সৌদি থেকে আউট পাসে ফেরত আসছেন শত শত বাংলাদেশী
অনেকের কাছে বাড়িতে ফেরার ভাড়াও থাকে না- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২৮
সৌদি আরবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর শত শত প্রবাসী বাংলাদেশীকে আউট পাস দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফেরত আসাদের প্রত্যেকেই জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে বৈধ ছাড়পত্র নিয়েই দেশটিতে গিয়েছিলেন।
ঢাকার বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন দিন নেই যেদিন আউট পাসে সৌদি আরব থেকে কোনো হতভাগ্য বাংলাদেশী শ্রমিক দেশে ফেরত আসছে না। আর যারা ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করছে তাদের কারো কাছেই গ্রামের বাড়ি ফেরার গাড়ি ভাড়াও থাকছে না। ফেরত আসা এসব কর্মীর অভিযোগের পাশাপাশি দাবি, সৌদি আরব পুলিশ কাজের আকামা থাকার পরও তাদেরকে রাস্তা থেকে বিনা কারণে ধরে ধরে দেশে পাঠানোর উদ্দেশ্যে বিমানে তুলে দিচ্ছে।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অ্যারাইভাল এলাকায় ডিউটি করছেন এমন একাধিক ব্যক্তি গতকাল মঙ্গলবার রাতে নয়া দিগন্তকে গত দুই মাসের চিত্র দিয়ে বলেন, প্রতিদিন সাউদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের সকাল এবং রাতের ফ্লাইটে আমাদের বাংলাদেশী শ্রমিকরা আউট পাসে দেশে ফেরত আসছেন। গড়ে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন ওয়ার্কার ফেরত আসছেন। কখনো কখনো আবার এমিরেটস এয়ারলাইন্সেও শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
ফেরত আসা শ্রমিকদের কোন বক্তব্য আছে কি না জানতে চাইলে তারা বলেন, তারা তো আমাদের কাছে এসে বলছেন, ‘আমাদের কাজ করার আকামা থাকা সত্ত্বে¡ও পুলিশ বাংলাদেশীদেরকে ধরে ধরে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আবার অনেকে বলছেন, সৌদি যাওয়ার পর তারা কাজই পাননি।
নজরুল ইসলাম নামের একজন সৌদি-ফেরত প্রবাসী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের ১৩ নম্বর কাউন্টার দিয়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বাইরে বের হয়ে আসেন। এরপর তিনি কিভাবে গ্রামের বাড়িতে যাবেন তা ভাবতে থাকেন। কারণ ওই শ্রমিকের কাছে বাড়িতে ফেরার জন্য যে গাড়ি ভাড়া দরকার সেই টাকা তার কাছে নেই। পরে বিমানবন্দরে শ্রমিকদের সমাধানে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক সংশ্লিষ্টরা ওই সব হতভাগ্য কর্মীদের গাড়ি ভাড়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন বলে জানান তারা।
ফেরত আসা শ্রমিকদের মধ্যে কেউ কেউ আবার দেশে ফেরত আসার বিষয়ে জানিয়েছেন, আমরা সৌদি আরবে বৈধ আকামা নিয়ে কাজ করে যখন বাসায় ফিরতে থাকি তখন রাস্তা থেকে পুলিশ আমাদেরকে বিনা কারণে ধরে নিয়ে যায়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদ করে পাঠিয়ে দেয় জেলখানায়। সেখানে ১৫-২০ দিন রেখে আউট পাসে দেশে পাঠানোর জন্য সরাসরি বিমানে তুলে দেয়। ফেরত আসা শ্রমিকদের ভাষ্য অনুযায়ী বর্তমানে সৌদি আরবে বাংলাদেশীদের অবস্থা অনেক খারাপ। পুলিশের ভয়ে অনেকেই বেকার থাকলেও ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস দেখান না। এর মধ্যে যারা ধরা পড়ছে তাদের ফিরতে হচ্ছে দেশে।
প্রতিদিন সৌদি আরব থেকে আউট পাসে শ্রমিকদের দেশে ফেরত আসার কারণ কী তা জানতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমিন এর সাথে গতরাতে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
অভিযোগ আছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্যসচিব তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এবং সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদের পছন্দের কর্মকর্তা হিসেবে সচিব রুহুল আমিনকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পরও সচিব রুহুল আমিন এখনো তার পদে বহাল থাকায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বিএমইটি, বোয়েসেলসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে তাকে নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে। তারা জানতে চাচ্ছেন সচিব রুহুল আমিনের খুঁটির জোর কোথায়? তার সময়ে জনশক্তি রফতানি অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে বলে জনশক্তি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেরই অভিযোগ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা