙ্গা আকিজ মাহফিল মাঠে অনুষ্ঠিত কমী সম্মেলন-২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। ফুলতলা ইউনিয়ন আমির মাস্টার মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন- কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমির মাওলানা এমরান হুসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামীর খুলনা জেলার সহকারী সেক্রেটারি প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, ফুলতলা উপজেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল আলিম মোল্যা, নায়েবে আমির মাওলানা শেখ ওবায়দুল্লাহ, সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল হাসান খান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সেক্রেটারি আলী আকবর মোড়ল। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, খুলনা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবু ইউসুফ ফকির, জামায়াত নেতা আশরাফুল আলম, ছাত্রশিবির নেতা মোহাম্মদ হোসাইন, যুব বিভাগের সভাপতি মেহেদী হাসান জুলহাস মোল্লা, ছাত্রশিবির নেতা মো: আব্দুর রহিম খান, মো: ইরান মোল্লা, ড. আজিজুল হক, শেখ মো: আলাউদ্দিন, জহুরুল ইসলাম, জামায়াত নেতা ইঞ্জিনিয়ার সাব্বির আহমেদ, শ্রমিক নেতা এমরান হুসাইন, এস এম নূরুল ইসলাম বাবুল গাজী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম, ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরিফুল ইসলাম।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, ৫৩ বছরে দেশের মানুষ অনেক সরকারের শাসন দেখেছে। এখন দেখতে বাকি জামায়াতের শাসন। নতুন বাংলাদেশ গড়তে বর্তমান অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে জামায়াত সহযোগিতা করতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেকে আছে এখনই নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় বসতে চায়; কিন্তু আমরা বলেছি, যেসব জায়গায় বিগত ১৫ বছরের জঞ্জাল রয়েছে সেগুলো আগে পরিষ্কার করে, সংস্কার করে তারপর নির্বাচন দিতে হবে। দেশবাসী আর ২০১৪, ২০১৮ আর ২০২৪-এর মতো কোনো নির্বাচন দেখতে চায় না। বিগত তিনটি নির্বাচনে আ’লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশলীগ মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি। আর কোনোদিন তেমন নির্বাচন এ দেশের মানুষ দেখতে চায় না। দেশবাসী চায় একটি পরিচ্ছন্ন, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।’

 

 


আরো সংবাদ



premium cement