সাবেক আইজিপি শহীদুলের সম্পদের ২ বস্তা নথি উদ্ধার
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৮
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের আত্মীয়বাসায় অভিযান চালিয়ে দুই বস্তা দলিলসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদের নথির সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই অভিযান চালায় দুদক। গতকাল বিকেলে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকের আত্মীয়ের বাসা থেকে দুই বস্তা দলিল ও নথিপত্র উদ্ধার করেছে দুদক। তার বিরুদ্ধে অসাধু উপায়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। শহীদুল হক তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য সংবলিত নথিপত্র এক নিকটাত্মীয়ের কাছে দু’টি বস্তায় ভরে পাঠিয়েছিলেন।
দুদক মহাপরিচালক বলেন, নথিপত্রগুলো গোপন রাখার জন্য সেই আত্মীয় আবার অপর এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠান। এসব নথিপত্রে শহীদুল হকের বেআইনিভাবে অর্জিত কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য রয়েছে। তল্লাশিকালে দু’টি বস্তায় মোট ৩৮ ধরনের ৪৮টি আলামত পাওয়া যায়। যার মধ্যে রয়েছে বিপুল মূল্যমানের সম্পত্তির দলিল, বিভিন্ন গোপনীয় চুক্তিপত্র, ডিড অব অ্যাগ্রিমেন্ট, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, সংঘ স্মারকের ছায়ালিপি, অফার লেটার ও ব্যাংক হিসাব বিবরণী।
তদন্তের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকার স্থায়ী আমানত ও এফডিআরের নথি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ফারমার্স ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকে নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা রেখেছেন।
দুদক বলছে, শহীদুল হক তার অবৈধ সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র আত্মীয়দের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে ‘গোপন রাখার চেষ্টা করছিলেন’। ওইসব নথিপত্রে ‘কোটি কোটি টাকার বেআইনি সম্পদের’ তথ্য রয়েছে বলেও দুদকের জনসংযোগ দফতর জানিয়েছে।
এর আগে, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) শহীদুল হক, তার স্ত্রী শামসুন্নাহার রহমান এবং তাদের তিন সন্তানের নামে থাকা ৭২টি ব্যাংক হিসাবে ৫৬০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছিল।
অনুসন্ধানে তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশনের একাধিক ব্যাংক হিসাবেও বিপুল লেনদেনের তথ্য উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই ৭২টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৫৬০ কোটি ২৮ লাখ টাকা জমা পড়েছিল, যার মধ্যে ৫৫০ কোটি টাকা তোলা হয়েছে। বর্তমানে এসব হিসাবে মাত্র ১০ কোটি ২০ লাখ টাকা অবশিষ্ট রয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য বিএফআইইউ ওই প্রতিবেদন দুদকে পাঠায়।
শহীদুল হক ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আইজিপির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই ২০০৯ সালে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হন। পুলিশ বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি সংবাদপত্রে কলাম লিখতেন। টেলিভিশন চ্যানেলে টকশোতে অংশ নিতেন। এ ছাড়া ২০২২ সালের ২৮ মে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ কে এম শহীদুল হকের ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি স্বৈরাচার পতন থেকে জঙ্গি দমন’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ওই বইটিতে সাবেক আইজিপি তার চাকরিজীবনের ঘটে যাওয়া নানা সুখ-দুঃখ প্রতিবন্ধকতা ও পুলিশের নানা চ্যালেঞ্জসহ দীর্ঘ ৩২ বছরের অভিজ্ঞতার নানা দিক তুলে ধরেছেন। তিনি গুলশানে তার নিজ বাসায় থাকতেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শহীদুল হক আত্মগোপন করেন। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বরে ঢাকার উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টর থেকে যৌথবাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। এরপর তাকে বিভিন্ন থানার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। গ্রেফতারের পর আদালতের নির্দেশে কয়েক দফায় রিমান্ডেও নেয়া হয় পুলিশের এই সাবেক মহাপরিদর্শককে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা