জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব আগামী মাসে ঢাকা আসছেন
- কূটনৈতিক প্রতিবেদক
- ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫২
জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্থ’নিও গুতেরেজ আগামী মাসে ঢাকা আসছেন। তার সফরের প্রস্তুতি হিসেবে চলতি মাসেই মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত জুলি বিশপ এবং জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপো গ্রান্ডি বাংলাদেশ সফর করবেন। এসব সফরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা, শরণার্থীদের জন্য ক্রমাগত কমতে থাকা তহবিল এবং প্রত্যাবাসনের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।
মহাসচিবের ঢাকা সফরে রোহিঙ্গা সঙ্কট ছাড়াও জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের অবদান, সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়া এবং পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনসহ বিস্তৃত ইস্যুতে আলোচনা হবে। তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন। সফরকালে মহাসচিবের কক্সবাজার যাওয়ার কথা রয়েছে। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের সফরকে সফল করতে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন জুলি বিশপ। তিনি সরকারের উপদেষ্টা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিদেশী কূটনীতিক ও জাতিসঙ্ঘের আবাসিক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসবেন ইউএনএইচসিআর প্রধান ফিলিপো গ্রান্ডি। তিনিও সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনার পাশাপাশি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাবেন। অ্যান্থ’নিও গুতেরেজের সফরের আগ পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘের আরো কয়েকটি প্রতিনিধিদল ঢাকা আসতে পারে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পর রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনের ওপর বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন। গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনে রাখা বক্তব্যে তিনি ইস্যুটি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরে তা সুরাহায় সহযোগিতা চেয়েছেন। অধিবেশন চলাকালে মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত জুলি বিশপ এবং ইউএনএইচসিআর প্রধান ফিলিপো গ্রান্ডি প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করেন। এ ছাড়া ড. ইউনূসও জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেজের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি রোহিঙ্গাবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনে জাতিসঙ্ঘের সহায়তা চান। চলতি বছরের মাঝামাঝি এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
বিশিষ্ট কূটনীতিক এবং অর্থনীতিবিদ ড. খলিলুর রহমানকে রোহিঙ্গা সমস্যা এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলির জন্য প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ড. খলিলুর রহমান ইতোমধ্যে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের সাথে সাক্ষাৎ করে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনের উপায় খুঁজে বের করতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
সম্প্রতি রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত একটি সেমিনারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের একটিই সমাধান, আর সেটি হচ্ছে প্রত্যাবাসন। তবে প্রত্যাবাসনটি হতে হবে রোহিঙ্গারা যেখান থেকে বিতাড়িত হয়েছে, সেই স্থানে, অধিকার ও নিরাপত্তাসহ। অন্য স্থানে তাদের পুনর্বাসন করলে তা টেকসই হবে না। আর এ সঙ্কটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা প্রয়োজন। তাদের নিশ্চিত করতে হবে রোহিঙ্গাদের ওপর যাতে একই ধরনের নৃশংসতা আর যাতে কখনোই না ঘটে।
মানবিক সহায়তা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গা সঙ্কট বাংলাদেশের ওপর আরো বোঝা হয়ে দাঁড়াবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বের অনেকেই একে অন্যের দেখাদেখি সহায়তা কমিয়ে আনছে। যুক্তরাষ্ট্র বৈদেশিক সহায়তা কমানোর নতুন যে অবস্থান নিয়েছে, তা পরিস্থিতি আরো কঠিন করে তুলতে পারে। আশা করি, রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থসহায়তা যুক্তরাষ্ট্র বন্ধ করবে না। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। এটি এ মহূর্তে হয়তো বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে রয়েছে। তবে ইস্যুটিতে এখনই মনোযোগ না দিলে এটি শুধু বাংলাদেশের সঙ্কট থাকবে না, আঞ্চলিক সমস্যায় রূপ নেবে।
একটি শান্তিপূর্ণ মিয়ানমার যেমন বাংলাদেশের প্রয়োজন, তেমনি চীনেরও প্রয়োজন মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, চীন শুরু থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে তাদের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে আসছে। এটি তাদের তাত্ত্বিক অবস্থান; কিন্তু বাস্তবিক অর্থে চীনের খুব বেশি পদক্ষেপ দেখিনি। মিয়ানমারে চীনের গভীর স্বার্থ রয়েছে। তিনি বলেন, মিয়ানমার বলতে বাংলাদেশ রাখাইন বোঝে। কারণ মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমান্তের বেশির ভাগ জুড়েই রয়েছে রাখাইন। এখন রাখাইনের বেশির ভাগ অঞ্চল আরাকান আর্মির দখলে। চীনের সাথে মিয়ানমার সরকারসহ বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ চীনকে আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে অনুরোধ করেছে। সম্প্রতি আমার চীন সফরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন যে, তারা সঙ্কট সমাধানে চেষ্টা করবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা