২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ শাবান ১৪৪৬
`

বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা অগ্রাধিকার পাবে : তারেক রহমান

লালমনিরহাটে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের জনসমাবেশে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন তারেক রহমান : নয়া দিগন্ত -

তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সব ফোরামে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, জাতীয়তাবাদী দল আল্লাহর রহমতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে আগামী দিনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে ইনশাআল্লাহ। পাশাপাশি অন্যান্য উৎস থেকে পানি সংরক্ষণ করে রাখার জন্য তিস্তার ডান পাশের সাতটি এবং বাম পাশে পাঁচটি শাখা বা উপনদী খনন করতে হবে। আমাদের পানির বিকল্প উৎস তৈরি করে সংরক্ষণের জন্য পানি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খালখনন কর্মসূচি চালু করব ইনশাআল্লাহ।
গতকাল বিকেল ৫টায় জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই স্লোগানে পানির ন্যায্য হিস্যা এবং মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে তিস্তা অববাহিকার এগারোটি পয়েন্টে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে লালমনিরহাটের সমাবেশ থেকে তাকে বক্তব্য দেয়ার আহ্বান জানান তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী এবং বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু।
তিস্তার আটচল্লিশ ঘণ্টার লাগাতার কর্মসূচির প্রশংসা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, উত্তরাঞ্চলের পানির এই ন্যায্য হিস্যা বঞ্চিত মানুষেরা আজ সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চায় ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তি কারো করুণার বিষয় নয়, এটা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রাপ্য।

তিস্তা পাড়ের মানুষের দুঃখ দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘হঠাৎ করে দুই দিন আগে যেমন হয়েছে উজান থেকে ছেড়ে দিচ্ছে পানি। অসময়ে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি ফসল ভাসিয়ে দিচ্ছে। প্রত্যেক বছর এই বন্যার কারণে মানুষ কষ্ট পায়। কোনো কোনো সময় একই বছর তিন বারেরও বেশি বন্যা হয়েছে এই অঞ্চলে। এই বন্যার জন্য ভাঙনে লাখো কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়।’
ভারতে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তারেক রহমান বলেন, ‘৫ আগস্টে আমরা দেখি যে একজন পালিয়ে গিয়েছে এই দেশ থেকে। সেই পালিয়ে যাওয়া হাসিনা বলেছিলেন ভারতকে আমি যা দিয়েছি সেটি তারা সারা জীবন মনে রাখবে। ভারত শুধু পলাতক স্বৈরাচারকেই মনে রেখেছে। বাংলাদেশের জনগণকে তারা মনে রাখেনি। এ জন্যই বঞ্চিত জনগণের মনে প্রশ্ন, স্বৈরাচার ভারতকে যা দিয়েছে সেই ভারত তাকে আশ্রয় দেয়া ছাড়া কি বাংলাদেশকে আর কিছু দিয়েছে।’
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে কী ধরনের সম্পর্ক হয় উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘সারা বিশ্বে সমাদৃত সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যেই সমস্যা হয়, আবার সমাধানও হয়। স্বার্থ জড়িত থাকে, স্বার্থ রক্ষা করেই সমস্যার সমাধানগুলো করা হয়। কিন্তু খুনি স্বৈরাচার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখতে গিয়ে ভারতের সেবাদাসীতে পরিণত হয়েছিল এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিশন পর্যন্ত বাতাসে পরিণত করা হয়েছিল।’

ভারতের সাথে করা সব চুক্তি পুনঃবিবেচনা এবং পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘সারা দেশের মানুষ জানে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিরাজমান ফারাক্কার সমস্যার সমাধান হয়নি। বিশেষ করে জনগণের বহু প্রত্যাশিত আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে স্বৈরাচার তাঁবেদারি সরকার ভারতকে ট্রানজিটশিপমেন্ট, বন্দর ব্যবহার চুক্তি করেছে এমনকি কোটা পর্যন্ত রক্ষা করে করা হয় নাই। বাংলাদেশের মানুষ মনে করে দেশের সাথে অসম অন্যায্য এবং একতরফা যেসব চুক্তি আছে তা পুনঃ মূল্যায়ন কিংবা পুনর্বিবেচনা করা দরকার।’
পররাষ্ট্রনীতি বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘সবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হওয়া উচিত পররাষ্ট্র নীতির। সবার প্রয়োজনে, সময়ের প্রয়োজনে এই স্লোগানটি বা এই নীতিটি করা দরকার। বর্তমান বিশ্বে স্থায়ী শত্রু স্থায়ী মিত্র বলে কিছু নেই, বরং একটা দেশের সাথে আরেকটা দেশের সম্পর্ক হবে পরীক্ষার ন্যায্যতা এবং প্রয়োজনের ভিত্তিতে। চুক্তি রক্ষা করার ক্ষেত্রে দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষাই হতে হবে প্রথম অগ্রাধিকার। তাই বিএনপির স্লোগান; সবার আগে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আর কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ চায় না। সীমান্তে কোনো বাংলাদেশীদের রক্তাক্ত দেহ আর বাংলাদেশের মানুষ দেখতে চায় না।’

