পরিপত্র জারির পরও ভাঙেনি বিমানের টিকিট সিন্ডিকেট
- খালিদ সাইফুল্লাহ
- ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৫, আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০৫
সরকার পরিপত্র জারি করার পরও ভাঙেনি বিমানের টিকিট সিন্ডিকেট। বাংলাদেশ বিমান ও গুটি কয়েক এয়ারলাইন্সে অল্প কিছু টিকিট অবমুক্ত হলেও বেশির ভাগ এয়ারলাইন্স গাছাড়া ভাব দেখাচ্ছে। তারা এ পর্যন্ত টিকিট সিন্ডিকেটের কাছে কোনো চিঠি পাঠাইনি বলে জানা গেছে। ফলে সরকারের পরিপত্রের পুরোপুরি সুফল পাচ্ছেন না যাত্রীরা। এ পরিস্থিতিতে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) নেতারা সরকারের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
পবিত্র রমজানে ওমরার চাহিদা ও ফ্লাইট কমিয়ে দেয়ার সুযোগে সম্প্রতি বিভিন্ন এয়ারলাইন্স টিকিটের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। টিকিট সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভুয়া বিমানযাত্রী সাজিয়ে বেশির ভাগ টিকিট গ্রুপ বুকিং দেয়ায় প্রকৃত এজেন্সি ও যাত্রীরা টিকিট পাচ্ছে না। আর এ সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিমানের ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ।
সাধারণ এজেন্সি মালিকরা জানিয়েছেন, গত নভেম্বরে সাউদীয়া এয়ারলাইন্সের জেদ্দাগামী টিকিটের দাম ছিল জনপ্রতি ৭৫ হাজার টাকা। ডিসেম্বর পাঁচ হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ হাজার টাকা। জানুয়ারিতে বিক্রি হয় ৮৫ হাজার টাকায়। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৯৫ হাজার টাকায়। আর মার্চ মাসের টিকিট পাওয়ায় যেন দুষ্কর। মার্চে রমজান মাস হওয়ায় টিকিটের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১০-২০ হাজার থেকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
এ পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় বিমানের টিকিট সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে দু’টি কমিটি গঠন করে সরকার। টিকিট সিন্ডিকেট শনাক্ত করতে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৩ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন জানান, বিমানের টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ উদঘাটন করা হয়েছে। নাম, পরিচয় ছাড়াই গুটি কয়েক ট্রাভেল এজেন্সি সিট বুকিং করে রেখেছিল। এতে টিকিটের কৃত্রিম সঙ্কট হওয়ায় দাম দ্বিগুণ থেকে চারগুণ বেড়ে যাচ্ছিল।
সরকার এ সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এখন থেকে কোনো এজেন্সি বা ব্যক্তি অগ্রিমভাবে টিকিট সংরক্ষণ করতে পারবে না। টিকিট কাটার জন্য সংশ্লিষ্ট যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, টিকিট সিন্ডিকেটের সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। একই সাথে সিন্ডিকেটের তৎপরতা বন্ধে ১৩ সদস্যের একটি টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়েছে।
বিষয়টি সব এজেন্সিকে জানিয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি পরিপত্র জারি করে সরকার। এতে টিকিট বুকিং দেয়ার তিন দিনের মধ্যে টিকিট ইস্যু করার নিয়ম চালু করা হয়। আকাশপথের যাত্রী সাধারণের স্বার্থ সংরক্ষণে এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি রোধকল্পে দেয়া ১০ দফা নির্দেশনায় আরো বলা হয়, ১. অনতিবিলম্বে গ্রুপ টিকিট বুকিংসহ যেকোনো প্রকার টিকিট বুকিংকালে ভ্রমণেচ্ছু যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর ও পাসপোর্টের ফটোকপিসহ বুকিং সম্পন্ন করিতে হবে। বুকিং প্রদানের তিন দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট যাত্রীর নামে টিকিট ইস্যু না হলে তিন দিন বা ৭২ ঘণ্টা উত্তীর্ণ হওয়ার সাথে সাথে এয়ারলাইন্স স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ওই টিকিট বাতিলকরণ নিশ্চিত করবে; ২. পরিপত্র জারির তারিখ পর্যন্ত এয়ারলাইন্স/ট্রাভেল এজেন্সি কর্তৃক গ্রুপ বুকিংয়ের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ব্লক করা টিকিট আগামী সাত দিনের মধ্যে ভ্রমণেচ্ছু যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর ও পাসপোর্টের কপিসহ বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে।
অন্যথায় পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স এরূপ টিকিট স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বাতিল নিশ্চিত করবে; ৩. গ্রুপ বুকিংয়ের ক্ষেত্রে টিকিটের প্রকৃত বিক্রি মূল্য বিক্রির সাথে সাথে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে এবং মন্ত্রণালয় সেটা জনগণের অবগতির জন্য নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে, ৪. সব ধরনের এয়ার টিকিট অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে এবং বিক্রি করা টিকিটের মূল্য অনলাইনে এবং টিকিটের গায়ে প্রদর্শিত থাকতে হবে; ৫. এয়ারলাইন্স কিংবা ট্রাভেল এজেন্সিগুলো সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থা কর্তৃক বেবিচক বরাবর দাখিলকৃত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়ায় টিকিট বিক্রি করা থেকে বিরত থাকবে। একই সাথে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বাধ্যতামূলকভাবে যাত্রীকে এয়ারলাইন্স হতে প্রাপ্ত মূল্য সংবলিত টিকিট প্রদান এবং ওই টিকিট বিক্রির রসিদ প্রদান করবে; ৬. চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও কিংবা চাহিদার অতিরিক্ত টিকিট মজুদ করে অন্য এজেন্টের মাধ্যমে এয়ার টিকিট বিক্রির কারণে টিকিটের মূল্য বাড়লে বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০২২-এর বিধি-১৫ অনুযায়ী মূল ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন সনদ স্থগিত অথবা বাতিল করা হবে ইত্যাদি।
কিন্তু এরপর আট দিন পার হলেও বিমান ভাড়া আশানুরূপ কমেনি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জেদ্দা, রিয়াদ, মদিনা, দাম্মাম ও কুয়ালালামপুরগামী বিমানের ক্ষেত্রে ভাড়া ২৫ থেকে ১২০ ডলার পর্যন্ত কমিয়েছে। এমিরেটাস এয়ারলাইন্স গ্রুপ টিকিটগুলো দ্রুত যাত্রীর নাম, পাসপোর্টসহ কেনা সম্পন্ন করার জন্য এজেন্সির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এ ছাড়া শ্রীলঙ্কাগামী ও ইন্ডিগোর টিকিট কিছুটা পাওয়া যাচ্ছে। ভাড়াও কিছুটা কমেছে বলে হজ ও ওমরাহ এজেন্সি মালিকরা জানিয়েছেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভাড়া বেড়েছে বলেও কয়েকজন এজেন্সি মালিক জানিয়েছেন। তারা বলেন, সরকার পরিপত্র জারি করলেও তেমন কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। নামকাওয়াস্তে দু-একটি এয়ারলাইন্স পদক্ষেপ নিলেও বেশির ভাগ এজেন্সিই সরকারের এ পরিপত্রকে পাত্তা দিচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে। তারা যেসব টিকিট সিন্ডিকেট আছে তাদেরও কোনো চিঠি দিয়ে বুকিং করা টিকিট ক্রয় সম্পন্ন করতে বলেনি। সাউদীয়া এয়ারলাইন্সের মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তা তাহজীব নয়া দিগন্তকে বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।
আটাবের সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ নয়া দিগন্তকে বলেন, গুটি কয়েক এয়ারলাইন্স পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের কিছু টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। আর বেশির ভাগ এয়ারলাইন্স এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তারা চুপচাপ থেকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন বলে মনে হচ্ছে। তারা হয়তো ১০ দিন সময়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। কারণ বিগত সময়ে তারা সরকারের এ ধরনের কোনো পদক্ষেপের মুখে পড়েনি। এজন্য সরকারের মনিটরিং দরকার। যাতে তারা সরকারের নির্দেশ মানতে বাধ্য হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা