২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২০ শাবান ১৪৪৬
`

যদি বন্ধুত্ব করতে চান, আগে তিস্তার পানি দেন : ভারতকে মির্জা ফখরুল

লালমণিরহাটে তিস্তাপাড়ে অবস্থান কর্মসূচি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -


বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভারতকে পরিষ্কার করে বলতে চাই- আগেও বলেছি, এখনো বলছি। বাংলাদেশের মানুষের সাথে যদি বন্ধুত্ব করতে চান, আগে তিস্তার পানি দেন। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করেন।
আমাদের সাথে বড় দাদা আর মাস্তানমুখী আচারণ বন্ধ করেন। আমরা আমাদের পায়ের ওপরে দাঁড়াতে চাই। আমরা আমাদের হিস্যা বুঝে নিতে চাই। আমরা অবশ্যই ভারতকে একটা বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই, সে বন্ধুত্ব হবে সম্মানের সাথে আমার যে পাওনা আছে সে পাওয়া বুঝে দেয়ার সাথে।
গতকাল বিকেলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা রেলসেতু এলাকায় ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, শুধু তিস্তা নয়; ৫৪টি নদী আছে যেগুলো ভারত থেকে আমাদের দেশে আসে। সবগুলো নদী উজানে তারা বাঁধ দিয়েছে। বাঁধ দিয়ে পানি তুলে নিয়ে যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আর আমাদের দেশের মানুষ এখানে ধান ফলাতে পারে না, ফসল ফলাতে পারে না। এখানকার মানুষ জীবন জীবিকা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়েছে। আমাদের জেলে যারা মাছ ধরেন, তারা মাছ ধরতে পারেন না।

আওয়ামী লীগ ও ভারতের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রত্যেকটা মানুষ আজকে কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে। আমরা লড়াই করেছি ১৫ বছর। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে। আমাদের ছেলেরা লড়াই করেছে। সবার লড়াইয়ের মাধ্যমে পালিয়েছে, কোথায়? ওই ভারতে। এক দিকে পানি দেয় না, অন্য দিকে আমাদের যে শত্রু তাকে দিল্লিতে রাজারহালে বসিয়ে রাখছে। ওইখান থেকে আবার সে বিভিন্ন রকম হুকুম জারি করে।
উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ আছে নাকি এ্যালা। পালাইছে। বন্ধুগণ আজকের এই সংগ্রাম বাঁচা মরার সংগ্রাম, এই এলাকার মানুষের সংগ্রাম। এই সংগ্রামকে আমরা কখনো বন্ধ হতে দেবো না।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কথায় কথায় আপনারা বলেন নিরপেক্ষ। নিরপেক্ষ কিন্তু এই জায়গায় থাকলে চলবে না। এই জায়গায় আপনাকে মুখ খুলতে হবে। ভারতকে বলতে হবে- যে আমার পানির ন্যায্য হিস্যা আমি চাই। আর আপনি যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাড়াতাড়ি নির্বাচনটা দিন। জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেন।

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবীব দুলুর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী দিনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান দুদু। অন্যান্যের মধ্যে একই মঞ্চে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টির (কাজি জাফর) চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবি নাজনীন, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক ও নদীপাড়ের ভুক্তভোগী নুর বকস।
সমাবেশের বিভিন্ন পয়েন্টে পৃথক পৃথকভাবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এবং গণসংহতি আন্দোলন প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।

তিস্তা নদীর দুই পাড়ের ৫টি জেলার ১১টি পয়েন্টে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার ১১টি পয়েন্টে করা হয়েছে মঞ্চ ও থাকার ব্যবস্থা। তিস্তাপাড়ের মানুষ তাদের দাবি আদায় করতে টানা ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। শিশু বৃদ্ধ নারী পুরুষ সবাই দলে দলে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই স্লোগানে মুখোর হয়ে উঠে তিস্তা নদীর ১২৫ কিলোমিটারের দুই তীর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামলে প্রতিটি পয়েন্ট কানায় কানায় ভড়ে উঠে।
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, তিস্তা চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে সোমবার দুপুর ২ থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। নীলফামারী জেলার ৬ উপজেলা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। এর আগে সকাল থেকে বাস, ট্রাক, মাইক্রো, অটোরিকশা মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে লোকজন জড়ো হয় কর্মসূচি স্থলে।
রাতে অবস্থানের জন্য নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টের পশ্চিম দিকে স্থাপন করা হয়েছে শতাধিক তাঁবু। ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো তিস্তা ব্যারেজ এলাকা। তৈরি করা হয়েছে বিশাল আকারের মঞ্চ। বিকেল ৩টার পর থেকে মঞ্চে বক্তব্য রাখছেন বিএনপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি চলছে গান ও কবিতা আবৃতি।

নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে : সেলিমা রহমান
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। একজন বলছে সংস্কার, একজন বলছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, একদল বলছে নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্য কোনো নির্বাচন বিএনপি হতে দিবে না। সোমবার সন্ধ্যায় মাদারীপুর শহরের লেকেরপাড়ের স্বাধীনতা অঙ্গনে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সেলিমা রহমান আরো বলেন, জাতীয় নির্বাচন হলে বর্তমানে দেশের যে এলোমেলো ভাব, সেটা পরিবর্তন হয়ে সুশাসন আসবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা হবে, জবাবদিহিতা হবে। দেশের জনগণ আস্থা ফিরে পাবে।
মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাফর আলী মিয়ার সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব জাহান্দার আলী জাহানের সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খোন্দকার মাশুকুর রহমান, সহ-শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, সদস্য কাজী হুমায়ুন কবিরসহ অনেকেই।

সুন্দরগঞ্জে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে ইনশা আল্লাহ। তখন তারুণ্যের অহঙ্কার তারেক রহমানের নেতৃত্বে তিস্তাপাড়ের মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিকেলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টে আয়োজিত জনতার সমাবেশে বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের আয়োজনে এ সভায় সংগঠনের নেতারা ও স্থানীয় জনগণ উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন গাইবান্ধা জেলা সমন্বয়কারী ও জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডা: মইনুল হাসান সাদিক।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল আহমেদ ও সদস্যসচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিকের যৌথ সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টিটুল, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা: খন্দকার জিয়াউল ইসলাম জিয়া, সুন্দরগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া নিপনসহ অন্যান্য নেতা। বক্তারা বলেন, ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কোনো একক সংগঠনের নয়, এটি সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই।’


আরো সংবাদ



premium cement
মুন্সীগঞ্জে আবারো ৪ কঙ্কাল চুরি গ্রিনল্যান্ড অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা উচিত : ট্রাম্প তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার : প্রধান উপদেষ্টা ইসরাইলের লাগাতার হামলার কারণে তোমাদের সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি সাভারে গোডাউনে আগুন, আড়াই ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে নারায়ণগঞ্জে এনজিও কর্মকর্তা হত্যায় যুবকের যাবজ্জীবন আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি : হাসনাত আবদুল্লাহ অপারেশন ডেভিল হান্টে আরো ৪৯২ জন গ্রেফতার দোহার উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি গঠন একুশে ফেব্রুয়ারি জাতীয় জীবনের অবিস্মরণীয় অধ্যায় : তারেক রহমান ডিএমটিসিএলের নতুন এমডি ফারুক আহমেদ

সকল