৯ মাসে ২১ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়মিতকরণ
- আশরাফুল ইসলাম
- ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৩
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে ঋণ নবায়নের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ ক্ষেত্রে ছিল বেপরোয়া। খেলাপি ঋণ আড়াল করতে শেষ সময়ে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলো নবায়ন করে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যাংক খাতে ২০২৪-এর জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। একই সময়ে পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ ছিল ২ লাখ ৭২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। অবলোপন করা ঋণের স্থিতি ছিল ৭৫ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা, স্পেশাল মেনশন হিসেবে ছিল ৩৯ হাজার ২০৯ কোটি টাকা, আদালতের স্থগিতাদেশে খেলাপিমুক্ত ছিল ৭৬ হাজার ১৮৫ কোটি টাকার ঋণ। ফলে জুন মাস শেষে মোট দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ ছিল ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৩০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা বা ৯ শতাংশ। ফলে খেলাপি ঋণ ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে।
শ্বেতপত্র হস্তান্তর অনুষ্ঠানে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা দেশের আর্থিক খাতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। সামনে খেলাপি ঋণ ২৫-৩০ শতাংশে পৌঁছে যাবে, এখন যা সাড়ে ১২ শতাংশ। আগামী মাসে তা ১৫ শতাংশ, এরপর ১৭ শতাংশ হয়ে ধীরে ধীরে ৩০ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে। খেলাপি আগেই হয়ে আছে, এখন তা হিসেবে আসবে। এটা কমিয়ে আনতে আমরা কাজ শুরু করেছি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২৪ সালে তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ব্যাংক খাতে ২০ হাজার ৭৩২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চে) পুনঃতফসিল করা হয় দুই হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা, দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ১০ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা এবং তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৭ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে নিয়মিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের প্রধান দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয় ৮ আগস্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে ১৪ আগস্ট ড. আহসান এইচ মনসুরকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু প্রথম এক মাস তেমন কোনো কাজ হয়নি। আগের নিয়েমেই ব্যাংকের সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। ব্যাংকের অনিয়ম বন্ধ হতে শুরু করে ইসলামী ব্যাংকগুলোর বোর্ড পুনর্গঠনের পর থেকে।
আলোচিত সময় ব্যাংকগুলোতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে এক হাজার ৯২২ কোটি টাকা বেশি খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এ আগে ২০২৩ সালে তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ব্যাংক খাতে ১৮ হাজার ৮১০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে ২০২৪ সালে জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে ১৬৫০ কোটি টাকা, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ১৭ হাজার ৯৬৩ টাকা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের ১১২০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে নিয়মিত করা হয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম, রাজনৈতিক প্রভাব ও পরিচালনা পর্ষদের সাথে আঁতাত করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করছে না গ্রাহক। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় নানা সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় ব্যাংকের টাকা নিজের মনে করে রেখে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে লাগামহীন বাড়ছে মন্দ বা খেলাপি ঋণ। আদায়ে কঠোর না হওয়ায় নীতি সহায়তার সুযোগে ঋণ নিয়মিত দেখানোর পথ পেয়ে যাচ্ছেন খেলাপিরা। অন্য দিকে কাগজে-কলমে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভালো দেখাতে পুনঃতফসিলে পথ বেছে নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এসব কারণে খেলাপির সাথে ঋণ পুনঃতফসিলের পরিমাণ বাড়ছে। সুবিধা পাওয়া এসব ঋণের অর্থ আগামীতে ফেরত পাবে কি না এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
ব্যাংকাররা জানান, আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার ক্ষমতা ছিল। তখন ব্যাংকগুলো তাদের পর্ষদে পুনঃতফসিলের প্রস্তাব পাস করে তা অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাত। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা তা যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিত- পুনঃতফসিল করা হবে কি না। ২০২২ সালের জুলাই মাসে পুনঃতফসিলের ক্ষমতা ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পর থেকে ব্যাংকগুলো নিজেদের ইচ্ছে মতো খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা