রমজানের আগে বাজার স্থিতিশীল থাকলেও ভোজ্যতেলে সঙ্কট কাটেনি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৩
রমজান মাস শুরু হতে আর কয়েক দিন বাকি। দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র রমজানের আগমন বার্তা। প্রতি বছর রমজানের আগে ছোলা, ডাল, চিনি, ভোজ্যতেল, মুড়ি ও খেজুরের মতো পণ্যগুলোর চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে এসব পণ্যের দাম। তবে এ বছর রমজান ঘিরে ভোগ্যপণ্যের দাম এখনো অনেকটাই স্থিতিশীল। যদিও প্রায় একমাস ধরে চলা সয়াবিন তেলের সঙ্কট এখনো কাটেনি। অর্থাৎ বলা চলে সয়াবিন তেল ছাড়া রমজান শুরুর আগে অন্যসব পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতাবিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এমন চিত্র দেখা যায়। বিভিন্ন বাজারের বিক্রেতারা বলছেন রমজানের বাকি মাত্র এক সপ্তাহ। এরই মধ্যে রমজানের পণ্য কেনাবেচা শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ মুদিদোকানে ক্রেতাদের অন্য পণ্যের সাথে ওইসব পণ্য কিনতে দেখা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকায়। গত বছর রমজানেও এ দামেই ছোলা বিক্রি হয়েছে। একইভাবে খেসারির ডাল ১১০-১২০ টাকা ও মসুর ডাল ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুর-৬ বাজারে মুদিদোকানি আব্দুল হালিম বলেন, ডালজাতীয় কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি। বরং রমজানের আগে এসব পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে। আগের বছর রমজানেও এমন দাম ছিল। মাঝে মসুরের দাম কিছুটা বেড়েছিল। তবে এখন সেটা কমেছে। দুই মাস আগে চিনির দাম বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি কেজি ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এখন তা কিছুটা কমে ১১৫-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, এসব ভালো খবরের মধ্যে অস্থিরতা রয়ে গেছে সয়াবিন তেলের বাজারে। ভোজ্যতেলের সরবরাহ সঙ্কট এখনো কাটেনি। বিভিন্ন দোকান ঘুরে সয়াবিন তেলের বোতলের দেখা মেলেনি। সরবরাহ সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে কিছু কিছু বিক্রেতা ১৭৫ টাকা লিটারের তেল ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন বলে ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন। অনেকে তেলের বোতল কেটে ড্রামে ঢেলে চড়া দামে খুচরায় বিক্রি করছেন।
তেল না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন ক্রেতা বলেন, রমজানের আগে সয়াবিন তেলের চাহিদা যখন বেড়ে যায় সরবরাহকারীরা তখন ইচ্ছাকৃতভাবে সরবরাহ কমিয়ে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে। এটি মানুষের পকেট কাটার ধান্দা। এবার অন্যসব পণ্যের মুনাফা তেলে উঠাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা এমন মনে করছেন ক্রেতারা।
রমজানের আরেকটি অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজ। এ বছর ভরা মৌসুম হওয়ার কারণে পেঁয়াজ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। ৪৫-৫০ টাকার মধ্যে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন ক্রেতারা। রমজান ঘিরে বাজারে মুড়ি ও খেজুরের চাহিদাও বাড়ে। বাজারে এখন প্রতি কেজি মুড়ি ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরও এমন দাম ছিল বলে বিক্রেতারা জানান।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, খেজুরের দাম কিছুটা কমেছে। গত বছর রমজানের আগে পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক বেড়েছিল। এবার সে তুলনায় খেজুরের বাজার স্থিতিশীল। প্রতি কেজি সাধারণ মানের খেজুর ২৫০-৩০০ টাকা এবং ভালো মানের খেজুর ৪০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে অন্যসব পণ্যের দামে তেমন নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। এ দিকে স্বস্তি রয়েছে ডিম ও সবজির দামে। বাজারে সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। এতে কমেছে দাম। বর্তমানে শালগম ৩০-৪০ টাকা, ধরন ভেদে শিম ৩০-৫০ টাকা ও টমেটো ২০-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বেগুন ৪০-৫০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা ও লাউ ২০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি এখন ২০-২৫ টাকা।
শাহীনুল আলম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, শীতের শেষ দিকে এমনিতেই সবজির দাম কিছুটা বাড়তে শুরু করে। তবে যেহেতু সামনে রমজান আসছে, সেসময়ে বাড়তি চাহিদাকে কেন্দ্র করে সবজির দাম বেড়ে যেতে পারে। তাই রোজায় সবজির বাজার সহনশীল পর্যায়ে রাখতে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
সবজিবিক্রেতা মো: রাসেল মিয়া বলেন, পুরো বছরের মধ্যে শীতের সময়টাতে সবজির দাম সবচেয়ে কম থাকে। আবার আস্তে ধীরে শীত চলে গেলে দামও বাড়তে থাকে। সেই হিসেবে এখনো বাজারে পর্যাপ্ত শীতের সবজি আছে, যে কারণে দামটাও সহনীয় রয়েছে। তিনি বলেন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁয়াজপাতা বাজার থেকে অনেকটাই কমে গেছে। যে কারণে এগুলোর দামটাও একটু বেড়েছে। এ ছাড়া ঢেঁড়স, ধুন্দল, চিচিঙ্গাসহ গরমকালের কিছু সবজি আসছে, সেগুলোরও দামটা একটু বেশি।
বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দামও সহনশীল রয়েছে। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩০০-৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা