গাজায় ২৬৬ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন ইসরাইলের
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২৮
- ধ্বংসস্তূপ থেকে আরো ৯ লাশ উদ্ধার
- পশ্চিমতীরে ফের ইসরাইলের ধরপাকড়
- আজ ৪ ইসরাইলির লাশ ফেরত দেবে হামাস
ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও গাজা উপত্যকায় শিশুরা এখনো সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তাদের খাদ্য, পানি, আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা এমনকি পোশাকেরও খুব একটা সুবিধা মিলছে না। অবরুদ্ধ উপত্যকা পরিদর্শনকারী ইউনিসেফের একজন মুখপাত্রের বর্ণনায় এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। আলজাজিরা, আনাদোলু ও টাইমস অব ইসরাইল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলি ও মার্কিন রাজনীতিবিদরা যখন হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ে যাওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি বিবেচনা করছেন তখন নেতানিয়াহু সরকার ‘সর্বোচ্চ সুবিধা’ আদায়ের উপায় খুঁজতে ব্যস্ত। পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূল এবং ছিটমহলে পূর্ণ মাত্রায় যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার সম্ভাবনাও বিবেচনা করছে দখলদার ইসরাইল।
গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৬৬ বার গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় ইসরাইল যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্বে যেতে কতটা আন্তরিক। ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের ফলে অন্তত ১৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ২৬ জন আহত হয়ে মারা গেছেন। শরণার্থীশিবিরে ইসরাইলের গুলির আঘাতে ও হামলায় ৯০০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছেন।
সবচেয়ে বেশি চুক্তি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে মধ্য গাজায়। সেখানে ১১০ বার, এরপর রাফায় ৫৪ বার, গাজা সিটিতে ৪৯ বার, খান ইউনুসে ১৯ বার এবং গাজার উত্তরাঞ্চলে ১৩ বার চুক্তি লঙ্ঘন হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উপত্যকাটিতে ইসরাইলের নির্মম হামলায় ৪৮ হাজার ২৭১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক লাখ ১১ হাজার ৬৯৩ জন। সরকারি গণমাধ্যম দফতর তাদের মৃতের সংখ্যা অন্তত ৬১ হাজার ৭০৯ জন জানিয়ে বলেছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার ফিলিস্তিনি এখন মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ইসরাইলি গণমাধ্যম ইয়ানেটকে দেয়া এক বিবৃতিতে অজ্ঞাত একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা দাবি করেছেন, নেতানিয়াহু ইসরাইল-হামাস বন্দিবিনিময় চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়ন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। ওই কর্মকর্তা জানান, নেতানিয়াহু রাজনৈতিক স্বার্থে বন্দীদের জীবনের বিনিময়ে কৌশল অবলম্বন করছেন।
আরো ৯ লাশ উদ্ধার : এ দিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরো ৯ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এতে উপত্যকাজুড়ে নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ৪৮ হাজার ৩০০ জনে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মী ও উদ্ধারকর্মীরা গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে আরও ৯ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলি গোলাবর্ষণে গত ২৪ ঘণ্টায় চারজন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন এবং তারাও প্রাণহানির এই সংখ্যার মধ্যে রয়েছেন।
এ ছাড়া আরো ১৬ জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এতে করে ইসরাইলি আক্রমণে আহতের সংখ্যা এক লাখ ১১ হাজার ৭০৯ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় পর গত মাসেই ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। তবে এর পর থেকেই সেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিহতদের লাশ। আর এতে করে বেড়েই চলেছে প্রাণহানির সংখ্যা।
পশ্চিমতীরে ফের ধরপাকড় : অন্য দিকে ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিমতীরে নতুন করে অভিযান চালিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এ সময় এলাকা ঘেরাও করে কমপক্ষে ২৫ জন ফিলিস্তিনিকে আটক করে তারা। চলতি মাসে এর আগেও ইসরাইলি বাহিনী এ ধরনের গণগ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করেছিল। সোমবার বন্দিবিষয়ক কমিশন এবং ফিলিস্তিনি প্রিজনার সোসাইটি এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, হেবরন এবং রামাল্লাহর বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালায় দখলদার বাহিনী।
আটকদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রাক্তন বন্দীরাও আছেন। ২১ জানুয়ারি থেকে উত্তর-পশ্চিমতীরে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানে কমপক্ষে ৫৫ জন নিহত এবং হাজার হাজার লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই গ্রেফতারের ঘটনা ঘটল। বিবৃতি অনুসারে, গত মাস থেকে এ পর্যন্ত জেনিনে কমপক্ষে ১৬০ জন এবং উত্তর-পশ্চিমতীরের তুলকারেমে ১৩০ জন ফিলিস্তিনিকে ইসরাইলি বাহিনী গ্রেফতার করেছে। নতুন গ্রেফতারের ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে পশ্চিমতীরে ইসরাইলি সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১৪হাজার ৫০০-এরও বেশি ছাড়াল। আটকদের মধ্যে ইসরাইলি কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়া ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
লাশ গ্রহণে ইসরাইলের প্রস্তুতি : যুদ্ধবিরতির চুক্তির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার চার ইসরাইলি বন্দীর লাশ ফেরত দেবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এসব লাশ গ্রহণে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। ইহুদিবাদী দেশটির গণমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরাইলের খবরে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। বন্দিবিনিময় চুক্তিতে বলা আছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার ৩৩তম দিনে মৃত বন্দীদের লাশ ফেরত দেয়া হবে। ওই ৩৩তম দিনটি বৃহস্পতিবার।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, এসব বন্দী হামাসের কাছে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন। তবে তারা কিভাবে মারা গেছেন সেটি জানানো হয়নি। দখলদার ইসরাইলের যত বন্দী এখন পর্যন্ত মারা গেছেন তাদের বেশির ভাগই তাদের সেনাদের নির্বিচার হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানায় হামাস।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা