গাজা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের বাস্তবায়ন চায় যুক্তরাষ্ট্র
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৩
ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা এই সপ্তাহেও অব্যাহত থাকবে। আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ইসরাইলি প্রতিনিধিরা কায়রো রওনা দিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। উইটকফ বলেছেন, ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা কিছু জটিলতার সম্মুখীন হলেও এটি ‘অবশ্যই শুরু হতে যাচ্ছে’ এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এটি বাস্তবায়ন দেখতে চান।
এর আগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গত রোববার বলেছে, মিসরে তাদের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন বন্দীদের এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয় দেখভালকারী সমন্বয়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) গাল হিরশ। তার সাথে থাকবেন ইসরাইলি নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেতের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তার নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এ দিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরাইল-হামাস বন্দিবিনিময় চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়ন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেছেন একজন সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তা। ইসরাইলি গণমাধ্যম ইয়ানেটকে দেয়া এক বিবৃতিতে এই কর্মকর্তা জানান, নেতানিয়াহু রাজনৈতিক স্বার্থে বন্দীদের জীবনের বিনিময়ে কৌশল অবলম্বন করছেন।
এ দিকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় মোবাইল হোম (কারাভান) ও ভারী নির্মাণ সরঞ্জাম প্রবেশে বাধা প্রদান অব্যাহত রেখেছে, যদিও যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী এসব সামগ্রী প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। ইসরাইলের পাবলিক ব্রডকাস্টিং করপোরেশন কান এ তথ্য জানিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, ইসরাইলের অনুমতির অপেক্ষায় গাজায় ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজে ব্যবহারের জন্য পাঠানো বুলডোজার, রোড রোলার এবং কারাভানবাহী ট্রাকগুলো দুই সপ্তাহ ধরে রাফাহ সীমান্তে আটকে রয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে হাজার হাজার ভ্রাম্যমাণ ঘরকে এখনো গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। এসব ত্রাণবহর গাজায় প্রবেশের জন্য ইসরাইলি অনুমতির অপেক্ষায় মিসরের রাফাহ ক্রসিংয়ে আটকে আছে। যুদ্ধবিরতির অধীনে ইসরাইল ৬০ হাজার ভ্রাম্যমাণ ঘর এবং দুই লাখ তাঁবু গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিতে সম্মত হয়েছিল; কিন্তু মাত্র ২০ হাজার তাঁবু প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে এবং কোনো ভ্রাম্যমাণ ঘর প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস ইসরাইলের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।
দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে : ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত উইটকফ বলেন, তিনি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল থানি এবং মিসরের গোয়েন্দা প্রধান হাসান রাশাদের সাথে ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক’ ফোনালাপ করেছেন। আলোচনায় দ্বিতীয় ধাপের সময়কাল, উভয় পক্ষের অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপ একটু বেশি জটিল, কারণ এটি যুদ্ধের অবসান ঘটানোর পাশাপাশি গাজায় হামাসের ক্ষমতা বিলুপ্ত করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করে।’ তবে চুক্তিতে হামাসকে ক্ষমতা থেকে সরানোর কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। উইটকফ আরো বলেন, দ্বিতীয় ধাপে ১৯ জন আইডিএফ (ইসরাইলি প্রতিরক্ষাবাহিনী) সেনাকে মুক্তি দেয়া হবে এবং তারা সবাই জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ইসরাইলি সূত্র বলছে, হামাসের হাতে ১০ জনের কম সেনা জীবিত রয়েছে এবং বাকি যাদের কথা বলা হচ্ছে তারা বেসামরিক নাগরিক।
বন্দিবিনিময়ে বাধা নেতানিয়াহু : এ দিকে ইসরাইলি গণমাধ্যম ইয়ানেটকে দেয়া এক বিবৃতিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তা দাবি করেছেন যে, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য বন্দীদের জীবন নিয়ে খেলছে নেতানিয়াহুর প্রশাসন। প্রতিবার মনে হয় এর চেয়ে নিচে নামা সম্ভব নয়; কিন্তু তারপর দেখা যায়, আরো নিচে নামার পথ এখনো বাকি রয়েছে। ওই কর্মকর্তা আরো জানান, চুক্তি অনুযায়ী ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু নেতানিয়াহুর পক্ষ থেকে কোনো আলোচনা শুরু করা হয়নি, যা চুক্তির শর্ত ভঙ্গের শামিল।
তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি ইসরাইল এখনই দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করেও, তাতেও ২ মার্চের মধ্যে চুক্তি চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে না, কারণ সময় অত্যন্ত কম। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, দুই পক্ষ যদি আন্তরিকতার সাথে আলোচনায় থাকে, তাহলে প্রথম ধাপ অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে। তবে নেতানিয়াহুর দল আলোচনার কোনো ইঙ্গিতই দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, নেতানিয়াহু ও তার সমর্থকরা রাজনীতির ফাঁদে আটকা পড়েছেন। তারা বাস্তব পরিস্থিতি বা আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার দিকে কোনো নজর দিচ্ছেন না। তাই তিনি নিশ্চিত করতে চাইছেন, দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে কোনো আলোচনা হচ্ছে না। তবে তিনি হামাসকেও দোষারোপ করছেন না, কারণ তাতে প্রমাণ হয়ে যাবে, ইসরাইল আসলেই আলোচনা চায়। নেতানিয়াহুর এই অবস্থানের কারণে বন্দিবিনিময় চুক্তির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গাজার কর্তৃত্ব : অন্য দিকে হামাস জানিয়েছে, তারা গাজা উপত্যকার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত। গত রোববার রাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে স্কাই নিউজ আরবি এই দাবি করেছে। এ দিকে মিসর জানিয়েছে, তারা গাজাবাসীকে নিজ ভূখণ্ডে রেখেই অঞ্চলটির পুনর্গঠনের পরিকল্পনা প্রস্তুত করছে। স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তাদের বিদ্যমান সরকারি কর্মচারীদের হয় নতুন প্রশাসনে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে, না হয় তারা অবসর নেবেন। তবে অবসরগ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের বেতন পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা