তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা দিতে চায় চীন : রাষ্ট্রদূত ওয়েন
- কূটনৈতিক প্রতিবেদক
- ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২৬
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়ো ওয়েন বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার চাইলে তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা দিতে চায় চীন। নদীসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত হাজার হাজার মানুষের কল্যাণে এই প্রকল্প যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। তবে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশই এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেবে।
গতকাল রাজধানীর বারিধারায় চীনা দূতাবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইয়ো ওয়েন এসব কথা বলেন। ওয়েন বলেন, তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকার চীনকে প্রস্তাব দিয়েছিল। প্রকল্প প্রস্তাবটি পর্যালোচনার পর ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকারকে চীন একটি প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পে অনেক অপ্রয়োজনীয় উপাদান থাকায় তা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এর পর থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে আর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
প্রসঙ্গত, তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না বা পাওয়ার চায়নার মধ্যে ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। মহাপরিকল্পনায় পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির আদলে তিস্তার দুই পাড়ে পরিকল্পিত স্যাটেলাইট শহর, নদী খনন ও শাসন, ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা, আধুনিক কৃষি সেচ ব্যবস্থা, মাছ চাষ প্রকল্প ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। চীনা কোম্পানিটি ইতোমধ্যে তিস্তাপাড়ে নির্মিতব্য প্রকল্প বাস্তবায়নে নকশা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ করেছে। তিস্তা নদী পাড়ের জেলাগুলো নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধায় চীনের তিনটি প্রতিনিধিদল কাজ করছে।
বাংলাদেশের সাথে ভারতের তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদনের ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। গত বছর ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর এই প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরুর কথা জানিয়েছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত। তবে প্রকল্পটি ভারতের ‘চিকেন নেক’ হিসেবে পরিচিতি স্পর্শকাতর অঞ্চলসংলগ্ন হওয়ায় এতে চীনের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল দেশটি। গত ৯ মে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কুমার কোয়েত্রা ঢাকায় এসে জানিয়েছিলেন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রকল্পে তারা বিনিয়োগ করতে চায়; অর্থাৎ এ প্রকল্পে পাল্টা বিনিয়োগ প্রস্তাব দেয় প্রতিবেশী দেশটি। ভারতের এই প্রস্তাব নিয়ে ইতিবাচক মনোভাবও দেখিয়েছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে রাষ্ট্রদূত ওয়েন বলেন, গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ৩০টি চীনা এন্টারপ্রাইজ বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য চুক্তি সই করেছে। বিনিয়োগের এই পরিমাণ হবে ২৩ কোটি ডলার। বর্তমানে চীনই বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী।
গত ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বেইজিং সফরের ওপর আলোকপাত করে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, এই সফরে উপদেষ্টার সাথে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন ই-সহ ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের বৈঠক হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার পর তৌহিদ হোসেনের এটিই ছিল প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর, যা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই সফর চীন ও বাংলাদেশের পারস্পরিক সমর্থনের পরিষ্কার বার্তা দেয়। এটি দুই দেশের পারস্পরিক বিশ্বাস ও বন্ধুত্বকে আরো সুদৃঢ় করার সুযোগ করে দিয়েছে। এ সফরে উভয়পক্ষ পারস্পরিক মৌলিক স্বার্থ ও প্রধান উদ্বেগগুলোতে দৃঢ় সমর্থনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদাকে সমুন্নত রাখাকে চীন দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। বাংলাদেশের আর্থসামাাজিক খাতে সহায়তা দিতে চীন প্রস্তুত রয়েছে। বাংলাদেশও ‘এক চীন’ নীতি এবং অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
চীন আগামী মে মাস থেকে বাংলাদেশ থেকে আম ও কাঁঠাল আমদানি করবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা