গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির শর্তে ইসরাইলি সব বন্দীকে মুক্তি দেবে হামাস
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৯
- দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে চলতি সপ্তাহে আলোচনা শুরু করবে ইসরাইল
- গাজায় আরো ৬ লাশ উদ্ধার, রাফায় ২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ঘোষণা করেছে যে, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি অর্জনের লক্ষ্যে তারা একটি নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। তা এই যে, দ্বিতীয় ধাপে অবশিষ্ট সব ইসরাইলি বন্দীকে একসাথে মুক্তি দেয়া হবে। বিনিময়ে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে সব ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। অন্য দিকে গাজায় দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা নিয়ে ইসরাইল ও হামাস পরোক্ষ আলোচনা শুরু করবে বলে গত মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আলজাজিরা, রয়টার্স ও আনাদোলু
হামাসের ঘোষণার বিষয়ে এখনো কোনো অবস্থান ব্যক্ত করেনি ইসরাইল । বরং দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি বর্ধিত করার লক্ষ্যে আসন্ন আলোচনায় ইসরাইলের শর্ত হলো হামাসকে নিরস্ত্র করা এবং গাজায় তাদের কোনো উপস্থিতি না রাখা। পাশাপাশি, যুদ্ধপরবর্তী পরিস্থিতিতে গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা না রাখা।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন, হামাসের হাতে থাকা সব বন্দীর মুক্তি তখনই সম্ভব হবে যখন ইসরাইল স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করবে এবং গাজা থেকে সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহার করবে। হাজেম কাসেম আরো জানান, মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধে হামাস বন্দিমুক্তির সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে এবং তারা যুদ্ধবিরতি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। কাসেম বলেন, ‘হামাসকে গাজা থেকে সরিয়ে দেয়ার ইসরাইলি দাবি হাস্যকর। এটি কেবল একটি মনস্তাত্ত্বিক কৌশল। প্রতিরোধ চলবে, নিরস্ত্রীকরণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘গাজার ভবিষ্যৎ ব্যবস্থা জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।’
অপর দিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি এক বৈঠকে মন্ত্রীদের বলেছেন, যুদ্ধবিরতি বর্ধিত করতে আসন্ন দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় ইসরাইলের শর্ত হলো হামাসকে নিরস্ত্র করা এবং গাজায় তাদের কোনো উপস্থিতি না রাখা। পাশাপাশি যুদ্ধপরবর্তী পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা না থাকা।
গত সোমবার রাতে ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এই খবর প্রকাশ করে দেশটির সংবাদমাধ্যম চ্যানেল-১২। বৈঠকে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার প্রসঙ্গও আসে। যদিও এটি ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শুরু হয়নি। ইসরাইলি সম্প্রচারমাধ্যম কান নিউজের খবরে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু গাজার সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণেরও দাবি জানিয়েছেন। বৈঠকের পর মঙ্গলবার ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা’আর বলেছেন, দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা ‘এ সপ্তায়ই’ শুরু হবে। এ পর্যায়ে অবশিষ্ট বন্দীদের মুক্তি, গাজা থেকে ইসরাইলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের সমাপ্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আসন্ন আলোচনায় ইসরাইলের অবস্থান সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়ে সা’আর বলেন, আলোচনায় গঠনমূলক অগ্রগতি হলে ইসরাইল আলোচনার সময়সীমা বাড়ানোর ব্যাপারে আগ্রহী থাকবে এবং যুদ্ধবিরতি দীর্ঘায়িত হতে পারে।
সা’আর বলেন, ‘যদি আলোচনায় ইতিবাচক দিক থাকে এবং চুক্তিতে পৌঁছানোর বাস্তব সম্ভাবনা থাকে, তবে আমরা এই সময়সীমা আরো দীর্ঘ করব।’ তবে বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহুর দাবির সাথে বন্দীদের মুক্তিসংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি কিভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে তা অনিশ্চিত। কারণ, বন্দীদের মুক্তির একমাত্র সম্ভাব্য উপায় হতে পারে হামাসকে গাজায় কিছুটা কার্যকর অবস্থায় থাকতে দেয়া, যা নেতানিয়াহু বারবার প্রত্যাখ্যান করেছেন।
আলজাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেছেন, বন্দী ও যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের প্রশ্নে হামাস ও ইসরাইল উভয় পক্ষই নৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘হামাস ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ছে। যদিও সাম্প্রতিক বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়ায় এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, হামাস এখনো ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারছে; কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তারা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। বরং তারা দুর্বল অবস্থানে আছে।’
বিশারা আরো বলেন, ‘ইসরাইলের সমস্যা হলো, তারা শক্তিশালী হলেও হামাসকে সম্পূর্ণ পরাজিত করতে পারছে না। তবে বাস্তবতা হলো, ইসরাইল এখনো পুরো প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে- কবে, কোথায় সাহায্য প্রবেশ করবে তা নির্ধারণ করছে এবং বিকল্প আশ্রয় প্রকল্পগুলো না পৌঁছানো পর্যন্ত, এটি ফিলিস্তিনিদের জন্য পরিস্থিতি আরো কঠিন করে তুলছে।’ বিশারা আরো বলেন, ‘প্রকৃত সমস্যা শুধু প্রথম ধাপে নয়, বরং দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপেই সবচেয়ে বেশি জটিলতা দেখা দেবে।’
দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে চলতি সপ্তাহে আলোচনা : ফিলিস্তিনের গাজায় দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা নিয়ে ইসরাইল ও হামাস পরোক্ষ আলোচনা শুরু করবে বলে গত মঙ্গলবার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ দিকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের নেতা খলিল আল-হায়া বলেছেন, বৃহস্পতিবার ইসরাইলের বিবাস পরিবারের সদস্যসহ চার বন্দীর লাশ ফেরত দেয়া হবে। আর শনিবার জীবিত ছয় বন্দীকে হস্তান্তর করা হবে।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় নিশ্চিত করেছে, আজ বৃহস্পতিবার চার বন্দীর লাশ, শনিবার ছয় জীবিত বন্দী ও এরপর আরো চারজনের মুক্তি নিশ্চিত করতে মিসরের কায়রোতে একটি চুক্তি হয়েছে। তবে বন্দীদের কারো পরিচয় প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছে নেতানিয়াহুর কার্যালয়।
একজন ইসরাইলি কর্মকর্তা বলেছেন, মৃত বন্দীদের নাম প্রকাশের আগে তাদের শনাক্তকরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা গত ৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু আলোচনা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি বলে জানিয়েছে কাতার। দেশটি মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিলে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতার কাজ করছে। ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার জেরুসালেমে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এটি (দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা) এ সপ্তায়ই হবে।’ তিন ধাপের যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপের আলোচনায় অংশগ্রহণের বিষয়ে ইসরাইল গত কয়েক সপ্তাহে মিশ্র সঙ্কেত দিয়েছে। গাজা যুদ্ধের স্থায়ী অবসানের লক্ষ্যে ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর হয়।
আরো ৬ লাশ উদ্ধার : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরো ছয় ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৪৮ হাজার ২৯১ জনে পেঁৗঁছে গেছে। অন্য দিকে গাজার রাফায় দুই ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। একই সাথে অধিকৃত পশ্চিমতীরে জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত তিনটি স্কুলেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। গতকাল বুধবার পৃথকভাবে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু এবং সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
আনাদোলু বলছে, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মী ও উদ্ধারকর্মীরা গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে আরো ছয়জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৪৮ হাজার ২৯১ জনে পৌঁছেছে বলে মঙ্গলবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলি গোলাবর্ষণে গত ২৪ ঘণ্টায় একজন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন এবং তারাও প্রাণহানির এই সংখ্যার মধ্যে রয়েছেন। এ ছাড়া আরো ১৩ জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এতে করে ইসরাইলি আক্রমণে আহতের সংখ্যা এক লাখ ১১ হাজার ৭২২ জনে পৌঁছছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় পর গত মাসেই ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। তবে এর পর থেকেই সেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিহতদের লাশ। আর এতে করে বেড়েই চলেছে প্রাণহানির সংখ্যা। আলজাজিরা বলছে, ইসরাইলি বাহিনী দক্ষিণ গাজার রাফাতে আরো দুই ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং অধিকৃত পশ্চিমতীরে জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত তিনটি স্কুলের পাশাপাশি একটি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও হামলা চালিয়েছে।
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ দিন ধরে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছিল ইসরাইল । জাতিসঙ্ঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা