নাইকোসহ সব মামলায় খালাস খালেদা জিয়া
- হাবিবুর রহমান
- ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:০০
- অর্ধশতাধিক মামলার সব ক’টি থেকেই অব্যাহতি পেলেন
- রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলা করা হয়েছিল : আদালতের পর্যবেক্ষণ
আলোচিত নাইকো দুর্নীতি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ মামলার অপর সাত আসামিকেও খালাস দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক রবিউল আলম এ রায় ঘোষণা করেন।
সর্বশেষ নাইকো দুর্নীতি মামলা থেকে খালাস পাওয়ার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ান ইলেভেনের সময় ও আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দায়ের করা অর্ধশতাধিক মামলার সব ক’টি থেকে খালাস বা অব্যাহতি পেয়েছেন বলে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালাস পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন- তৎকালীন মুখ্যসচিব কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউসুফ হোসাইন, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, কোনো সাক্ষী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। অন্য আসামিদের বিরুদ্ধেও কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে আদালত সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলা করা হয়েছিল।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়েই নাইকোর সঙ্গে চুক্তি করা হয়। পরবর্তীতে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করলে আন্তর্জাতিক সেই চুক্তি বলবৎ রাখেন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নাইকোর দুর্নীতির ঘটনায় শেখ হাসিনার নামে একটি মামলা দায়ের করে। পরে খালেদা জিয়ার নামেও একটি মামলা দায়ের করা হয়।
এ মামলার মূল দায় বা অভিযোগ ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। তিনি কৌশল করে তার মামলাটি বাতিল করে নিয়ে গেছেন। আর বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও নানা কৌশলে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার লক্ষ্যে মামলাটি চলমান রাখেন। খালেদা জিয়া কোনো দুর্নীতি করেননি। এমনকি তিনি ক্ষমতার অপব্যবহারও করেননি।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আমিনুল ইসলাম, জাকির হোসেন ভূঁইয়া, জিয়া উদ্দিন জিয়া, হারুন অর রশীদ ভূঁইয়া, আবদুল খালেক মিলন, হাফিজ হারুন অর রশীদ খান মিজান, আবুল কালাম খান, হান্নান ভূঁইয়া প্রমুখ। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রেজাউল করিম।
রায় ঘোষণার পর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় (২০০৭) এই মামলা তৈরি হয়েছিল। প্রথম মামলা করে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। ওয়ান ইলেভেনের অবৈধ সরকারের উদ্দেশ্য ছিল খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া। গত ১৬ বছর খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত থেকে এ মামলা মোকাবেলা করেছেন। এই মামলা চলাকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর প্রায় দুই বছর হাসপাতালে থাকার পর তিনি সেই অসুস্থতার পর করোনার কারণে তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা অন্যায়ভাবে এই নাইকো চুক্তি করেছিলেন। আজ আদালত রায়ে বলেছেন, সেটার সব দায়দায়িত্ব শেখ হাসিনার ওপর বর্তায়। খালেদা জিয়া শুধু পরবর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন মাত্র। সেই দায়িত্ব পালন করার কারণে ওয়ান ইলেভেনের সরকারের ইঙ্গিতে তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য এ মামলায় আসামি করা হয়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা আদালতকে ব্যবহার করে এ মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। আর খালেদা জিয়ার মামলা বছরের পর বছর টানা হয়েছে যাতে দেশ এবং দেশের বাইরের মানুষের কাছে তার সম্মানহানি ঘটে।
খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, আদালত বেগম খালেদা জিয়াসহ সব আসামিকে এ মামলা থেকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন। এই মামলায় ৩৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে আদালত রায় ও পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, কোনো সাক্ষী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। দ্বিতীয়ত, এই মামলার আসামি সেলিম ভূঁইয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ছিল। পুলিশ রিমান্ডের নামে তাকে চারদিন টর্চার করে সেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। সেই জবানবন্দী তিনি প্রত্যাহার করেছেন। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী স্বেচ্ছা প্রণোদিত ছিল না। এ ছাড়া অন্য যে অভিযোগগুলো আছে সবগুলো শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবং অন্যান্য আসামির বিরুদ্ধেও কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে আদালত সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলা জিইয়ে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর হলেও আদালত বেগম খালেদা জিয়াকে খালাস দিয়েছেন। আদালতে ন্যায়বিচার পেয়েছেন তিনি। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো মামলা যে সাজানো ছিল খালাসের রায়ে তা প্রমাণিত হয়েছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: মাকসুদ উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শুনানি শেষে ১৯ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এ মামলায় ৬৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এর পর ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত।
এ মামলার আসামিদের মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো: শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের ১৯ মার্চ কেরানীগঞ্জ কেন্দ্র্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৯ নম্বর (অস্থায়ী) বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমানের আদালত এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর আদেশ দেন। এর পর মামলার অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। একই বছর ৩০ আগস্ট বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো: আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ সেই আবেদন খারিজ করে দেন।
এর পর ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মামলার বাদি মাহবুবুল আলম তার জবানবন্দী শেষ করেন। এর পর ওই বছর ১৭ অক্টোবর তাকে জেরা শেষ করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। এর পর ওই বছর ৩০ ও ৩১ অক্টোবর রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেন পুলিশের দুই সদস্য কেবিন দু¹ান ও লয়েড শোয়েপ এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করে দুদক।
রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেছিলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডার কোম্পানি নাইকোর হাতে তুলে দেয়ার মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা