গুম ব্যক্তির স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন র্যাব কর্মকর্তা আলেপ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৩৪
পুলিশের সাবেক এডিশনাল এসপি ও র্যাবের তদানিন্তন কোম্পানি কমান্ডার আলেপ উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনের শুনানিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সবচেয়ে মারাত্মক। তিনি অসংখ্য মানুষকে গুম ও নির্যাতন করার সাথে জড়িত। অনেককে এই আলেপ উদ্দিন গুম করে বছরের পর বছর আটকে রেখেছিলেন। তাদের নিষ্ঠুরতম পন্থায় নির্যাতন করেছিলেন। বৈদ্যুতিক শক দেয়া, চোখ বেঁধে রাখা, উল্টো করে ঝুলিয়ে পেটানোর অভিযোগ এই আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আলেপ উদ্দিন ২০১৭-১৯ সালে র্যাবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সালে আলেপ এক ব্যক্তিকে গুম করেন। ওই ব্যক্তিকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া স্ত্রীকে তিনি দুবার ধর্ষণ করেন। রমজান মাসে রোজা রাখা অবস্থায় ওই নারীকে রোজা ভাঙিয়ে তিনি ধর্ষণ করেন। ওই নারী পরে ডিপ্রেশনে ভুগে মারা গেছেন। তিনি বলেন, আলেপের বিরুদ্ধে ১০টি অভিযোগ এসেছে। তদন্তের স্বার্থে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল আলেপকে ২৬ ফেব্রুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। গতকাল চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
আদেশের পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনালে গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় আবেদন ছিল পুলিশের সাবেক এডিশনাল এসপি ও র্যাবের সাবেক কোম্পানি কমান্ডার আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তাজুল ইসলাম বলেন, সবচেয়ে মারাত্মক কাজ এই আলেপ উদ্দিন করেছিলেন, একজন আসামিকে গুম করে রাখার সময়ে তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে (স্বামীকে হত্যার) রমজান মাসে রোজা ভাঙিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়েছে। এমন তথ্যপ্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। আমরা বিষয়গুলো ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছি। এমন নিষ্ঠুরতম অপরাধের তদন্ত করতে সময় লাগবে, কারণ প্রতিদিনই ভিকটিমরা আমাদের কাছে নতুন নতুন অনেক অভিযোগ নিয়ে আসছেন। এসব তদন্ত শেষ হলে তাদের ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে আনুষ্ঠানিক বিচারপ্রক্রিয়া যেন শুরু করা যায়, সে জন্য আমাদের তদন্ত সংস্থা দিনরাত কাজ করছে।
নিষ্ঠুরতম নির্যাতনের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন মহিউদ্দিন ফারুকী : ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, ট্রাইব্যুনালে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় মামলা ছিল র্যাবের একজন সাবেক কোম্পানি কমান্ডার এডিশনাল এসপি মহিউদ্দিন ফারুকীর বিরুদ্ধে। তিনি অসংখ্য মানুষকে গুম করার সাথে জড়িত। গুমের শিকার মানুষদের তার অফিসসহ বিভিন্ন আয়নাঘরে রেখে অমানবিক নিষ্ঠুরতম পন্থায় নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতন করার ব্যাপারে তিনি ছিলেন একজন মাস্টারমাইন্ড। তার এ বিষয়ে স্পেশাল কোয়ালিটি আছে। আয়নাঘর উন্মোচিত হওয়ার পর ভিকটিমরা সাহসী হচ্ছেন এবং এক এক করে অভিযোগগুলো আমাদের ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসছেন। সেসব অভিযোগ আমাদের তদন্ত কার্য পরিচালনা করছি। তিনি বলেন, তার মামলাতে আমরা সময় চেয়েছি তিন মাসের। আগামী ২৮ মে পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে ট্রাইব্যুনালে শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, মহিউদ্দিন ফারুকী বহু মানুষকে গোপন বন্দিশালায় রেখে নানাভাবে নির্যাতন করেছেন। গোপনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দিয়েছেন। তারকাটাযুক্ত জুতা পরতে বাধ্য করেছেন। বহু গুমের মামলায় তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তিনি নির্যাতনের চ্যাম্পিয়নদের অন্যতম।
সাবেক আইজিপিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২৮ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ : জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক আইজপি এবং এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালকসহ ১০ কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। গতকাল তাদের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ও কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আসা দু’টি পৃথক প্রিজন ভ্যানে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে আরো দুই মাস সময় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিষয়ে আগামী ২৮ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ দিকে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি এক দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দিয়েছেন। গতকাল চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালে যাদের হাজির করা হয় তারা হলেন- সাবেক পুলিশপ্রধান (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব:) জিয়াউল আহসান, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো: আবদুল্লাহ আল কাফি, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান, ডিএমপি মিরপুরের সাবেক ডিসি মো: জসিম উদ্দিন মোল্লা, ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো: শাহিদুর ইসলাম, ডিবি ঢাকা উত্তরের সাবেক পরিদর্শক মো: আরাফাত হোসেন এবং ডিএমপি গুলশান থানার সাবেক ওসি মো: মাজহারুল হক। এ ছাড়া র্যাবের দুই সাবেক কর্মকর্তাকেও হাজির করা হয়। তারা হলেন সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) মহিউদ্দিন ফারুকী ও বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা