সব চাপ উপেক্ষা করে জন-আকাক্সক্ষা পূরণের বার্তা নিয়ে ফিরলেন ডিসিরা
- শামছুল ইসলাম
- ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২৬
জেলা পর্যায়ে মাঠ প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নিয়ে তিন দিনব্যাপী সম্মেলন গতকাল মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। গত দেড় দশকের মধ্যে ব্যতিক্রম ছিল এবারের সম্মেলন। এই সম্মেলনে সব চাপ উপেক্ষা করে জনআকাক্সক্ষা পুরনের বার্তা নিয়ে ফিরলেন ডিসিরা। সম্মেলন শেষে একাধিক জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে এমন বার্তার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ভিডিও প্রদর্শনের মাধ্যমে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন। আন্দোলনটা কিভাবে হয়েছিল, কিভাবে আন্দোলনের ফল লাভ হলো, সেই বিবরণও ছিল ভিডিও ডকুমেন্টরিতে। সম্মেলনের উদ্বোধনীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট নিয়ে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা বিভাগের একজন জেলা প্রশাসক বলেন, রাজনৈতিক সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনগুলোতে সরকারের বার্তা থাকে তাদের নিজেদের ইশতেহার ও এজেন্ডা বাস্তবায়নের। তবে এবারের সম্মেলনের বার্তা একেবারেই ভিন্ন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের বার্তা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এজেন্ডা। এটি পূরণের জন্য সব ধরনের চাপকে উপেক্ষা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
দেশের উত্তরাঞ্চলের একজন জেলা প্রশাসক বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে মাঠ প্রশাসনকে হয়রানিমুক্ত করার বার্তা দেয়া হয়েছে। সেবামূলক কাজ এবং কর্মসংস্থান বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। দ্রব্যমূল্যে লাগাম টেনে দুর্নীতি বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বার্তা দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকদের।
একটি রাজনৈতিক শক্তির পতনের পর আরেকটি রাজনৈতিক শক্তি ফিরে এসেছে। আর প্রশাসনকে সব সময় এই রাজনৈতিক শক্তির চাপেই থাকতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। এই সরকারকে সফল হতে হলে রাজনৈতিক শক্তির চাপ কমাতে হবে।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বালুমহাল, হাটবাজার ইজারা, সরকারি সম্পত্তি দখলসহ বিভিন্ন খাতে টাকার অবৈধ লেনদেন হয়েছে বড় পরিসরে। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনসহ সব ক্ষেত্রে করা হয়েছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। ফলে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বে বড় ধাক্কা খেতে হয়েছে মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি)। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি যেন আর হতে না হয়, সে জন্য আইনের শাসন ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে নিস্তার চেয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিরা।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এমন বক্তব্যের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা এখন থেকে যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করব, সেখানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও দেশের সব মানুষকে সুরক্ষা প্রদান করা। নারী ও শিশু এবং সংখ্যালঘুসহ সকল নাগরিকের সুরক্ষা দেয়া আমাদের দায়িত্ব। কে কোন মতবাদে বা রাজনৈতিক চেতনায় বিশ্বাসী সেটা বিবেচ্য নয়। কারণ সরকার দেশের সব মানুষের সরকার। তাই তাকে সুরক্ষা দেয়া আমার কাজ।
সম্মেলনের প্রথম দিনে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ তার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত অধিবেশনে বলেন, ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের সব সময় রাজনৈতিক চাপে থাকতে হয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে চাপমুক্ত কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যেহেতু নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন তাই এবার জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) নির্ভয়ে কাজ করতে পারবেন। তাদের ওপর নির্বাচন ঘিরে কোনো চাপ বা প্রভাব থাকবে না। এবার ডিসিদের দলীয় তকমার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো ডিসির ব্যাপারে রাজনৈতিক দলের আপত্তি থাকলে আমরা বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেবো। কারণ নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করার জন্য কোনো দলের পক্ষ থেকে তাদের প্রভাবিত করার সুযোগ নেই।
সম্মেলনে অংশ নিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, আইন, নীতিমালা ও সংবিধানে যা আছে সেটা মেনে চললে জনগণের সেবা আর কল্যাণ করা ছাড়া জেলা প্রশাসনকরে আর কোনো কাজ নেই। সুতরাং আমাদের শুধু একটা কথাই যে আপনি আইন অনুযায়ী চলেন, আপনি আপনার বিবেক মতো চলেন। তাদের যে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সেটা আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন।
প্রশাসনের সবচেয়ে মেধাবী কর্মকর্তারা ডিসি হন জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, কিন্তু রাষ্ট্রের এত বড় একটি রিসোর্সকে গত ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণকে অত্যাচার-নিপীড়ন আর নিজেদের অপকর্ম জায়েজ করার জন্য ব্যবহার করেছে। তাদের সাথে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, জনগণের সেবার জন্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করার জন্য, ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য, স্বাস্থ্য-শিক্ষা সেবা দেয়ার জন্য- সেই ক্যাপাবিলিটি তাদের আছে। কিন্তু সেই রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা নেই। ভবিষ্যতে যেই দলই ক্ষমতায় আসুক প্রশাসন ক্যাডারের যে অসীম সম্ভাবনার শক্তি রয়েছে, এটাকে যেন জনগণকে নিপীড়নের কাজে না লাগিয়ে সংবিধানে যেভাবে বলা আছে জনগণের সেবা করার কাজে যেন লাগায় এমনটাই প্রত্যাশা করেন উপদেষ্টা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা