২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ২২ শাবান ১৪৪৬
`

৪ বন্দীর লাশ ইসরাইলকে হস্তান্তর হামাসের

-

  • পশ্চিমতীরের ইসরাইলের হামলায় ৩ ফিলিস্তিনি নিহত
  • ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যানের কথা পুনর্ব্যক্ত আব্বাসের
  • গাজা নিয়ে আলোচনা করতে সৌদিতে সিসি

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় প্রথমবারের মতো ইসরাইলি বন্দীদের লাশ হস্তান্তর করল হামাস। তাদের হাতে বন্দী থাকা দুই শিশু ও মাসহ চারজনের লাশ গতকাল বৃহস্পতিবার গাজা থেকে ইসরাইলে আনা হয়েছে। দুই শিশু কেফির বিবাস ও অ্যারিয়েল বিবাস এবং তাদের মা শিরি বিবাসকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর বন্দী করা হয়েছিল। ওই সময় শিশু দু’জনের বয়স ছিল যথাক্রমে ৯ মাস ও চার বছর। চতুর্থ ওদেদ লিফশিৎজের বয়স ৮৪ বছর।
চার বন্দীর লাশ রেড ক্রসে স্থানান্তর করার আগে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এতে বলা হয়েছে, চার বন্দীর লাশ আজ (বৃহস্পতিবার) ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে, তারা ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছে। হামাস বলেছে, তারা বন্দীদের রক্ষা করতে এবং ‘তাদের জীবন রক্ষা করার জন্য নিজেদের ক্ষমতায় সব কিছু করেছে’। এতে বলা হয়েছে, ইসরাইলের ‘নৃশংস এবং ক্রমাগত বোমাবর্ষণই সব বন্দীকে উদ্ধার করতে বাধা দিয়েছে’।
বন্দীদের পরিবারকে সরাসরি সম্বোধন করে হামাস বলেছে, তাদের জীবিত ফিরিয়ে দেয়া যোদ্ধাদের পছন্দ ছিল। এতে যোগ করা হয়েছে, ‘আপনি এমন একটি নেতৃত্বের শিকার ছিলেন, যে তার সন্তানদের যতœ নেয় না। আপনার সেনাবাহিনী ও সরকারি নেতারা তাদের ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে তাদের হত্যা করা বেছে নিয়েছিল।’ হামাস বলেছে, তারা তার হেফাজতে থাকা ইসরাইলি বন্দীদের বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিল, কিন্তু গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জোরের অধীনে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হাতে তারা নিহত হয়েছিল।
এ দিকে গাজার খান ইউনুস থেকে রেডক্রসের যানবাহন চারটি কালো কফিন নিয়ে চলে যায়। প্রতিটি কফিনের ওপরে বন্দীদের একটি ছোট ছবি সংযুক্ত ছিল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সময় বন্দীদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ ছিল এই দুই শিশু। ওই সময় তাদের বিবাস পরিবারের আরেক সদস্য, শিশু দু’টির বাবা ইয়ারদেন বিবাসকেও বন্দী করা হয়। তবে এর আগে চলতি মাসে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় গাজা থেকে মুক্তি পেয়েছেন ইয়ারদেন বিবাস।

তবে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুই শিশু ও মায়ের ভাগ্যে কী ঘটেছে, সেটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না। লাশগুলোর ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ইসরাইলের কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক ভিডিওবার্তায় বলেন, ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্য বৃহস্পতিবার ভীষণ কঠিন একটি দিন, বিষণœ একটি দিন, শোকের একটি দিন।
যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে এবং কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গত মাসে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে সই হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় বন্দিমুক্তি দেয়া হচ্ছে। বিপরীতে ইসরাইলের কারাগারগুলোয় দিনের পর দিন আটক থাকা অনেক ফিলিস্তিনি মুক্তি পাচ্ছেন।
পশ্চিমতীরের ৩ ফিলিস্তিনিকে হত্যা : এ দিকে ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিমতীরে ইসরাইলি বাহিনীর গোলাবর্ষণে তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ভূখণ্ডটির একটি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বাহিনী গুলি ও গোলাবর্ষণ করলে প্রাণহানির এ ঘটনা ঘটে। নিহত ফিলিস্তিনিদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে দাবি করেছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, অধিকৃত পশ্চিমতীরের তুবাসের কাছে আল-ফারা ক্যাম্পে বুধবার ইসরাইলি বাহিনীর হাতে তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনী ওয়াফাকে জানিয়েছে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী তাদের বাড়িতে গুলি ও শেল নিক্ষেপ করার পর ওই তিনজন নিহত হন।

মূলত ইসরাইল এক সপ্তাহ ধরে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। এই আক্রমণে পশ্চিমতীরে শরণার্থী শিবিরে বহু ঘরবাড়ি তারা ভেঙে দিয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোও ধ্বংস করে দিয়েছে। এ ছাড়া গত ২১ জানুয়ারি পশ্চিমতীরের জেনিনে শুরু হওয়া ইসরাইলি অভিযানের কারণে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলি সৈন্য বা বসতি স্থাপনকারীরা অধিকৃত পশ্চিমতীরে প্রায় ৯০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
ফিলিস্তিন বিক্রির জন্য নয় : নিজেদের ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিন বিক্রির জন্য নয়। এমনকি গাজা, পশ্চিমতীর বা জেরুসালেম- ফিলিস্তিনের কোনো অংশই পরিত্যাগ করা হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গত বুধবার আবারো বলেছেন, তার দেশ ‘বিক্রয়ের জন্য নয়’ এবং একই সাথে ফিলিস্তিনি জনগণের বাস্তুচ্যুতির যেকোনো পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যানও করেছেন তিনি।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় পশ্চিমতীরের রামাল্লায় ফাতাহর কেন্দ্রীয় কমিটির একটি সভার উদ্বোধনী বক্তৃতার সময় প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এসব কথা বলেন। শনিবার শেষ হওয়া আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনে তার অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে এ দিন আব্বাস বলেন, তিনি ফিলিস্তিনি জনগণকে বাস্তুচ্যুত করার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ফিলিস্তিন বিক্রির জন্য নয়। ফিলিস্তিনের দৃঢ় অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে গাজা, পশ্চিমতীর বা জেরুসালেমসহ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কোনো অংশই ছেড়ে দেয়া হবে না বলেও জোর দেন তিনি। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট আব্বাস এ দিন ‘ফিলিস্তিনি সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধানের ভিত্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক বৈধতা ও আরব শান্তি উদ্যোগকে মেনে চলার গুরুত্বের ওপরও জোর দিয়েছেন।’
সৌদি সফরে সিসি : মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি গাজার উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। আরব রাষ্ট্রগুলো গাজা পুনর্গঠনের জন্য যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করার পরিকল্পনা করছে। সম্ভবত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা উপত্যকা পুনর্নির্মাণের প্রস্তাবের বিরুদ্ধেই অবস্থানই প্রাধান্য পাবে তাদের আলোচনায়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনর্গঠনের নামে গাজা খালি করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি চান জর্দান, মিসর ও সৌদি আরবের মতো দেশগুলো বাস্তুচ্যুত এসব ফিলিস্তিনিকে আশ্রয় দিক। আর ট্রাম্পের কথা মেনে যদি মিশর ও জর্দান এসব ফিলিস্তিনকে আশ্রয় না দেন, তবে সাহায্য বন্ধ করে দেয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।


আরো সংবাদ



premium cement