আন্তর্জাতিক ফোরামে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ ভারত যদি তিস্তার পানি চুক্তি করতে অনীহা দেখায় তাহলে দেশ এবং জনগণের স্বার্থ বাঁচাতে, তিস্তাকে রক্ষা করতে আমাদেরকেই আমাদের বাঁচার পথ বেছে নিতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে বিকল্পকে কাজে লাগাতে হবে। প্রয়োজনে জাতিসঙ্ঘসহ বিশ্বের সব ফোরামে জোরালোভাবে বাংলাদেশের দাবি করতে হবে। একই সাথে প্রতিবেশী দেশের সাথে আমাদেরকে কূটনৈতিক কাজও করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, সারা দেশে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একটা স্লোগান ছিল, সেটি হলো ‘খাল কাটা হলে সারা, দূর হবে বন্যা খরা।’
হাসিনা সরকারের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার রাজনৈতিক মানবাধিকার কেড়ে নিয়ে, ভোট ডাকাতি করে, অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। খুনি স্বৈরাচারের আমলে জাতীয় নির্বাচনকে খেলনার বিষয়বস্তু বানিয়ে ফেলা হয়েছিল। বিগত ১৫টি বছর জনগণের নির্বাচিত কোনো সরকার প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ দেয়া হয় নাই। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে এই স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে মানুষের অধিকারের সুযোগ এবং সম্ভাবনা আবার তৈরি হয়েছে। ভোটের অধিকার প্রয়োগ করে দায়বদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট পক্ষের কোনো শক্তি এবং সরকারের কোনো হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে এক্ষুনি পলাতক স্বৈরাচার যেন নির্বাচনের সুযোগ না পায়। এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

কয়েকজন উপদেষ্টার বক্তব্যের সমালোচনা করে তারেক রহমান বলেন, আমাদের অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজন। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একেক উপদেষ্টার একেক বক্তব্য স্বৈরাচারী খুনি শেখ হাসিনা ও মাফিয়া চক্রের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পথ সুগম করে দেয়।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তিস্তাসহ নানা সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণের ভোটে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে অবশ্যই আমরা সবাইকে সাথে নিয়ে সমস্যার সমাধান করব। তবে যতগুলো কথা বললাম যে কিভাবে আমরা কী কী উপায়ে কী কী করব। তিস্তাপাড়ের মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব বা বাস্তবায়ন করার যে অঙ্গীকার করেছি, এই কাজ যদি আমাদেরকে করতে হয় তবে আপনাদেরকে একটি দায়িত্ব পালন করতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে আপনাদের প্রিয় দলের পাশে থাকতে হবে। আপনাদের সমর্থন দেশবাসীর সমর্থন থাকলে ইনশাআল্লাহ আমরা ক্ষমতায় এসে এই ধরনের তিস্তাসহ আরো যে যে কাজ আছে ইনশাআল্লাহ সেই কাজগুলো বা সেই সমস্যার সমাধান করার আমরা সুযোগ পাবো।’
তারেক রহমান বলেন, দুই দিন থেকে আমরা সবাই মিলে এখানে একত্রিত হয়েছি। লাখো মানুষ আপনারা এখানে প্রতিবাদ গড়ে তুলেছেন। সারা বিশ্বকে দেখিয়েছেন অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলাদেশের মানুষ কিভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য দুই দিনের এই কর্মসূচিতে আমরা প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করি। প্রতিজ্ঞা হলো জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাও জাগো বাহে বাংলাদেশ বাঁচাও।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, তিস্তায় পানি না থাকায় প্রতি বছর ১৫ লাখ মেট্রিকটন চাল কম হচ্ছে, ভেঙে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। জীবন বাঁচাতে প্রতি বছর তিস্তা পাড়ের মানুষ বিভিন্ন স্থানে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। তিস্তায় পানি আনতে বিএনপি অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাও আন্দোলন আয়োজিত কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নে থেতরাই বাজারের পাশে তিস্তা পাড়ে এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, তিস্তা আমাদের জীবন মরণের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক নদীগুলোর সব পক্ষ বসে একটা সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে। আমাদের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এই আহ্বান তিস্তা পাড়ের মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এই তিস্তা বাংলাদেশের মানুষের জীবন মরণের প্রশ্ন। মানুষ পশু পাখি জীববৈচিত্র্য তিস্তার পানির সাথে সম্পর্কিত। তিস্তা পানি সমস্যার সমাধান আমাদেরকে করতেই হবে। তিনি গতকাল বিকেলে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার থেতরাই এলাকায় তিস্তার পাড়ে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের অবস্থান কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন।
এ সময় কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপি আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রমহমান মোস্তফা, সদস্যসচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ, যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বেবু, হাসিবুর রহমান হাসিব, হায়দার আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement